এবারের আলোচ্য এমন সব উপসর্গসমূহকে নিয়ে, যেগুলির প্রধান উপসর্গ হল বেশি মাত্রায় ক্লান্তি। ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার রোগী-শিক্ষামূলক উপাদান অবলম্বনে লিখছেন ডা পুণ্যব্রত গুণ।
Disease-এর বাংলা রোগ আর Syndrome-এর বাংলা প্রতিশব্দ হল উপসর্গসমূহ। রোগী যে সব সমস্যা বা কষ্টের কথা বলেন সেগুলো হল Symptoms বা উপসর্গ। ডাক্তার রোগীকে পরীক্ষা করে যা যা পান, সেগুলোকে বলা হয় Signs বা লক্ষণ।
ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোম (সংক্ষেপে CFS বা সিএফএস) এক ধরনের দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা যাতে অনেক ধরনের উপসর্গ থাকতে পারে, তবে সবার ক্ষেত্রে যে উপসর্গটা থাকবেই তা হল বেশি মাত্রায় ক্লান্তি। সিএফএস-কে ME বা মায়েলজিক এনকেফালোমায়েলাইটিসও বলে অনেকে।
ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোমে শিশুসহ যে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। তবে মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। আর মধ্য-২০ থেকে মধ্য-৪০ অবধি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোমের উপসর্গগুলো
প্রধান উপসর্গ হল খুব ক্লান্ত লাগা আর অসুস্থ লাগা। এছাড়া অন্য উপসর্গও থাকতে পারেঃ
- ঘুমের সমস্যা
- মাংসপেশি বা হাড়ের জোড়ের ব্যথা
- মাথাব্যথা
- গলাব্যথা বা গ্ল্যান্ডে ব্যথা, অথচ গ্ল্যান্ড ফোলা নয়
- চিন্তা করতে, মনে রাখতে, কাজে মন দিতে সমস্যা
- ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ
- মাথা ঝিমঝিম করা বা অসুস্থ লাগা
- বুক ধড়ফড়ানি
অনেকেরই পরিশ্রম করলে উপসর্গ বাড়ে।
সবসময় উপসর্গের তীব্রতা একরকম থাকে না। আজ যেমন আছে কাল তার চেয়ে কম বা বেশি, দিনের বিভিন্ন সময়ে তীব্রতা আলাদা আলাদা।
যে উপসর্গগুলোর কথা বললাম সেগুলো অন্যান্য কিছু রোগে হয়, তাই সঠিক রোগনির্ণয়ের জন্য ডাক্তার দেখানো দরকার।
ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোম নির্ণয় কিভাবে?
এমন কোনও পরীক্ষা নেই যা দিয়ে ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোম নির্ণয় করা যায়। তাই রোগীর উপসর্গগুলো জানা হয় আর অন্য যে যে রোগে এই উপসর্গ হতে পারে সেগুলো হয়েছে কিনা দেখা হয়। অন্য রোগগুলোকে বাদ দেওয়ার জন্য রক্ত বা প্রস্রাব পরীক্ষা করতে হতে পারে।
ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোমের উপসর্গগুলো এমন অনেক রোগে হতে পারে যেগুলো আপনা থেকেই সারে। যদি যতো তাড়াতাড়ি সেই উপসর্গগুলো না কমে তখন ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোমের কথা ভাবা হয়।
ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোমের চিকিৎসা
ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোমের চিকিৎসার লক্ষ্য হল উপসর্গগুলোকে কমানো। কিভাবে রোগী কষ্ট পাচ্ছেন তার ওপর চিকিৎসা নির্ভর করে।
যে সব চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে তার মধ্যে আছেঃ
- কগনিটিভ বিহেবিওরাল থেরাপি
- গ্রেডেড এক্সারসাইজ থেরাপি
- ব্যথা, বমি ভাব ও ঘুমের সমস্যা কমানোর জন্য ওষুধ।
বেশির ভাগ রোগী সময়ের সাথে ভালো হয়ে যান। কিছুজন পুরোপুরি সারেন না।
মাঝে মাঝে উপসর্গ বাড়ে কমে।
শিশু আর কম বয়সীদের পুরোপুরি সেরে ওঠার সম্ভাবনা বেশি।
ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোমের কারণ
কেন ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোম হয়, এখনও জানা নেই। কয়েকটা তত্ত্ব আছে—কোথাও বলা হয় জীবাণুসংক্রমণ থেকে ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোম শুরু হতে পারে, কোথাও বলা হয় কয়েকটা কারণ ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোমের উত্তেজকের ভূমিকা পালন করেঃ—
- ভাইরাস সংক্রমণ
- ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ, যেমন—নিউমোনিয়া
- শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সমস্যা
- হরমোনের ভারসাম্যের অভাব
- মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা, যেমন—চাপ এবং আবেগজনিত আঘাত
- বংশগতি।
ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোম নিয়ে বেঁচে থাকা
ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোম নিয়ে বেঁচে থাকা খুব কষ্টকর হতে পারে। অতীব ক্লান্তি ও অন্যান্য উপসর্গের জন্য দৈনন্দিন কাজকর্ম করা দুরূহ হতে পারে। কখনও কখনও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হয়।
ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোম মানসিক স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করতে পারে, আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিতে পারে
পরিবার ও বন্ধুদের সাহায্য লাগে বেঁচে থাকতে। ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোম নিয়ে আর যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বললে উপকার পাওয়া যে্তে পারে।