আবার কোভিডের হাজারের কাছাকাছি চলে আসা, আর টি পি সি আর ল্যাব গুলোর পার্সেন্টেজ অফ পজিটিভিটি বেড়ে যাওয়া এবং উৎকণ্ঠা ভরা ফোন কল, আর ভাল লাগে না বিশ্বাস করুন।
এই ভ্যাক্সিনেশনের সার্টিফিকেট নিয়ে ধেই ধেই করে নাচতে বেরিয়ে গেলাম, আমি এবং আমার পরিবারের লোক যে একদম যে সুরক্ষিত সেরকম কিন্তু নয় ল্যানসেটের এই স্টাডিটা সেটাই প্রমাণ করে।
ভ্যাকসিন নিয়ে আমাদের ইনফেকশন হতেও পারে, সেটা মাঝারি মাত্রার হতে পারে, বেশি মাত্রায় হতে পারে আবার ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষ সংক্রমণও করতে পারে। কিন্তু হ্যাঁ, এই আর্টিফিশিয়াল ইমিউনিটি কিংবা ন্যাচারাল ইমিউনিটি যে কোন ধরনের ইমিউনিটি ,আপনার কোভিড কম্প্লিকেশনের চান্স অনেকটাই কমিয়ে দেবে।
আসুন দেখে নেওয়া যাক বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা এখন কোথায় কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি-
কোভিডের সংক্রমণ এখন কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে?
আইসিএমআর এর সেরোপজিটিভিটি স্টাডি আর 100 কোটি মানুষের ভ্যাকসিনের পর এটুকু অন্তত বলা যেতে পারে আমরা একটা হার্ড ইমিউনিটিতে মোটামুটি পৌঁছে গেছি। এখন আমাদের একটা সেকশন অফ পপুলেশনের কিন্তু কনস্ট্যান্ট পার্সেন্টেজ অফ পজিটিভিটি কোভিড কেস দেখা যাচ্ছে, আমরা এখন কোভিড এনডেমিক স্টেটে পৌঁছে গেছি।
এই অবস্থায় কি কোভিডের থার্ড ওয়েব কি আসতে পারে?
আমার নিজের ব্যক্তিগত মতামত আর হয়তো ওয়েভ আসবে না। ওয়েভের অর্থ সংক্রমণের ঢেউ, ঢেউ যেটা সেকেন্ড ওয়েভে দেখেছিলাম, ফলে থার্ড ওয়েভ আসার সম্ভাবনা অনেকাংশই কম, যেখানে পুরো পপুলেশনে একটা হার্ড ইমিউনিটি জায়গায় পৌঁছে গেছে কিন্তু অনেক স্পাইক হতে পারে ।
*কোভিড স্পাইক কি?*
কারণ কোভিড হচ্ছে এক ধরনের আরএনএ ভাইরাস আর এই আরএনএ ভাইরাস হচ্ছে মিউটেশন প্রবণতা অনেক বেশি, তাই যতবার কোন সিগনিফিকেন্ট মিউটেশন হবে যাকে আমরা জেনেটিক ড্রিফট বলি তাই ততবার একটা করে আমরা স্পাইক পাব ।যেমন ইনফুয়েঞ্জা এক দু বছর ছাড়া ছাড়া আমরা স্পাইক দেখতে পাই ।
*এই এনডেমিক স্টেটে কোভিডের কি ভিরুলেন্স কতখানি থাকতে পারে?*
এখন আমরা ধরেই নিচ্ছি প্রত্যেকের হয় আর্টিফিশিয়াল ইমিউনিটি মানে ভ্যাকসিনেশন কিংবা ন্যাচারাল ইমিউনিটি মাধ্যমে কোভিডের মেমোরি সেল তৈরি হয়ে আছে। এখন লাখ টাকা প্রশ্ন হচ্ছে এই প্লাজমা বি সেল বা মেমোরি সেল পর্যাপ্ত ইমিউন রেসপন্স তৈরি করতে পারছে কিনা সেটা দেখার। এখন একটা সেকশন অফ পপুলেশন যারা পজিটিভ হয়ে ভর্তি হচ্ছে তাদের মাঝারি থেকে বেশি মাত্রায় ইনফেকশন হচ্ছে তাদের কিন্তু এই পর্যাপ্ত ইমিয়ুন রেসপন্স হচ্ছে না।
*এখন যাদেরই পর্যাপ্ত ইমিউন রেসপন্স হচ্ছেনা, এই পপুলেশন টা করা?*
এরা যারা মধ্যে কমর্বিড কন্ডিশন রয়েছে, যেমন long-standing ডায়াবেটিস , মডারেট টু সিভিয়ার ওবেসিটি, হাইপার টেনশন, মেটাবলিক সিনড্রোম মূলত সেই সমস্ত রোগ যেইগুলো পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে কে ডিফেক্ট করে অ্যান্টিবডি নিঃসরণ করতে বাধা দেয় ,যাদের কার্যকরী বে সেল এর থেকে ডিস্ফাংশনাল বি সেল অনেক বেশি।
*কি করে ফাংশানাল বি সেল সংখ্যা আমরা বাড়াবো বা ইমিউনিটি কে আরো স্ট্রং করব?*
যাদের অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড সুগার ,কোলেস্টেরল ,হাইপার টেনশন ,ওবেসিটি রয়েছে , এই সমস্ত রোগগুলি কে নিয়ন্ত্রণ রাখা। পরিমিত খাদ্যাভাস (ব্যালেন্স ডায়েট), রিফাইন সুগার বর্জন করা এবং নিয়মিত শরীরচর্চা।
গ্যালন গ্যালন সকালবেলা উঠে কোন আয়ুর্বেদিক পানীয় কিংবা মাল্টিভিটামিন ইমিউন সিস্টেমকে কিন্তু শক্তিশালী করে না।
*কোভিড এর থেকে বাঁচার পদ্ধতি গুলো কি ?*
কিন্তু এখন কোন কোন ডকুমেন্ট এর কোন চিকিৎসা বেরোয়নি, আমাদের প্রাইমোরডিয়াল এবং প্রাইমারি প্রিভেনশন এর উপরে জোর দিয়ে রাখতে হবে:
*প্রাইমোরডিয়াল প্রিভেনশন*- আপনার ইমিউন সিস্টেমকে স্ট্রং করা যেটা করবেন আপনার কোমোর্বিড কন্ডিশন গুলো কে নিয়ন্ত্রিত করে এবং পরিমিত খাদ্যাভাস ( রিফাইন সুগার কে বর্জন করা) এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করে।
*প্রাইমারি প্রিভেনশন* –
মাক্স টাকে পকেটে নিয়ে নিয়ে ঘুরলে চলবে না এটা আপনার মানিব্যাগ নয় কিংবা থুতনির নিচে পড়ে আমরা আড্ডায় যদি ব্যস্ত হয়ে পড়ি ,সেই অভ্যাস থেকে বিরত হতে হবে। দূরত্ব বজায় রাখাটা হয়তো আমরা সব সময় পারবো না কিন্তু এই মাক্স পড়া এবং ফ্রিকুয়ে্টলি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, কাছের মানুষ গুলো র মুখ চেয়ে ,এইটা তো অন্তত করতেই পারি তাই না।
কারণ আপনি অচিরেই যখন কোভিড বাইরে থেকে ঘরে বয়ে নিয়ে আসবেন আপনার কাছের মানুষগুলোর কাছে তাদের কিছু খারাপ হোক তার কারণ আপনিই হন ,সেটা নিশচয়ই চাইবেন না।।
এতক্ষন সহ্য করার জন্য ধন্যবাদ,
ইতি ,
*ডঃ অর্পিত কুমার সাহা*
( ইনফেকশাস ডিসিস স্পেশালিস্ট)