এবার সরাসরি আসা যাক ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়েট চার্টে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য শর্করা জাতীয় খাবার ক্ষতিকারক, কারণ এটি রক্তে গ্লকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই শর্করা জাতীয় খাবার কম খেতে হবে।
কিছু শর্করা জাতীয় খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি। এরা দ্রুত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়। যেমন, চিনি, মিষ্টি, ভাত, আলু। এগুলি বর্জন করতে হবে বা কম পরিমাণে খেতে হবে। অন্যদিকে লাল চালের ভাত, আটার রুটি, সবজি, বাদাম, ছোলা ও কলাই জাতীয় খাদ্য রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ায়। তাই এই খাবার গুলি বেশি খাওয়া উচিৎ। তবে খাওয়ার সময় ক্যালোরির হিসাব রাখা উচিৎ।
ডায়াবেটিস রোগীদের মোট ক্যালোরির ২০% আসবে আমিষ থেকে, ৩০% আসবে ফ্যাট থেকে এবং ৫০% আসবে শর্করা থেকে।
নীচে একটি ডায়েট চার্ট দেওয়া হলোঃ
সকালের খাবারঃ (সকাল ৮টা)
১টি গমের আটার রুটি
১ গ্লাস ফ্যাট ছাড়া দুধ।
১ টি ডিম।
১ কাপ পাতা যুক্ত শাক বা অর্ধেক কাপ সবজি।
দুপুরের খাবারঃ (দুপুর ২টো)
দেড় কাপ ভাত
৬০ গ্রাম মাছ বা মুরগীর মাংস।
১ কাপ পাতা যুক্ত শাক
দেড় কাপ সবজি।
১ কাপ ডাল।
বিকেলের খাবারঃ (সন্ধ্যা ৬টা)
১ টি ফল।(পেয়ারা, শসা, আপেল লেবু ইত্যাদি)
১/৪ কাপ বাদাম, ছোলা এবং কলাই জাতীয় খাদ্য।
রাতের খাবার(রাত সাড়ে নটা)
১টি রুটি অথবা অর্ধেক কাপ ভাত।
৬০ গ্রাম মাছ বা মুরগীর মাংস।
১ কাপ পাতা যুক্ত শাক
অর্ধেক কাপ সবজি।
১ টি ফল।(পেয়ারা, শসা, আপেল লেবু ইত্যাদি)।
কোন খবার খাবেন এবং কোন গুলি খাবেন না?
অধিক চিনি যুক্ত খাবার, বেশি তেলে ভাজা পোড়া খাবার, মিষ্টি পানীয়, ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাবার, প্রানিজ ফ্যাট, রিফাইন্ড করা বা চকচকে সাদা ময়দার তৈরি খাবার, মধু বা সিরাপ জাতীয় খাবার, মিষ্টি জাতীয় শুকনো ফল এবং প্রক্রিয়া জাত করা স্নাক ফুড কখনই খাবেন না।
ডায়াবেটিক রোগীদের ফাইবার বহুল খাবার যেমন ডাল, শাক, সবজি, ঢেঁকি ছাঁটা চাল, গমের আটার রুটি, টকফল বেশি খেতে হবে। এই জাতীয় খাদ্য রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরে ক্ষতিকর লিপিড এবং কলেস্টোরেলের মাত্রাও কমিয়ে দেয়।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ ফল হলো শসা। রসালো ফল যেমন, আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, আঙ্গুর, তরমুজ, পেঁপে, আনারস এসব ফল সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিৎ কারণ এতে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে। টক ফলে শর্করা কম থাকে। ডায়াবেটিক রোগীর উপকারী ফলের তালিকায় থাকবে লেবু, আমলকী, সবুজ আপেল, বাতাবি লেবু। এ তালিকার নিচে থাকবে কলা, আম, কাঁঠাল ইত্যাদি। অপকারীর তালিকার দুটি ফল হল কামরাঙা ও আঙ্গুর।
প্রাণীজ চর্বির পরিমাণ কমিয়ে উদ্ভিজ চর্বির পরিমাণ বাড়ানো উচিত। সম্পৃক্ত চর্বি যেমন- ঘি, মাখন, চর্বি ডালডা, চর্বিযুক্ত মাংস ইত্যাদি কম খেতে হবে। এর পরিবর্তে অসম্পৃক্ত চর্বি যেমন- উদ্ভিজ তেল অর্থাৎ সয়াবিন তেল, সরিষার তেল এবং মাছ খেতে হবে। ডিমের হলুদ অংশে কলেস্টোরেল বেশি থাকে, তা কম খাওয়া উচিত।
আচ্ছা, ডায়াবিটিস রুগী দের কি মুড়ি খাওয়া চলে? চললে তার পরিমান কতটা হবে ?
মুড়ির গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স ভাতের সমান। মুড়ি খেলে অল্প পরিমানে খেতে হবে। এবং সেদিন ভাত আরও কম খেতে হবে। মুড়ির সাথে চানাচুর খাওয়া উচিৎ নয়। শশা, ছোলা ভেজান, টমেটো, পেয়াজ দিয়ে মেখে খাওয়া যেতে পারে।