থাইরয়েড একটা প্রজাপতি আকৃতির গ্রন্থি। গ্রন্থি কথাটা আমার পছন্দ নয় বরং গ্ল্যান্ড বলাই ভালো। এটা গলার সামনে মাঝামাঝি থেকে একটু নিচে থাকে। দেহ অংশ থাকে কন্ঠনালীর ওপর আর দু’পাশে দু’টো ডানার মতো অংশ ছড়ানো থাকে। এর কাজ হল রক্ত থেকে আয়োডিন গ্রহণ করে থাইরয়েড হরমোন বা থাইরক্সিন তৈরি করা।
তার পর এই হরমোন রক্তের সঙ্গে মিশে সারা শরীর জুড়ে কাজ করে। বড্ড দরকারি এই হরমোন। হৃদস্পন্দনের মাত্রা (হার্ট রেট) কত হবে সেটা ঠিক করে। শরীরের উত্তাপ কতটা থাকবে সেটাও এই হরমোন ঠিক করে। এমনকি শরীরে ঘন এক ধরনের তরল জমবে কতটা, সেটা থাইরয়েড গ্ল্যান্ড নির্দেশ করে। শ্বাসপ্রশ্বাস কতটা দ্রুত চলবে – এমনকি মানুষ কতটা ঘুমোবে বা জেগে থাকবে – বলতে গেলে একজন মিউজিক ডিরেক্টরের মতো গোটা শরীরের চলার ছন্দটা বেঁধে রাখে এই হরমোন। অর্থাৎ ভারী গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমিকা পালন করে।
কিন্তু এই হরমোনেরও একজন অভিভাবক আছে। সে হল পিটুইটারি। সে সব সময় উদ্দীপনা (শব্দটা জটিল হয়ে গেল বরং স্টিমুলেশন বলি) পাঠায়। স্টিমুলেশন মানে থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন। যদি থাইরয়েড অলস হয়ে পড়ে মানে কাজ করতে না চায় তখন বেশি বেশি স্টিমুলেশন পাঠায়। সে ক্ষেত্রে থাইরয়েড উদ্দীপনা পেয়ে কোনো রকম করে কাজটা করতে থাকে। হে সুধি পাঠক, থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন বেড়ে যাওয়ার কিন্তু আরও ঢের কারণ আছে সুতরাং নিজের চিকিৎসা নিজে করবেন না।
ঠিক তেমনই দুষ্টু থাইরয়েড গ্ল্যান্ড অনেক সময় অনেক অনেক বেশি করে থাইরক্সিন হরমোন উৎপাদন করে। তখন আবার তার স্টিমুলেশন প্রয়োজন নেই। এটা অনেক সময় থাইরয়েড টিউমার বা ইনফ্লামেশন থাকলে হয়। তাই পিটুইটারি গ্ল্যােন্ড তখন থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন তৈরি করা বন্ধ করে দেয় বা ভীষণ কমিয়ে দেয়। সুতরাং থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন চিকিৎসকদের ওষুধের ডোজ ঠিক করতে সাহায্য করে।
সবার ওপরে আছে হাইপোথ্যােলামাস – ইনি আবার সব্বাইকার কাজকর্ম কন্ট্রোল করেন।
এ ছাড়াও পিটুইটারি টিউমার হলে থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন ক্ষরণ বেড়ে বা কমে যায়। একই ভাবে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যাংলামাস অঞ্চলে যদি কোনো রোগ থাকে তা হলে গোটা সিস্টেমটাই অকেজো হয়ে পড়বে।
থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে অসুবিধা হলে হঠাৎ করে ওজন বাড়তে বা কমতে পারে। বুক ধড়ফড় করতে পারে, হার্টে জলও জমতে পারে। অসম্ভব অস্থির হয়ে উঠতে পারেন। শরীর ফুলতে পারে। যৌন ক্ষমতা বা ইচ্ছা কমতে পারে, আবার মেয়েদের ঋতুচক্রে পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। ওঃহো বলতে ভুলেই গেছি, রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে।
অর্থাৎ শরীরে ছন্দ পতন ঘটে যেতে পারে। সুতরাং সাধু সাবধান, ‘স্বাস্থ্য সাবধান’ – নিয়মিত পরীক্ষা করান – চিকিৎসকের সাহায্য নিন। এবং কক্ষনোই নিজে নিজে ওষুধ বন্ধ করবেন না প্লিজ।
শেষ কথাটা বড্ড দরকারি। সুগার বা থাইরয়েড বা প্রেসারের ওষুধ নিজে থেকে কখনোই বন্ধ করবেন না। এতে বহু মানুষ নিজের জীবন বিপন্ন করে তোলেন।
Good post