আমি যে খালি নেটে নেটে ঘুরি, আমার পেটে পেটে দুর্বুদ্ধি, আর নেহাতই নর্দমা ঘেঁটে ঘেঁটে অনর্থক অপাচ্য দু এক ছত্র লিখি, এটাই আমার একমাত্র পরিচয় না। আমি একজন প্রাক্তন চিকিৎসক।
এই দেশে দুঃখের কথা এইটিই, যে প্রাক্তন খেলোয়াড়, প্রাক্তন পুলিশ, প্রাক্তন আইএএস, প্রাক্তন ব্যাঙ্ককর্মী ইত্যাদি সবই শুনবেন কিন্তু চিকিৎসক কখনও প্রাক্তন হয় না।
আমার দাঁত পড়ে গেছে, স্মৃতি নড়ে গেছে, ইচ্ছে মরে গেছে, প্রতিশ্রুত ভালোবাসা সরে গেছে দিগন্ত পেরিয়ে। চামড়া শিথিল শুধু না পঞ্চেন্দ্রিয়ও শিথিল ক্রমে ক্রমে। ডাক্তারি কবেই ভুলে গেছি। তবু চিকিৎসক অপবাদটি যেতে চায় না।
এহ বাহ্য, মূল কথায় ঢুকি। প্রিয়জন ভাবি যাকে, তেমন কেউ অসুস্থ হলে আমি আগ বাড়িয়ে তাঁর স্বাস্থ্যসন্ধানে যাই। সে কাশিতে রক্তপাত হোক, কিম্বা অঙ্গ অবশ, যাই হোক না কেন।
এই একটা গায়ে পড়া স্বভাব আমার রয়েছে বটে। তাঁর অসুখের উপযুক্ত ডাক্তারের কাছে দেখিয়ে নিতে বলি। কখনও সঙ্গেও যাই।
কিন্তু সেই অসুস্থ মানুষ যদি নিজের সর্বার্থে অসহায়তাটুকু জানিয়ে আমাকেই অবলম্বন করতে চান তা এড়িয়ে যাবার মত কুশল শিল্পী আমি নই।
পালমোনোলজিতে একটা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি ছিল যদিও, সেই বিশেষজ্ঞও ঠিকভাবে হতে পারিনি। তখনই। আর ইদানীং, আগেই বলেছি ডাক্তারি আমি প্রায় ভুলে গেছি। অনস্বীকার্য এই সব জেনেও তবু এক প্রাক্তন চিকিৎসক এই আমি জড়িয়ে পড়ি নিজের প্রিয়জনদের নিউরোলজি, কার্ডিওলজি, অঙ্কোলজি, নেফ্রোলজি এই রকম নানান ‘লজি’র আবর্তে।
অথচ এই সব বিষয়ের কোনওটিতেই বিশেষজ্ঞতা দূরের কথা কাজ চালানোর মত জ্ঞানও হয় তো প্রায় কিছুই আমার নেই। তবু কেউ আঁকড়ে ধরেন কখনও। হাত ছাড়াতে পারি না। হাত ছাড়তে চাইও না।
চিকিৎসা ব্যাপারটাই আমার কাছে ভারি গোলমেলে ঠেকে। শুরু থেকেই। দুই আর দুইয়ে যোগ করলে যে চার হবেই তার কোনও গ্যারান্টি নেই। যোগের পরে কখনও শূন্য বা নেগেটিভ। কখনও বা অপ্রত্যাশিত ভাবে যোগফল দশও পেয়ে গেছি পেশাজীবনে।
আমার প্রিয়জনের নেটতুতো শুভানুধ্যায়ী প্রচুর। যদি কপালদোষে দুইয়ে দুইয়ে চার না হয়, এঁরা কেউ আড়ালে অভিশম্পাত(পড়ুন খাপ-পঞ্চায়েত) তো দেবেনই, আইনগত ভালনারেবিলিটির কথাও হয় তো তুলবেন। শাসাবেন। ধমকাবেন। ভয় দেখাবেন। প্রকাশ্যে। ইনবক্সেও।
ব্যাকুল হবেন যে কেউ। হয় তো তাঁরও প্রিয়জন এই অসুস্থ মানুষটি। কাজেই তিনি অবশ্যই নিজের পছন্দের বিশেষজ্ঞকে দিয়ে দেখিয়ে নেবার ব্যবস্থা করতেই পারেন।
কিন্তু ভার্চুয়ালি নয়। টেলিমেডিসিনও নয়। সেই প্রিয়জনের মোটেই যাবার ক্ষমতা নেই। নেই মানে নেই। সর্ব অর্থেই নেই। কাজেই বাড়ি এসে দেখে যেতে হবে। সেই বিশেষজ্ঞের মত মেনেই চিকিৎসা হবে কিনা সেটা অবশ্য অসুস্থর আত্মজনের সিদ্ধান্ত।
এই মুহূর্তে চিকিৎসা চলছে স্থানীয় অত্যন্ত ভালো দরদী একজন স্থানীয় বিশেষজ্ঞের মত অনুযায়ী। কিন্তু সেই বিশেষজ্ঞ প্রচণ্ড ব্যস্ততার জন্য কারওর বাড়ি ইচ্ছে থাকলেও আসতে পারেন না। তাই আপাতত আমি সামাল দিচ্ছি। বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।
তবে বাৎসল্যের আর অন্য ভালোবাসবারও(দাস্য, সখ্য আদি) শাস্তি জীবনে কখনও পেয়েছি।
তাই আমার এক অতিপ্রিয় সন্তানপ্রতিমের পরামর্শক্রমে এই ডিসক্লেইমারখানি দিলাম।
পুনশ্চঃ-
কিন্তু কেন? আমার মত অতি তুচ্ছ অকিঞ্চিৎকর প্রাণী হঠাৎ এমন হ্যাজাচ্ছে কেন? বলি।
মাত্র বছরখানেক(সেকী? একবছর হয়ে গেল?) হল বহু দোষের আকর এই আমাকে নিয়ে ফেসবুকে খাপ পঞ্চায়েত বসেছিল।
কারণ?
ওই যে আগেই বলেছি না, আমার চরিত্রদোষের মানে গায়ে পড়া স্বভাবের কথা? ওই দোষেই মুম্বইয়ের এক প্রাক্তন বিপনন ঘাঘু আমাকে খাপের কাদাভরা হাটে বেচবার চেষ্টা করল। এই লোকটা যদ্দুর খবর রাখি সহকারী কাউকে কাউকেও চাকরি জীবনে বেচতে আর বলি দিতে দ্বিধা করেনি ম্যানেজমেন্টের কাছে। এইবারের প্রমাণছাড়া কাদা বেচার চেষ্টা বেচারার সফল হয়নি। কিন্তু সে চালাক ও বিপননে ঝানু মাল। আমাকে ব্লক করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে আর নিজে আমাকে ব্লক করে সম্ভবত তার অভিযানে ক্ষান্ত হয়েছে সেই বিপনন-বীর নোংরা মানুষটা।
আর একটা পাঁঠা এই মুম্বইবাসী বাউন্সারের অনুপ্রেরণায় ডাক ছাড়তে লাগল। অশ্লীল ডাক শুধু না, আইনের ভয় দেখানো ডাক। আইপিসির এত নম্বর ধারা, তত নম্বর শাস্তি এই সব। এমনকি একজন প্রায় চল্লিশ বয়সিনী কাউকে বিরক্ত করেছি সেই প্রসঙ্গে আমাকে’ পিডোফিলিয়া’র কথাও মনে করাল। এই মনুষ্যেতরটা পিডোফিলিয়া শব্দটার মানে অবধি জানত না।
সেই তখন তাদের পোস্টে যে কজন ‘সে কী, একে তো অন্যরকম জানতাম!’, ‘লুচু করেছে’, এই জাতীয় অবোধ ন্যাকামির পোস্ট করেছিলেন। তাঁদের কাউকে কাউকে আমি আজও বন্ধু তালিকায় পুষছি।
কেন? নেহাতই অ্যাকাডেমিক ইন্টারেস্টে।
সেই সময়েই আমার এক সহোদরা আমাকে জানিয়েছিলেন, এই পাঁঠাটা নাকি বিভিন্নজনকে(পড়ুন মহিলাদেরকে) মোবাইল ফোনে আর মেসেঞ্জার ফোনে, জনে জনে আবেদন করছিল আমার ‘যথার্থ’ শাস্তির ব্যাপারে সোচ্চার হতে। সেই মত স্বঘোষিত প্রচণ্ড নারীবাদী কেউ আমাকে ব্লকটকও করেছেন বলে শুনেছি।
প্রসঙ্গত বলি, অবলীলায় অন্যের মাকে জড়িয়ে অশ্লীল গালি(আন্দাজ করে নিন) দেওয়া লোকটার সাবেক প্রোফাইলে, ফেসবুক ওই সব বেয়াদবির জন্যই আর নাকি ঢুকতে দেয় না। হালে নাকি সে তাই নিজের নামের বানান পালটে আর একটা সবজান্তা প্রোফাইল…
কেউ কেউ জল মাপতেও এসেছিলেন। অভিযোগকারীরা তো প্রমাণ দিতে পারেনি কোনও। উল্টোদিকে আমিই আইনি কিছু করার কথা ভাবছি কিনা, জানতে চেয়েছিলেন।
থাক এতসব চুকেবুকে যাওয়া কথা। আমি মশাই আইনকে খুব ভয় পাই।
তাই ধরুন আইনের ভয়েই বলে রাখলাম, ‘হামার কুনো কসুর নাই। হামি গরিব আদমি আছে।’
★