তখন আমার দু’চোখ উপচে গঙ্গা আর যমুনা গাল বেয়ে নেমে জামাকাপড় ভেজাচ্ছে। মুছতে পারছি না যাতে হাতে ধরে রাখা মোবাইলে তুলতে থাকা ভিডিও কেঁপে না যায়। প্রায় আট মিনিটের একটা গ্রুপ পারফরমেন্স। তার জন্য চুপ করে সাড়ে তিনটে থেকে গ্রীণ রুমে মোবাইল ছাড়া বসে থাকা। সময় মত কোন সাহায্য ছাড়া স্টেজে আসা আর, কি অনায়াসে অন্যদের সাথে তাল রেখে পারফর্ম করা। আমার অনেক আফসোস ছিল ওর অটিজিম ধরা পড়ার পরে। আমিই প্রথম আর আমিই শেষ আমার প্রফেশনে। কিন্তু সত্যি বলছি আজ আমার কোন আফসোস নেই। ও প্রমাণ করে দিয়েছে আমাকে যে ও কারোর থেকে কোন অংশে কম নয়।
একবছর বয়েসে নিজে হাতে ধরে বোতল থেকে দুধ খেত না। কথা যেটুকু বলত সেটাও বছর আড়াই বয়েসে হারিয়ে গেলো। পিঠোপিঠি বেড়ে ওঠা মিঠির সাথে তুলনা করলে কোথাও যেন মানছিল না মন। স্ট্যাম্পটা মারলেন অনিন্দিতা দি। অটিজিম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার। কিছুই জানতাম না অটিজিম সম্পর্কে দু হাজার দশ সালে। গুগুল আর নিমহ্যানস এর সুবাদে জানলাম। সব দরজা কিন্তু বন্ধ হয়নি তখনও। তবে হ্যাঁ এ ছেলে মাধ্যমিকের দৌড়ে নেই তা জেনে গিয়েছিলাম তখনই। একে অটিজিম তার উপরে নন ভার্বাল। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে নি খালি। এক আকাশ ইচ্ছে নিয়ে, যতটা পারা যায় এগিয়ে দেওয়ার অভিপ্রায়ে আমাদের চলার শুরু।
সময় গড়ালে একটা একটা শব্দ যেমন বেরোতে আরম্ভ করল, ওর জগতটাও তেমনই যেন বাঘু মান্নার জগতটার মত, একটা একটা করে পিয়াজের পাপড়ি খুলতে লাগল। চোখের দিকে তাকানো এখনো হয়ত কম কিন্তু পুওর ওবেলিক্স এখন অনেকটাই স্বাধীন মতামত দেয়। কাঁদলে আগে খুঁজতাম কোথাও চোট লেগেছে কিনা সারা শরীর জুড়ে। আর এখন পেটে ব্যথা, কোথায়? তাও লোকেট করে আঙুল দিয়ে। নিজের পছন্দের ইংরেজি গান চালিয়ে শোনে নিজের জগতে থাকলে। তবু আগুনের পরশমনি গানে ওর শেষ মিনিটে বাতিল হওয়া আগের স্কুলের অনুষ্ঠানে, ও বোধহয় মানতে পারেনি। দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গেছে আমাদেরই অজান্তে। আর সেটা করে দেখিয়েছে মনোবিকাশ কেন্দ্রের পঞ্চাশ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে। আর তা দেখে চোখের জল কি আটকানো যায়। সাবাশ ঈশান। তোকে আরো যেতে হবে।
“সাবাশিয়া”মিশন মঙ্গলের গানটা তোকে গাইতে হবে সবার সামনে মাথা উঁচু করে। এ লড়াই আমাদের সবার লড়াই একা তোর নয়। আমি বিশ্বাস করি অনেস্টলি চেষ্টা করলে ঈশানরা এগোবেই। কেউ ওদের আটকাতে পারবে না🙏
#SupportAutismAwareness
#autismfamily #autism #autismacceptance