রচনাঃ দীপঙ্কর (আন্তর্জাতিক গবাপাগলা সাহিত্য পুরষ্কারে সম্মানিত)
আমি শ্রী মদনগোপাল মোদক। নিবাস খড়দহ। পিতার নাম ৺হরিগোপাল মোদক। চালের চোরা চালান করতেন। ঠাকুদ্দা ৺ব্রজগোপাল মোদক পেশাদার টুলো পন্ডিত ছিলেন।
আমি মদনগোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডারের এক এবং অদ্বিতীয় প্রোঃ।এখন দোকানে এসে’ কিছু ছেলেপুলে ঝঞ্ঝট করছে- খালি খালি টাকা চাইছে, তাই নেতাজির কাছে একটা আবেদন পত্র নিয়ে’ যাচ্ছিলাম। নেতাজি মানে নেতাজি মেট্রো রেল ইস্টিশনের সন্নিকটে একজন ‘প্রভাবশালী’র কাছে। মন পরিষ্কার হলেও স্ফূর্তি ছিলো না। অল্প টাকার ব্যবসা, সেটাও যদি যায়, তো সব যায়।অল্প সুখে আছি, সেটাও যায়। সুখের লাগিয়া এ ঘর বান্ধিনু- অথচ দেখুন সুখ কাকে বলে’ তা’ই জানলাম না। খালি ঝঞ্ঝট আর ঝঞ্ঝট।
আমি পয়সা সাশ্রয়ের নিমিত্তে মাসে একবার চুল দাড়ি কাটি।নিতাই কেশ কর্তন মন্দিরে। চোৎ মাসের ঝাঁ ঝাঁ গরমে মাথা গাল কুটকুট করছে। জামা ঘামে ভিজে’ লটরপটর করছে।
সুধীজন, যদিও লটরপটর এক রকমের মাছরান্নার পদ- তবুও এখানে ল্যাৎপ্যাৎ বোঝানো হয়েছে। ইস্টিশন থেকে বেরিয়ে সবে গলিতে পা রেখেছি, এমন সময় “ধর্ধর্ধর ঐ তো যাচ্ছে….”বলে’ জনাকতক লোক- তার মধ্যে কয়েকটা বুড়োও আছে, হৈহৈ করে’ আমার পানে ধে’য়ে এলো। আমি তৎক্ষণাৎ থাকিতে চরণ বলে’ সটকান দিলাম। ফুটপথের জাপানি মোমোবালাকে আঁৎকে’, বিড়িওয়ালার টিনের ডালা উল্টে’, শেষে একজন স্ফীতবক্ষ ফলবালীকে বিষ্মিত করে’ তার বুকে আশ্রয় নিলাম- এবং অবশ্যই অনিচ্ছাকৃত কুকর্ম। তবে বোঝা গেলো ফলমহিলা দেহাতি “আব্বে ই ক্যা করতানি…মেরি ঘুটনা টুটি রে বুডঢা কাঁহিকা, যা তেরা বিবিকি গোদ মে…” ঘটনা ঘোরতর হওয়ার আগেই ঐ পশ্চাদ্ধাবমান জনতা আমার দু হাত ধরে’ পাশের গলিতে ঢুকলো।বোধহয় এরা সেই কুখ্যাত কলকাতার গলাকাটার দল।
“একেনে কি করচো গুর্রু?”(প্রশ্ন)
“কতোদিন পতে পতে ঘুরচো গুর্রু, সুঁয়োপাকার রোঁয়ার দাড়ি গজিয়েচো”
অন্য একজন গজগজ করে’, আমিও আমার স্বয়ং গজানো দাড়িতে হাত বুলিয়ে অনুভব করি। নিজের দাড়িতে হাত বোলানো তো আর পরকীয়ার মধ্যে পড়ে না।
“আজ্ঞে আমাকে ছেড়ে দিন, ঘরে আমার বিধবা বৌ….”(উত্তর)
“বৌদি বিধবা হলে’, পরদিনই ফিম্লস্টার কাত্তিককে বে’ করে’ নেবে, সে খপর আচে? সে ব্যাটা ক’দিন দুপুরে তোমার বাড়িতে এয়েচে…” (অন্য প্রশ্নকর্তা)
আমি এবার আর বিষ্মিত হ’তে পারলাম না (দুঃখিত)। আমার বৌ সবিতা? বগলে ঘামের গন্ধ, উঁচু হনু, টেলিস্কোপিক বক্ষ….তার সঙ্গে ফিল্মস্টার?
“হুঁশ এয়েচে তাইলে?” (তৃতীয় প্রঃকঃ)
“তা এই ধ্বজভঙ্গ জামা পেন্টুল কোতায় পেলে গুর্রু? (৪র্থ)
“যেহেকানে তুহুমি চ্চুচ্চু….হুটকি মাল্লে লাক ল্লাহাক টাকা…..স্সেসেকানে ত্তু ত্তু ত্তু….” (৫ম) ত্তু ত্তু করতে করতে তার ত্তোতোহৎলার দম শেষ হয়ে যায়।
“আমি কে?” অবশেষে আমি সপ্রশ্ন।
বাকিরা সবাই হুট্ট্যাঁটারু (মতান্তরে হাট্টিমাটিম) পাখির মতোন হুট হুট করে’ হেসে উঠলো।
সবার পেছনে যে অমানুষের উৎপলবাবুর মতো নেংচে নেংচে আসছিলো, সে পৌঁছেই বললো “আত্মাণং বিদ্ধি, সোঅহম, সবই তুমি, সবাই আমি, এসব ভাবতে হবে না গো(নামাবলীর খুঁটে দিয়ে মাথা মোছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে তার আপত্তি, বোঝাই যায়)। তুমি যেখানে আছো সেটাই তোমার ঘর, যে নামে ডাকবো সেটাই তুমি। হরেকৃষ্ণ হরেকৃষ্ণ”
“আমি মদনগোপাল মোদক, বাবার নাম চন্দ্রবিন্দু হরিগোপাল মোদক, আমার স্বাধীন দোকান আছে, তার লং পেটিকোট ক্ষীরপুরিয়া বিখ্যাত, লম্বা সরের মধ্যে ক্ষীরের পুর দেওয়া, কুচপ্রতিম ক্ষীরের সিঙ্গাড়া, স্তোকনম্রা রসগোল্লা, আমি প্রতিবাদ জানাতে এসেছিলাম, আমার নিজের ব্যবসা আছে, ঘরে বৌ আছে…..”
“আচেই তো, আচেই তো, সব আচে, ঘরে চ্চলো গুর্রু, তুমি হাত ঘোরালে নাড়ু পাবে, জ্যান্ত ক্ষীরের পুতুল পাবে… চ্চুচ্চুচ্চু (এটা চুম্বনের শব্দ) এ্যাকন তুমি ক্ষুদিরাম গুচাইৎ”
ওদের বগলবন্দী হয়ে চললাম, হাজরা ছাড়িয়ে, খাল পেরিয়ে (উঁঃ কীঁ গঁন্ধঁ) এক মস্তো বড়ো বাড়ির সামনে।
“এটা আমার….এটা আমার…?” আমতা আমতা করে’ বাক্যটা শেষ করতে পারি না।এই বাগানওলা সুবৃহৎ অট্টালিকার পানে আমি বিষ্ময়বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকি।
তৃতীয় জন বলে “মেম্রি লস……সব ভুলে গ্যাচে!!”
“শশশহক ত্থেরাপি লালালালা ল্লা…” তোৎলা উবাচ।
একজন পাদপুরণ করে “লাগবে”
খানিকটা কৌতুহলে অথবা লোভে (আত্মচরিতে বিচরণ করার সময় স্বীকার করাই বাঞ্ছনীয়) আমি গুটিগুটি পায়ে নিজে নিজেই বাড়িটাতে প্রবিষ্ট হলাম। দুয়ারে ঘন্টা বাজতেই একজন এসে দরজা খুলে’ দিলো। খড়দহের বাড়িতে ঢালাই মেঝে, নিচু সিলিং আর ভ্যাপসা গরম, দুধছানা মেশানো একটা বু। এখানে ঠান্ডাই মেশিন চলছে। মার্বেলের একটা মার্ভেলাস মেঝে। কোথায় সেই কাঠের ছোটো ছোটো জানালা, চটের বস্তার পাপোশ আর তক্তপোশ? এতো পুরো ইয়ে…..তারপর তিনি এলো (নিজের বৌকে কি আপনি আজ্ঞে করা শোভন?)
“ওম্মা, এই তো গো তুমি… কোতায় ছিলে গো এ্যাতোদিন…. ঈসসসস ক্ষী চ্যায়রা করেচো….ম্ম্যাগো ম্মা…..”এই সব বক্ষভেদী কথা বলতে বলতে অগোচরে ওনার আঁচল সরে’ যায়।
যাই হোক ফিটফাট কেতাদুরস্ত হয়ে সন্ধ্যায় বন্ধু ও বান্ধবী পরিবৃত হয়ে স্কটল্যান্ডের মদ্যপান (আগে কালীপুজোয় কালীমার্কা ছাড়া বিশেষ অভিজ্ঞতা ছিলো না), মন্দ লাগছিলো না। তবে এর থেকে কালীপুজোয় ছোলা+আদা+পেঁয়াজ দিয়ে কালীমার্কায় বেশী স্বাদ পেতাম। খিস্তি খেউড়, মকারান্ত গালাগালি সবই থাকতো। ওদিকে আমার মদনগোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডার বড়ো যত্নে গড়েছিলাম। বড্ড সুনাম ছিলো। তবে এরকম বাড়ি, মদের আসর আমি কোনোদিনই করতে পারতাম না।
এখানে আবার মকারান্তরা মদের আসরে উপস্থিত। পাশেই বসে’ আছেন, ঢালাঢালি, ঢলাঢলি সবই হচ্ছে। একটু ইয়ে ইয়ে লাগছিলো, ইয়ে বোঝেন তো, বুঝে নিন, এটা বোঝানো খুব কঠিন। তবে রাত্রির অভিজ্ঞতা ভিন্ন। এই মহিলার শরীর, গন্ধ, স্বাদ, জ্ঞান সবই অনেক ভালো। এতো সবিতা নয় যে শাড়িটা কেবল ইয়ে করবে। যাই হোক, কদিন পরেই আমি এখান সেটিং হয়ে গেলাম। সক্কাল ব্যালা কে য্যানো কতকগুলো টাকা পাটিয়ে দিয়েচে। কেন কী বেত্তান্ত জানি না। আমি এ্যাকন ক্ষুদিরাম গুছাইৎ। ক্ষুদিরাম আত্মবলি দিয়ে’ শহীদ হয়েচিলো। আমি মদনগোপাল মোদক আত্মাবলি দিয়ে ক্ষুদিরাম গুছাইৎ হয়েচি।এটাও একরকম শহীদ হওয়া।