জুয়াচুরির জন্য স্মরণীয় এই ভোটে ক্লজ জি-র রেজাল্ট-এর ছবি রইল (ব্যালটে যে সিরিয়াল ধরে নাম ছিল, সেই হিসেবেই লিস্টের তিন নম্বরে আমার নাম – প্রাপ্ত ভোটের হিসেবে, আমি নবম। প্রথম সাতজন নির্বাচিত)। স্বাক্ষর সেই সুদক্ষ রিটার্নিং অফিসারের। অবস্থা যা, দুলালচন্দ্র ভড়ের তালমিছরির স্টাইলে, এঁর সই মানেই ভুয়ো, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। তবু কিছু কথা বলার।
ক্লজ জি বলতে অধ্যাপক-চিকিৎসকদের ভোট। যাঁদের অধিকাংশই বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ান। বাকি কয়েকজন বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজে।
প্রত্যাশিতভাবেই এই সেক্টরে বিভিন্ন ধরনের ভয়টয় দেখিয়ে জোর করে ফাঁকা ব্যালট সংগ্রহ করেছেন ‘তৃণমূলপন্থী চিকিৎসক’ ও তাঁদের সাঙ্গোপাঙ্গরা। সংখ্যায় কমসেকম সাত-আটশো। তারপরও, টু বি অন আ সেফ সাইড, কমপক্ষে সাতশো জাল ব্যালট ফেলেছেন। যে ব্যালটের কাগজের রঙ স্পষ্টত আলাদা। যদিও নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার, মহাত্মা মানস চক্রবর্তী মহাশয়, ব্যালটগুলোকে আসল বলেই মান্যতা দিয়েছেন। সেসব কথা বারবার বলে চলার মানে হয় না।
কিন্তু যেকথা বলার, এই সবকিছুর পরেও আমি সাতশ চুরাশিটি ভোট পেয়েছি। রিটার্নিং অফিসারের হিসেবে যে বৈধ ভোট, তার এক-তৃতীয়াংশের বেশি।
অর্থাৎ, সাতশ তিরাশিজন আমাকে ভোট দিয়েছেন। (আর একটি ভোট, স্বাভাবিকভাবেই, আমার নিজের।)
এই ব্যাপারটা আমার পক্ষে বিস্ময়কর।
প্রথমেই যেটা বলার, এই সাতশ চুরাশিটা নির্ভেজাল ভোট। অন্তত সাতশ চুরাশিজন মনে করেছেন, আমি মেডিকেল কাউন্সিলে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য (যে ধারণার সঙ্গে আমি নিজেও কি সম্পূর্ণ সহমত!!) – ভয় দেখিয়ে ফাঁকা ব্যালট সংগ্রহ না হলে সংখ্যাটা, হয়ত, আরও খানিকটা বাড়ত। তার পরেও কিছু কথা মাথায় ঘুরছে।
নিজের সম্পর্কে যেহেতু যথাসম্ভব নির্মোহ থাকার চেষ্টা করি, তাই এটুকু জানি – চিকিৎসক হিসেবে আমি তেমন খ্যাতিমান নই। নিজেকে কু-চিকিৎসক বলছি না – তেমনটা বলতে নিজেরই খারাপ লাগে – বলছি, আমি খ্যাতিমান চিকিৎসক নই। না, এ কোনও বৈষ্ণবী বিনয় নয় – এটা অকপট সত্যি।
শিক্ষক হিসেবে খ্যাতি-অখ্যাতির প্রশ্নই নেই, কেননা পাছে আমি ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি করে ফেলি, সম্ভবত এই আশঙ্কাতেই, সরকারবাহাদুর, আমার এই এক যুগের চাকরি জীবনে, কখনোই এমন কোনও জায়গায় পোস্টিং দেননি, যেখানে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর সুযোগ রয়েছে। (আমার বিষয়টি যেহেতু আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কারিকুলামে নেই, সেহেতু এমডি স্টুডেন্ট না থাকলে পড়ানোর সুযোগও নেই।)
সেক্ষেত্রে এই সাতশ তিরাশি জন ঠিক কী কারণে আমাকে ভোট দিলেন, তা ভেবেই আমি বিস্মিত। বিশেষত, এ কথা যদি অকপটে স্বীকার করি যে ভোটের প্রচারে এবারে আমি খুব একটা দৌড়াদৌড়ি করতে পারিনি ব্যক্তিগত কারণে, তার পরও? হ্যাঁ, অনেকে নিশ্চয়ই আমাদের প্যানেল দেখে ভোট দিয়েছেন – কিন্তু প্যানেলের বাইরেও বেশ কিছু ভোট আমি পেয়েছি, তাঁরা?
আমাদের প্যানেলে অনেকেই ছিলেন, যাঁরা চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতিমান, অধ্যাপক হিসেবেও – বিপরীত প্যানেলেও খ্যাতিমানের সংখ্যা কম ছিল না (খ্যাতি অর্থে সুখ্যাতিই বলছি) – তারপরও সম্পূর্ণ অপরিচিত, খানিক অজ্ঞাতকুলশীলও বটে, এই আমাকে যাঁরা ভোট দিলেন, ব্যক্তিগত ভাবে তাঁদের প্রত্যেকের কাছে আমার কৃতজ্ঞতা।
এই সাতশ তিরাশিজনের অন্তত আশি শতাংশকে আমি সামনাসামনি চিনি না। অনুপাতটা বেশিও হতে পারে।
পরিচিত যাঁরা আমাকে/আমাদের ভোট দিলেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে বুকভরা ভালোবাসা।
আর আপাত-অপরিচিত যাঁদের ভোট আমার নামের পাশে পড়ল, সেই অধ্যাপক-চিকিৎসকদের প্রতি আমার প্রণাম। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই প্রণাম, স্রেফ এই আশাতে – যদি কোনও না কোনও ভাবে তাঁরা এই কৃতজ্ঞতার খবরটুকু পান…