গতকাল একটি নববিবাহিত দম্পতি আমার চেম্বারে আসেন ভদ্রলোকের বয়স ৩৫, মেয়েটি ২০। এসেই ভদ্রলোক বলেন আমরা সদ্যবিবাহিত তাই এখন বাচ্চা নিতে চাই না। কি ব্যবস্থা নিতে পারি?
আমাদের দেশে খুব কম লোকই এই পরামর্শের জন্য আসেন। এলে আমাদের জনসংখ্যা এমন বিপুল হতো না। তা যাই হোক দু-একটা কথা এগোনোর পরে ভদ্রলোক বলেন কেন চাই না সেটা বলে দিই। এটি আমার দ্বিতীয় বিবাহ। আমার প্রথম স্ত্রী দুমাস আগে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মারা যান। একটু থেমে আবার বলেন এ আমার প্রথম স্ত্রীর ছোট বোন। দিদির মৃত্যুর পর সবাই ভাবল বাচ্চাটাকে কে দেখবে? আমারই বা কি হবে এবং মায়ের সবথেকে ভালো রিপ্লেসমেন্ট মাসীই হতে পারে।
তাই এই কুড়ি বছরের সদ্য ফোটা যুবতী মেয়েটি তার পড়াশোনা ছেড়ে সদ্যোজাতর মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হল। সবেমাত্র বছর খানেক ইংলিশ অনার্স নিয়ে পড়তে শুরু করেছিল। কিন্তু এমনই আমাদের সমাজের চাপ যে তাকে তার পাঠ্য বইয়ের শিকড় থেকে উপড়ে নিয়ে একটি সদ্যোজাতর মায়ের ভূমিকা পালন করার জন্য এবং প্রাক্তন জামাইবাবুর জৈবিক সমস্যার সমাধানের জন্য নিযুক্ত করা হলো। এই সমস্যার আর কোন ভালো সমাধান পাওয়া যায়নি। তাছাড়া সবাই নাকি বললেন এমন ভালো বর হঠাৎ করে আর কোথায় বা পাওয়া যাবে?
মেয়েটি সদ্য বিয়ের নতুন পাটভাঙ্গা শাড়িতে প্রায় ১৫ বছরের বড় স্বামী ওরফে প্রাক্তন জামাইবাবুর পাশে জড়োসড় হয়ে সারাক্ষণ বসে রইল। মাঝে মাঝে করুণ মুখে ছলছল চোখে আমার দিকে তাকালো। তার কোন বক্তব্যই ছিল না।
এই হঠাৎ মাতৃভূমিকা এবং সংসারের যাবতীয় দায়িত্বের মধ্যে ফেলে দেবার আগে কি কেউ তাকে জিজ্ঞেস করেছিল সে এই মুহূর্তে পড়াশোনা ছেড়ে এই জীবন চায় কিনা? সে আদৌ এই বিয়েটা করতে চায় কিনা? তার মনে অন্য কেউ অলরেডি জায়গা করে নিয়েছে কিনা?
মেয়েটির মুখ ও ভাব ভঙ্গিমা দেখে তো মনে হলো না এগুলো কেউ তাকে জিজ্ঞেস করেছে।
আর কদিন বাদেই আমাদের সগর্বে নামাঙ্কিত নারী দিবস। সেদিন উইমেন এমপাওয়ারমেন্টের ধ্বজা উড়িয়ে জ্বালাময়ী ও উদ্দীপক বহু বক্তৃতা শুনবো, গোলাপে গোলাপে হয়তো আমার টেবিলও ছেয়ে যাবে। কেউ ভাববে না যে কত কত জায়গায় আজও নারীদের প্রাথমিক সম্মতির ব্যাপারটা কতটা অবহেলিত!
আজকের এই দম্পতিকে দেখে আমার ৯০ এর দশকের একটি বলিউড ব্লক বাস্টার ‘দিদি তেরা দেওয়ার দিওয়ানার’ কথা মনে পড়ে গেল। এই ছবিটা যখন দেখি তখন আমি হাউজ সার্জেন। কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের কোঠায় পা রেখেছি, সমাজচিন্তার ভারে মন তখনো এত ভারাক্রান্ত হয়নি। (আপনারা যাঁরা যাঁরা এই সিনেমা দেখেছেন নিশ্চয়ই মনে আছে) আমারও মনে হয়েছিল কেউ কি মাধুরী দীক্ষিতকে জিজ্ঞেস করছে না সে এরকম একটা বিয়ে অবস্থার চাপে পড়ে করতে চায় কিনা? শেষমেষ মাধু্রী অবশ্যই রক্ষা পেয়েছিল তার বিশাল হৃদয় জামাইবাবুর মধ্যস্থতায়, তবে এই মেয়েটি পায়নি।
সব সিনেমাই জীবন থেকে তৈরি হয়। তবে সব জীবন তো সিনেমা হয় না!
Speechless. Dark reality of our society. So, well put Ma’am. Gobhire dhuke bhable, gaaye kata dai. 🙏