আজকের কাগজে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে একটি ঘোষণার কথা পড়লাম। পুরোটা বুঝে উঠতে পারিনি। যেটুকু বুঝলাম –
রোগী চিকিৎসার জন্যে হাসপাতালে এলে প্রথমেই দেখা হবে –
তাঁর স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে কিনা। থাকলে কার্ড অনুসারে চিকিৎসা হবে। কার্ড বাড়িতে ফেলে এলেও চাপ নেই – আধার মোবাইল ওটিপি ইত্যাদি করে ডিটেইলস জোগাড় হয়ে যাবে।
যদি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থাকে –
দেখা হবে, তাঁর রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের স্বাস্থ্যকার্ড আছে কিনা (ডব্লিউবিএইচএস বা সিজিএইচএস বা ইএসআই কার্ড)। থাকলে সেই অনুসারে চিকিৎসা হবে।
যদি না থাকে –
দেখা হবে, তাঁর নিজস্ব স্বাস্থ্যবীমা কার্ড কিছু আছে কিনা। অর্থাৎ নিজের তরফে করানো কোনও হেলথ ইনশিওরেন্স। থাকলে সেই অনুসারে চিকিৎসা হবে।
তাও যদি না থাকে –
তাহলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালই নিজদায়িত্বে নিখরচায় রোগীর স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করিয়ে নেবেন। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা শুরু হয়ে যাবে, কার্ড অত তাড়াতাড়ি রেডি না হলেও কার্ডের নম্বর এসে যাবে চটজলদি – নম্বর এসে গেলে বিশদ চিকিৎসা ওই কার্ড দিয়েই হবে।
এরকমই বুঝলাম। ভুল বুঝলাম কি?
যদি কথাটা ভুল না বুঝে থাকি, তাহলে যেটা দেখে অবাক হলাম, এ নিয়ে সেরকম – না, কোনোরকমের – শোরগোল নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় তো একেবারেই নেই। ক্লোজ কিছু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কয়েকজন ডাক্তারবাবু বলছেন – এ তো মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ!!
না, ঠিক তেমন হয়ত নয়।
কেননা, প্রথমত স্বাস্থ্যচিকিৎসা যে মৌলিক অধিকার, এটা কেউই মানেন না। মাঝে চিকিৎসকদের একাংশ হইচই করলেও আমজনতার হেলদোল দেখিনি। আর দ্বিতীয়ত, চিকিৎসা করা হবে না, এমন কেউই বলেননি। চিকিৎসার জন্যে কোনও না কোনও স্বাস্থ্যবীমা কার্ড লাগবে এমনটাই বলা হয়েছে – যাঁর সে ব্যবস্থা নেই, তাঁর জন্যে নিখরচায় স্বাস্থ্যবীমা করিয়ে দেবেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই, এমন প্রভিশন রাখা হয়েছে। কাজেই, চিকিৎসার অধিকার খর্ব হচ্ছে না। সেই অধিকার মৌলিকই হোক বা যৌগিক, অধিকারটি আগেকার মতোই থাকছে – যদি ভাবেন এতদিন বহাল তবিয়তে ছিল, তেমনটাই থাকছে।
আমার প্রশ্নটা আরেকটু বুনিয়াদি লেভেলের।
রাজ্য সরকার যাবতীয় চিকিৎসা বিনেপয়সাতে দিতেন এতদিন।
কিন্তু স্বাস্থ্যবীমার নীতি ঠিক তার উলটো। সেখানে চিকিৎসার জন্যে পয়সা লাগে, কিন্তু রোগীপরিজনের হয়ে টাকাপয়সা মেটান অন্য কেউ – সেটা সরাসরি সরকার (রাজ্য বা কেন্দ্র) হতে পারেন, অথবা কোনোও সরকারি/বেসরকারি বীমাকোম্পানি।
তাহলে কি সরকার বিনেপয়সাতে চিকিৎসা জোগানোর নীতি থেকে সরে আসছেন? সরে যাচ্ছেন বীমাভিত্তিক চিকিৎসাব্যবস্থার দিকে?? এই সরণ আগেই ঘটতে শুরু করেছিল, কিন্তু যদি আমার বোঝাটা খুব ভুল না হয়, এই নতুন ঘোষণা এককথায় প্যারাডাইম শিফট।
আজকাল সরকারি কোনও সিদ্ধান্তেই অবাক হই না আর। এক্ষেত্রেও হচ্ছি না।
কিন্তু এ নিয়ে কেউ কোত্থাও কিচ্ছুটি বলবেন না!! সবাই, সব্বাই চুপ!!! কোনও হইচই ছাড়াই মেনে নেওয়া হবে এমন সিদ্ধান্ত? ন্যূনতম প্রশ্ন, অন্তত সংশয় কাটানোর জন্যে সাধারণ প্রশ্নটুকুও কেউই তুলবেন না??
সমাজের এই সামূহিক নীরবতা সত্যিই অবাক করছে। না, অবাক নয় – এবারে ভয়ই করছে।