ডাক্তারবাবু একজন নামকরা প্ল্যাস্টিক সার্জেন। ইংল্যান্ডের একটি কনফারেন্স থেকে ফিরেছিলেন সুস্থ অবস্থায়। ফিরেই নেমে পড়েছিলেন নিজের কাজে। পরপর কয়েকটি ফেলে রাখা অপারেশন করে পরের দিনই দৌড়েছিলেন বাঁকুড়ায়। ওখানে লেপ্রসি মিশনের সহায়তায় কুষ্ঠ আক্রান্ত রোগীদের অপারেশন হবে। বিকলাঙ্গ দরিদ্র মানুষগুলি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবে। অনেকেই বারণ করেছিলেন। তিনি শোনেননি। একটাই উত্তর। ‘আমি ডাক্তার, মহামারীই আমাকে ভয় পাবে।’
বাঁকুড়া যাওয়ার পথে নিজেই অসুস্থ হলেন। তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে। নিয়ম মাফিক করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করার জন্য রক্তের নমুনা পাঠানো হল। রিপোর্ট আসার আগেই চিকিৎসকের পরিচয় প্রকাশ করে টিভিতে, সংবাদ পত্রে, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিচার সভা বসে গেল। সকলেই একমত হলেন, ডাক্তার হিসাবে তিনি অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরেই তাঁর কাজে নামা উচিৎ হয়নি। নিজে উপার্জন করার জন্য এতো লোকের জীবনের ঝুঁকি নেওয়া উচিৎ হয়নি। ওই রক্তচোষা চিকিৎসকের কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিৎ। কেউ কেউ আবার জানালেন এর জন্যই ডাক্তাররা মার খায়।
যদিও ডাক্তারবাবু কুষ্ঠ রোগীদের যে অপারেশনগুলো করতে যাচ্ছিলেন, সেখানে একটা নয়া পয়সাও তাঁর আয় হোতো না। তবে পয়সা ছাড়াও আরও অনেক কিছু আয় করা যায়, সেটা সম্ভবত এই স্ব-নিযুক্ত বিচারপতিরা জানেন না। একটি পঙ্গু মানুষকে হাঁটতে দেখার জন্য একজন চিকিৎসক তাঁর জীবন বিপন্ন করতে পারেন, সেটা এই গর্দভদের মাথাতে কোনোদিনও ঢুকবে না।
গতকাল রাতে ডাক্তারবাবুর রিপোর্ট এসেছে। কোনও পরীক্ষাতেই করোনা ধরা পড়েনি। রিপোর্ট দেখে তিনি স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন। ‘যাক, এবারে তাহলে কুষ্ঠ রোগীদের অপারেশন গুলো করে ফেলা যাবে’।
মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ এক আমলার ১৮ বছরের পুত্র ইংল্যান্ড থেকে ফিরে জ্বরে আক্রান্ত হলেন। করোনা মহামারীর মধ্যেই ইংল্যান্ডে তিনি একাধিক পার্টি করে ফিরেছেন। শেষ পার্টিতে যে বান্ধবীর সাথে তিনি নেচেছিলেন, তিনি ইতিমধ্যেই করোনায় আক্রান্ত।
আমলাদের পুত্রদের ক্ষেত্রে নিয়ম আলাদা। তাঁকে হোম কোয়ারান্টাইনে থাকতে বলা হল। তিনি তা কেয়ার করলেন না। শুধু মনোরঞ্জনের জন্য সারা কলকাতা দাপিয়ে বেড়ালেন। তাঁর মা যথারীতি নবান্নে গেলেন। গতকাল তাঁর রিপোর্ট এসেছে করোনা পজিটিভ। একমাত্র ভগবানই বলতে পারেন ঠিক কত শ লোককে তিনি করোনার ভাইরাস বিতরণ করেছেন।
আমি জানি তাঁর কোনও শাস্তি হবে না। কেউ তাঁর শাস্তির দাবী তুলবে না। কেউ তাঁর পরিচয় প্রকাশ করবে না। মানুষ করোনার থেকে ক্ষমতাকে অনেক বেশি ভয় পায়। করোনাতে মর্টালিটি মাত্র দু’শতাংশ। কিন্তু ক্ষমতাকে ঘাঁটালে বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
আমি শুধু বলতে পারি মহামারী কিন্তু কাউকেই ছাড়বে না। রোগ হিন্দু মুসলমান দেখে না, কাঁটাতারের বেড়া দেখে না, গরীব বড়লোক দেখে না, মন্ত্রী ভিখারি বিচার করে না।
যারা প্রশাসনের উচ্চপদে আছেন তাঁদের একটু দায়িত্ববান হওয়া উচিৎ। তাহলে চিকিৎসকদের কাজে অনেক সুবিধা হয়।
ভীষণ সুন্দর পোস্ট। যথার্থ কথা, এই সময়ে সকলের উচিত ডাক্তারদের সহযোগিতা করা, সেখানে প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তি নিজেদের ক্ষমতা দেখিয়ে যদি কিছু করার চেষ্টা করে, তাতে সাধারণ মানুষের দুর্দশা বাড়বে।
ডাক্তাররাই ভগবান, কোনো পূজোর দরকার নেই শুধু সহযোগিতা, তাতেই অনেক কাজ হবে। খুব ভালো লাগলো
ঘটনাটায় অর্ধেক পরিচয় দেওয়া হল। ছেলেটি শুধু একজন আমলার পুত্র নয়, একজন ডাক্তারের পুত্রও। তবে কাজ টি খুবই অন্যায়ের করেছে। সবাই ভালো থাকুন এটাই কাম্য।
Ekdam goal??????