এই স্ক্রল করার যুগেও বহুদিন পর কোন একটি ছবির দিকে তাকিয়ে ১০মিনিটের বেশি বসেছিলাম। ছবিটা কত না বলা কথা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, একটু ভালো করে দেখলেই তা বোঝা যায়। হয়তোবা গ্রামে কাজ করা এক শিশু চিকিৎসক বলেই সেটা আমার চোখে আরো বেশি প্রকট।
এটি মুর্শিদাবাদ জেলার একটি গ্রাম। এক কাছের বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী পাড়া বেড়াতে বেরিয়ে পড়েছিলাম। হাতে ডিজিটাল ক্যামেরা দেখে একরাশ কচিকাঁচা ঘিরে ধরল ছবি তোলার আবেদন নিয়ে। এমন নিষ্পাপ মুখগুলোর এই সহজ আবেদন ফিরিয়ে দেওয়ার ধৃষ্টতা আমাদের ছিল না।
এটি মুর্শিদাবাদ জেলার একটি গ্রাম। এক কাছের বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী পাড়া বেড়াতে বেরিয়ে পড়েছিলাম। হাতে ডিজিটাল ক্যামেরা দেখে একরাশ কচিকাঁচা ঘিরে ধরল ছবি তোলার আবেদন নিয়ে। এমন নিষ্পাপ মুখগুলোর এই সহজ আবেদন ফিরিয়ে দেওয়ার ধৃষ্টতা আমাদের ছিল না।
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙ্গে। আমিও তার ব্যতিক্রম না। এমন সুন্দর একটা ছবি দেখতে দেখতে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত বেশ কয়েকটা প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে শুরু করল। মনে হল জনস্বাস্থ্য এখন বড় বঞ্চিত। শুধু বারেবারে মনে হয় ঝাঁ-চকচকে সুপার স্পেশালিটি মাল্টিস্পেশালিটির আড়ালে প্রদীপের পাশের অন্ধকারের মত জনস্বাস্থ্য আজ ঘোর অন্ধকারে। শুধুই মনে হতে থাকে এই শিশুগুলির উপর আমরা অবিচার করে ফেলছি না তো?
১. ছবিতে দেখতে পাওয়া প্রত্যেকটি শিশুকেই কি দেখে মনে হয় না তারা প্রোটিন এনার্জি ম্যাল-নিউট্রিশনের শিকার?
২. গ্রামের মেঠো রাস্তায় রাস্তায় এখনো তাদের খালি পায়ে ঘুরে বেড়াতে হয়। ওদের হয়তো কেউ বলেইনি হুকওয়ার্মের মত পরজীবীগুলো খালি পায়ে মাটিতে হাটলে শরীরে ঢুকতে পারে।
৩. কজন শিশুরই বা গায়ে জামা আছে? ওদের বাবা-মাদের কিন্তু স্কিন ট্যানিং-এর কথা মাথায় না রাখলেও চলে।
৪. সামনে বসে থাকা কমলা রঙের জামা পরা ছেলেটির গলায় থাইরয়েড গ্ল্যান্ডটা বড্ড বেড়ে আছে। হয়তো বা আয়োডিন ডেফিসিয়েন্সির জন্য এই গয়টারের উৎপত্তি। বাবা-মা হয়তো জানেই না এটা তার কোনো অসুস্থতা।
এবার একটু অন্যভাবে ভাবা যাক। এই নিষ্পাপ মুখগুলোর সরল হাসি আমার মনে হয়, আমার মত আপনাদেরও মন জয় করেছে। মেকি হাসি দেখতে দেখতে ক্লান্ত চোখগুলো যেন পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠে। এদের বাবা-মা দের চাইল্ডহুড ওবেসিটির সমস্যা নিয়ে হয়তো ডাক্তারবাবুর কাছে যেতে হয় না। কত অল্পে সন্তুষ্ট এরা, একটা শুধু ছবি তোলাতেই এদের মুখে যে হাসি ঝিলিক দেয় শহুরে বাচ্চাদের হাজার হাজার টাকার গিফট দিয়েও মনে হয় এমন দুর্মূল্য হাসির দেখা পাওয়া মুশকিল।
ওদের শৃঙ্খলাবোধ আমাদের বেশ অবাক করেছিল। প্রথম সারির বাচ্চাগুলি নিজেদের মতো করেই দেখলাম বসে পড়ল, যাতে একই ফ্রেমের মধ্যে তাদের সবাইকে দেখা যায়।
পাবলিক হেলথের বাজেট যদি আর একটু বাড়তো, তাহলে ইসমাইল, শামীমা, জাফরকে হয়তো দেখতে পেতাম পায়ে জুতো পরে, গায়ে জামা দিয়ে চকচকে মুখে।