ঝড় আসছে।
শুনেই মলিন হয়ে গেলো শঙ্কর কৈবর্ত, মানিক নুলিয়ার মুখ।
তিনদিন ভাসবে না ডিঙি, আবার আসবে ফিরে খিদের অ-সুখ,
তাতে অসুবিধা নেই। সেই রোগ ঘরে থিতু ছোটোবেলা থেকে,
বরঞ্চ ভাবনাতে বন্ধুরা কে কে দরিয়ার বুকে হেঁকে চলে জল ছেঁকে
প্রতি ঝড়ে কিছু ডিঙি মানুষশূন্য হয়ে উল্টিয়ে ভেসে আসে তীরে
শঙ্কর ও মানিক বাড়ি বাড়ি যায়.. সব মাঝি এসেছে তো ফিরে?
ঝড় আসছে।
জেনে উল্লসিত ডিঙিতে দাদন দেওয়া মহাজন মনু পাটোয়ারি,
যত দিন জলে যায় জলে না গিয়ে, তত তার সুদে বাটপারি,
হতভাগা জেলেদের সব মাছ কেড়ে নেওয়া যায় ভারী কম দাম দিয়ে,
না জানি ঝড়টা দেবে আর কটা নতুন শিকারে বঁড়শি লাগিয়ে।
ঝড় আসছে।
আপনমনেই শাপশাপান্ত করে উঠলো অশীতিপর নয়নতারা মাজি
সরকারি নির্দেশে ভিটে ছেড়ে দিয়ে তাকে চলে যেতে হবে আজই,
এই নিয়ে বাইশবার হলো। টিনের কৌটায় লাগানো পুঁইশাকলতা,
সে তো যাবেনা তার সাথে। তার জলে ডুবে গিয়ে মরবারই কথা,
যেরকম ভেসে যাবে ঝুপড়ি বাড়িটার বাকি যত তুচ্ছ অস্থাবর
আবার শিবিরে গিয়ে ভিক্ষার চিঁড়েগুড়, শূন্যের সাথে আরো একবার করা ঘর।
ঝড় আসছে।
মুচকি হাসছেন টিভি চ্যানেলের মালির অম্বিকাদাস আগরওয়াল,
ছা পোষা রিপোর্টার পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি সকাল সকাল,
একেবারে সমুদ্রের পাশ থেকে লাইভ। কখন ল্যান্ডফল, কত উঁচু ঢেউ
সব কিছু রিয়ালটাইমে দেখাবেন এক্সক্লুসিভে। যে ফুটেজ পাচ্ছে না কেউ,
তাকেই ধরতে হবে, ধ্বংসের ছবি ভারী ভালো খায় বহুদূরে নিরাপদ যারা,
মানুষ যাচ্ছে ভেসে কিংবা সাগর গিলছে বাড়ি। পৃথিবীতে কিছু নেই টি আর পি ছাড়া।
ঝড় আসছে।
কেন যে মাস কম্যুনিকেশন করে সাংবাদিকতা বাছলো সুমন্ত্র রায়!
সস্তা হোটেলে ঠাঁই অভীকের সাথে, যে ফুটেজ তোলে ক্যামেরায়।
কাল হয়তো হোটেলটা ভেসে যেতে পারে, ওরা ছাড়া বাকি সব খালি,
তাতে কার কি! হাঁটুজল , গলাজল সবই সমান জানে চাকরিকাঙালী,
মাসের মাইনে পাবে যদি কাল ঝড়ের বিপদ ধরা পড়ে সব অ্যঙ্গেলে,
প্রাণটা থাকবে কিনা সে জানেনা। সেটা বোঝা যাবে ওই ঝড় চলে গেলে।
ঝড় আসছে।
ভীষণ, ভীষণ খুশি ক্ষমতায় থাকা বড় মেজো সেজো ন’ নেতাগণ।
ঝড় মানে সরকারি কোষাগার খোলে, ত্রাণে বেশ টুপাইস আসবে এখন,
কত পার্সেন্টেজ সেটাই ভাবেন। না না, নিজেদের কত থাকবে তা চিন্তা নয়,
বরং উল্টো। কত শতাংশ সত্যিই ত্রাণে দিতে হয়, উদ্বেগে কতখানি হবে অভিনয়,
সেই সব শলা করে ঠিক করে নিতে হবে। তথ্যরা বিরোধীর হাতে পড়ে যদি,
তবে বেশ মুশকিল। এ লাভের বখরাটি পকেটে আসেনা আর চলে গেলে গদি।
ঝড় আসছে।
ক্লাবে মিটিং ডেকেছে তাই আজ হঠাৎ করে অতনু, রিঙ্কু, পরিতোষরা।
কোথা থেকে আসবে ত্রিপল ওষুধ খাবার , হচ্ছে দ্রুত সেসবের খসরা,
বেবিফুড বাদ না পড়ে। আর হ্যাঁ, কোভিডের জন্য মাস্ক আর স্যানিটাইজার,
মানুষের কাছে যেতে হবে।কিছু লোক ঘরে খেয়ে কাজ করে তবু বনে
মোষ তাড়াবার।
ঝড় আসছে। যেমন এসেছে আগে, আসবেও আগামীতে, আরো ঘন ঘন।
মানুষেরা লাভ ক্ষতি ভাবে। কেন এত বাড়ে ঝড় ভাবেনা কখনো।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং। দৈত্যটা জাগছে, প্রতি ঝড় সাইক্লোনে তারই গলা শোনো।