আমেরিকান কলেজ অফ সার্জনস-এর জুন ৭, ২০২৩-এর বুলেটিনে “AI Is Poised to “Revolutionize” Surgery” শীর্ষক প্রতিবেদনে বল হয়েছে – “AI হল অ্যালগোরিদম স্টাডি করার হাতিয়ার, যা মেশিনকে সমস্যা সমাধানের এবং শব্দ ও ছবির বিভিন্ন উপাদানকে চেনার ক্ষমতা দেয়, এবং AI পরিসংখ্যানগত অনুমানের ওপরে নির্ভর করে নির্দিষ্ট ভবিষ্যৎবাণী করতে পারে। যখন মেডিসিনের দুনিয়ায় আসে তখন এটা রোগীদের রেকর্ড থেকে (এখানে মনে রাখতে হবে, ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ডাক্তারবাবুরা যেভাবে প্রেসক্রিপসশন করেন একেবারেই সেভাবে নয়, পাঁচতারা প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকের সাজিয়ে গুছিয়ে পরিপাটি করে রাখা electronic medical records (EMR)-এর মতো), স্ক্যান রিপোর্ট বা সার্জিকাল ভিডিও থেকে সুপ্রচুর তথ্য (ডেটা) রিভিউ করতে পারে এবং সে তথ্যকে রোগনির্ণয়, রোগের শ্রেণীবিভাগ ভবিষ্যৎ দিশা সম্পর্কে অবহিত করার কাজে ব্যবহার করতে পারে।” বাস্তুবে AI দাঁড়িয়ে আছে ৪টি মূল ভিত বা subfield-এর ওপরে – (১) মেশিন লার্নিং তথা মেশিনকে শেখা, (২) মানব মস্তিষ্কের অতি জটিল ও রহস্যময় নিউরাল নেটওয়ার্ককে কৃত্রিমভাবে তৈরি করে নেওয়া, (৩) আমরা যে স্বাভাবিক ভাষায় কথাবার্তা চালাই (ন্যাচারাল ল্যাঙ্গোয়েজ প্রোসেসিং বা NLP) তাকে যান্ত্রিক ভাবে কার্যকরী করা, এবং (৪) এ সমস্তকিছুকে কম্পিউটার ভার্সনে নিয়ে আসা।
(সার্জারিতে AI-এর ব্যবহারের নানা দিক)
AI কী? আরও কথা
এবার গোড়ার প্রশ্নে আসি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি? এ বিষয়টি নিয়ে জনমানসে এবং বাজারি গুজবে চালু নানারকম কথা রয়েছে। সেসব বাদ দিয়ে বিজ্ঞানের চোখ দিয়ে বোঝা যাক বিষয়টিকে। তার আগে পরপর কয়েকটি ডায়াগ্রামের সাহায্যে বোঝার চেষ্টা করি সময়ের সাথে যন্ত্রের তথ্যধারণ ক্ষমতা কিভাবে বেড়েছে। এবং এই তথ্যধারণ ক্ষমতার বৃদ্ধির সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা AI-এর বাস্তবের কার্যকলাপ এবং কার্যকারিতা।
যন্ত্রের এরকম বিপুল তথ্যধারণের ক্ষমতার সাথে যুক্ত হয়েছে “simulation of human intelligence processes”। অর্থাৎ মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে যন্ত্র অনুসরণ, অনুকরণ এবং কৃত্রিমভাবে জন্ম দিতে পারে – উন্নততর ‘মেশিন লার্নিং’। এর জন্য প্রয়োজন বিশেষভাবে তৈরি করা কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ (hardware) এবং একে লেখার ও যন্ত্রকে শিক্ষিত করার আরেক যন্ত্রাংশ (software)। AI পদ্ধতি ও কৃৎকৌশল কাজ করে অমেয় পরিমাণ তথ্যকে (যেগুলোকে আগে থেকেই লেবেল করা ট্রেইনিং করা হয়েছে) গিলে ফেলে। এরপরে এই তথ্যরাজিকে বিশ্লেষণ করা হয় পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণের কাজে এবং এত ব্যাপ্ত তথ্যের মাঝে কি প্যাটার্ন আছে সেট খুঁজে বের করতে। পরবর্তী ধাপ হল, আগামীতে কি অবস্থার জন্ম হতে পারে সে ব্যাপারে আগাম ভবিষ্যৎবাণী করা। যন্ত্র ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সাথে সাথে আরও অনেক নতুন তথ্য জমা হয়, যন্ত্রে দেওয়া হয়, যন্ত্র গিলে নেয়। সবমিলিয়ে এমন একটা পরিবেশ তৈরি হয় যখন যন্ত্র মানুষের কাজ করতে পারে। কখনো কখনো মানুষের আগে ভেবে নিতে পারে যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘ডিপ লার্নিং’।
১৯৫০ থেকে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা চিন্তা করেছেন মানুষের মস্তিস্কের ভেতরে যে লক্ষ লক্ষ স্নায়ুতন্ত্রের পরিবাহী নিউরোন রয়েছে এবং এরা নিজেদের মধ্যে কিভাবে বিভিন্ন সিগন্যালের আদানপ্রদান করে সেটা ভালোভাবে বুঝতে। যখন মানুষ কাঁদে বা ক্রোধান্বিত হয় বা উত্তেজিত হয় তখন কি ধরনের সিগন্যালের তৈরি হয় বিজ্ঞানীরা এ কাজটি যথেষ্ট সফলতার সঙ্গে আয়ত্ব করেছেন। এ শিক্ষাকে ব্যবহার করে মোটের ওপরে ১৯৮০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা একে ‘মেশিন লার্নিং’-এর কাজে লাগিয়েছেন। এর পরের ধাপ, মোটের ওপরে ২০১১ থেকে ২০২০-র দশক অব্দি, ‘ডিপ লার্নিং’-এর পর্যায়। এখানে বলার কথা, ‘ডিপ লার্নিং’-এর ক্ষেত্রে algorithm-এর ওপরে নির্ভর করা হয়। এবং আজকের AI-এর যে বিস্ফোরণ ঘটেছে তার ভিত্তিতে আছে ‘ডিপ লার্নিং’ এবং algorithm। এসবের সম্মিলিত পরিণতি আজকের ‘generative AI’-এর সর্বব্যাপী উপস্থিতি, ব্যবহার এবং জনমানসের বিপুল উদ্দীপনা একে নিয়ে। ‘Generative AI’ যেসমস্ত তথ্য বা ডেটা ইতমধ্যেই মজুত সেগুলো পূর্ণত নিয়ে নেয়, তার থেকে শিখে নেয় এবং পরবর্তীতে সমধর্মী ডেটা তৈরি করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রয়োজন-ভিত্তিক টেক্সট তৈরি করে – ছবি, বক্তব্য ভিডিও এবং নতুন কম্পিউটার কোডও ক্রমাগত সৃষ্টি করে যেতে পারে, অবিরাম ও নিরন্তরভাবে। এবং এগুলোকে আমাদের বোধগম্য ভাষায় বা প্রক্রিয়ায় আমাদের কাছে (আপামর জনতা অবশ্যই নয়, শুধুমাত্র প্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের কাছে) একেবারে সহজভাবে বোধের অঞ্চলের মধ্যে নিয়ে আসতে পারে।
(নিউরাল নেটওয়ার্কের ডায়গ্রাম)
(কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক)
(মেশিন লার্নিং-এর ডায়াগ্রাম – ‘ডিপ’ নিউরাল নেটওয়ার্ক)
(‘ডিপ লার্নিং’-এর নেটওয়ার্ক – স্নায়ুতন্ত্র নির্ভর)
(এ ডায়াগ্রাম থেকেই সবকিছু বুঝে নেওয়া যাবে)
মেডিসিন এবং AI
আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে, ১৯৫৬ সালে, ‘AI’-এর ব্যবহার (যদিও এর ভ্রূণরূপে) শুরু হয়। জন মাককার্থি ডার্টমুথ কনফারেন্সে প্রথম শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেন। ১৯৫৯ সালে আর্থার সামুয়েল ‘মেশিন লার্নিং’ শব্দবন্ধ প্রথম ব্যবহার করেন। যাহোক, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ১৯৫০-এর দশকের শুরুতে ব্রিটিশ সার্জন এফ টি দে ডোম্বাল এবং তাঁর লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের কলিগরা সেসময়ে AAPHelp নামের একটি কম্পিউটার-নির্ভর প্রোগ্রাম ব্যবহার করেন। “In 1959, Robert Ledley and Lee Lusted published a landmark paper in Science describing a Bayesian framework for medical diagnosis.” (“Mind the Gap — Machine Learning, Dataset Shift, and History in the Age of Clinical Algorithms”, নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন, জানুয়ারি ২৫, ২০২৪, পৃঃ ২৯৩-২৯৫) এ ইংরেজিকে উপযুক্ত বাংলায় নিয়ে আসা দুঃসাধ্য বলে উদ্ধৃতি ইংরেজিতেই রেখে দেওয়া হল।
এদের এই পেপারে মেডিসিনের তথা শিক্ষিত অবিশেষজ্ঞ মানুষের জন্য এক চমকপ্রদ তথ্য উঠে আসে। হঠাৎ করে মারাত্মক পেটব্যথা (“অ্যাকিউট অ্যাবডোমেন”) শুরু হয়েছে এরকম কয়েক হাজার রোগীর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ক্লিনিকাল উপসর্গের ওপরে ভিত্তি করে এসব তথ্য জমা করা হয় – যেমন, ব্যথার তীব্রতা, কোথায় ব্যাথা হচ্ছে, কি চরিত্রের ব্যথা ইত্যাদি। এর সঙ্গে চিকিৎসক যা খুঁজে পেয়েছেন, যাকে sign বলা হয়, সেগুলোকে (যেমন নাড়ীর স্পন্দনের দ্রুততা বা পেট শক্ত হয়ে আছে কিনা ইত্যাদি) মেলানো হয়। এরপরে কম্পিউটার সিস্টেমে দিয়ে কোন ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে এ উপসর্গ হবার সম্ভাবনা বেশি সেটা বোঝার চেষ্টা চলে। কমপিউটার থেকে algorithm প্রায় ৩০০ রোগীর (যারা General Infirmary-তে ১৯৭১ সালে উপসর্গ নিয়ে এসেছিল) ওপরে পরীক্ষা করা হয়। এ পরীক্ষাতে চমকপ্রদ ফলাফল দেখা যায় – AAPHelp-এর সাহায্যে ৯১.৮% ক্ষেত্রে ডায়াগনোসিসে সাফল্য এসেছে। এ সাফল্য অভিজ্ঞ, সিনিয়র ক্লিনিশিয়ানদের ডায়াগনোসিস করা সাফল্যের হারের থেকে অনেকটাই বেশি।
এ সাফল্যে প্রায় ভাসতে ভাসতে প্রকৃত বিজ্ঞানীর মতো এরা অন্য সেন্টারে একইভাবে পরীক্ষা করতে চাইলেন। ১৯৭৬ সালে কোপেনহেগেনের একটি বৃহৎ হাসপাতালে এঁরা রোগীদের ওপরে AAPHelp-এর সাহায্যে পরীক্ষা চালান। সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে এবং ‘ফ্রেশ ক্লিনিকাল সেটিং’-এ নতুন পরীক্ষার ফলাফলও সমান চমকপ্রদ ছিল – মাত্র ৬৫% ক্ষেত্রে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়। কারণ? কম্পিউটারের সফটওয়াড় বা হার্ডওয়ারের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা ছিলনা। যে সমস্যাগুলো ছিল সেগুলো পরপর সাজালে এরকম – (১) দু’দেশের রোগীদের বিশিষ্টতার পার্থক্য, ফলে mismatch হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইংল্যান্ড এবং ডেনমার্কের জনসমষ্টির মাঝে প্যানক্রিয়াটাইটিসের প্রাদুর্ভাবের পার্থক্য রয়েছে, মদ্যপানের পরিমাণের পার্থক্যের জন্য। (২) দুটি হাসপাতালে “অ্যাকিউট অ্যাবডোমেন”-কে আলাদাভাবে শ্রেণীবিভাগ করা হয়। (৩) লিডসের হাসপাতালের ডেটাসেট পেটে হঠাৎ ব্যথার কারণ হিসেবে মেয়েদের স্যালপিঞ্জাইটিস (salpingitis) বা মূত্রনালীতে পাথরকে হিসেবের মধ্যে রাখেনি। (৪) সূক্ষ্ম সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত পৃথকতাও রোগের উপস্থাপনার ক্ষেত্রে পার্থক্য তৈরি করে।
কিন্তু লিডস-এর ডেটাসেটের তথাকথিত ‘ব্যর্থতা’ AI-এর উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি করল, যাতে সবচেয়ে বেশি সাফল্যের পূর্বাভাস দেওয়া যায়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল, রোগীর সাংস্কৃতিক বিশিষ্টতা এবং demography-র পার্থক্য। এ সমস্ত ডেটা অর্থাৎ আঞ্চলিক প্রভেদ, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য যত বেশি করে কম্পিউটারে দেওয়া যাবে তত বেশি যান্ত্রিক ভবিষ্যৎবাণী নির্ভুল হয়ে উঠবে। আরও অধিক পরিমাণে এবং আরও অনেক তথ্যের সমাহারে সমৃদ্ধ AI একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের চেয়ে বেশি নির্ভুল হয়ে রোগের ডায়াগনোসিসের ক্ষেত্রে। সেই হিপোক্রেটিসের সময় থেকে (আমাদের এখানে আয়ুর্বেদ তথা চরক-সংহিতার সময়কাল থেকে) চিকিৎসকদের যে প্রশ্নটি বারেবারে উত্যক্ত করেছে তা হল, কিছুসংখ্যক রোগীর থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ভিন্ন ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে উপযুক্তভাবে প্রয়োগ করা যায় কিনা। এজন্য প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্রের ক্ষেত্রে “personalized medicine”-এর পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে – প্রতিটি রোগীর জন্য আলাদা চিকিৎসাপত্র লিখে। একবিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে অপরিমেয় তথ্যের সমাহারে জন্ম নিচ্ছে “precision medicine” বা “personalized medicine”।
একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি ভালোভাবে বোঝা যেতে পারে। একই ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রোটোকল মেনে একই চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগ করা হল। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে ভিন্ন ফলাফল দিল। চিকিৎসকেরা উদ্বিগ্ন হবেন, কেন এরকম পার্থক্য? এখানে জিনগত ভিন্নতার প্রশ্ন, জাতিগত ভিন্নতা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রভেদ এবং আরও অনেক দেহগত ও পারিপার্শ্বিকতার উপাদান নিয়ে ভাবতে হবে। কে সাহায্য করবে? এরকম এক সংকটক্ষণে AI পরিত্রাতা হয়ে উঠতে পারে। কারণ সমস্তরকমের বিপুল তথ্যসম্ভার মেশিন তথা কম্পিউটার এর তথ্যভাণ্ডারে ঢুকিয়ে নিয়েছে। ফলে অসম্ভব দ্রুত, কম সময়ের মধ্যে মস্তিষ্কের নিউরনের মতো সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি প্রয়োজনীয় সমাধানের পথ দেখাতে পারে।
কিন্তু এখানে একটি গভীর প্রশ্ন তুলেছেন চিন্তাশীল চিকিৎসক, মানবতাবাদী এবং বৈজ্ঞানিক মহল। তাঁদের বক্তব্য – “As humanists have shown, clinical data are formed, not found. Decisions such as what clinical
measures to capture and which patient populations to include in datasets are shaped by historical factors, including racial attitudes about whose data are worth collecting, power relations affecting whose data can be easily collected, data-collection practices, culturally specific disease and demographic categories, and burdens of disease.” (“Mind the Gap — Machine Learning, Dataset Shift, and History in the Age of Clinical Algorithms,” New England Journal of Medicine, January 25, 2024, পৃঃ ২৯৫)
এর সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নও গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। AI শিক্ষা এবং এবং বিশেষ ধরনের যন্ত্র সম্বন্ধে জ্ঞান বাণিজ্যিক প্রশ্নের সাথে যুক্ত। AI-এর পেছনে যে টেকনোলজি কাজ করে সেগুলো অতি কমসময়ের মধ্যে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। প্রচুর অর্থের বিনিয়োগ ছাড়া এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব নয়। পরিণতি? মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশের মানুষেরা কি করবে? অন্য একটি উদাহরণ দিই। অধুনা গবেষকেরা দেখিয়েছেন, আফ্রিকার যে দেশগুলোতে এবোলা (Ebola) এরকম মারনান্তক চেহারা নিল সে দেশগুলোতে IMF এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংক-এর চাপে জনস্বাস্থ্যখাতে ক্রমশ খরচা কমিয়ে প্রযুক্তি নির্ভর (যে প্রযুক্তি যেমন সিটি স্ক্যানার বা MRI কিনতে হয় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে) স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকে পড়তে বাধ্য হয়েছে। ফলে এবোলা যখন মহামারির চেহারা নিয়েছে তার সাথে মোকাবিলা করার মতো কোনরকম পরিকাঠামো এ দেশগুলোতে ছিল না।
মেডিসিনের জগতটি অন্য যেসব ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ হচ্ছে তার থেকে ভিন্ন – “Medicine is much different from other areas where AI is being applied. AI enables new discoveries and improved processes in the entire health care continuum; ethical, governance, and regulatory considerations are critical in the design, implementation, and integration of every component of the AI applications and systems.” (সম্পাদকীয়, “Artificial Intelligence in Medicine,” NEJM, 23 March, 2023, পৃঃ ১২২১)
তাহলে শুধু মেডিসিনে AI-এর সফল প্রয়োগ দিয়ে এর সামগ্রিক বিচার করা যাবেনা। এর সঙ্গে বাণিজ্যিক, নৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্নমুখী বিষয় গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। একবিংশ শতকে এর সর্বব্যাপী ব্যবহার কোন “Pandora’s Box” খুলে দিচ্ছে না তো? দেরিদা যেমন দেখিয়েছেন ‘pharmacon’ শব্দটিকে অমৃত এবং বিষ, উভয় অর্থেই ব্যবহার করা যায়, সেরকমই AI মানুষের জীবনে দুটি অর্থই বহন করে। যদি আমরা নিজেদের জীবনের গঠন কেমন হবে এটা নির্ধারণ না করি তাহলে দানব-সদৃশ বহুজাতিক কোম্পানি আমাদের জীবনকে গড়েপিটে নেবে। ল্যান্সেট-এর একটি প্রবন্ধে (“AI in medicine: creating a safe and equitable future,” আগস্ট ১২, ২০২৩) বলা হয়েছে – “Above all, the medical community must amplify the urgent call for stringent regulation.”
নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ টমাস ফ্রিডম্যান একটি প্রবন্ধে প্রাঞ্জলভাবে প্রশ্নটি রেখেছেন আরেকভাবে (“We Are Opening the Lids on Two Giant Pandora’s Boxes,” মে ২, ২০২৩) – “as we lift the lids simultaneously, is: What kind of regulations and ethics must we put in place to manage what comes screaming out? … So there is an urgent imperative — both ethical and regulatory — that these artificial intelligence technologies should only be used to complement and elevate what makes us uniquely human: our creativity, our curiosity and, at our best, our capacity for hope, ethics, empathy, grit and collaborating with others”।
কিন্তু কর্পোরেট-শাসিত রাষ্ট্রের চাপে আদৌ এ কাজ করা সম্ভব হবে কী? ভবিষ্যৎ এর উত্তর দেবে।
Wonderfully informative writeup. Would love to get more such articles
Well researched and thought provoking. 👌
ঠিক লিখেছেন স্যার। এই ব্যাপারটা নিয়ে বেসু-র অজয় বাবু কাজ করছেন। আমি একটা সেমিনার শুনেছিলাম। নিয়ন্ত্রিত ও সুরক্ষিত প্রয়োগে গরিব দেশের তথা আমাদের মতো সুবিশাল দেশগুলোর ক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে। কিন্তু, বাজারেরে রুধিবে কে!
অসাধারণ একটি তথ্যমূলক নিবন্ধ। সমসাময়িক অনেক প্রশ্নের সহজ ব্যখ্যা। ধন্যবাদ, আরো লেখা আশা করছি পাবো।
Excellent sir🙏🏼