NBTC-র নিয়ম অনুযায়ী, যেকোনো medically fit (for blood donation) ব্যক্তি যদি কোনো ব্লাড ব্যাঙ্কের office hours-এ গিয়ে যদি রক্তদান করতে চান, তাহলে ব্লাড ব্যাঙ্ক তাঁকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে না।
কাজেই, ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং তাতে রক্ত গ্রহণ দিনের যে সময়ে চালু থাকে, এমন দিনে এবং সময়ে গিয়ে নিয়ম মেনে রক্তদান করাই যায়।
একজন মানুষ ব্লাড ব্যাঙ্কে যাওয়ার পরে নিজস্ব তথ্য blood donation consent form-এ জানানো, তিনি সেই সময় রক্তদান করতে পারবেন কি না তার জন্য হওয়া বিভিন্ন পরীক্ষা এবং রক্তদান ইত্যাদি প্রক্রিয়াগুলো করতে সবমিলিয়ে ২৫ মিনিটের বেশী সময় লাগে না। এবার রক্তদান করার যে বিশেষ চেয়ার বা বেড থাকে সেগুলি সংখ্যায় একাধিক হলে একসাথে একাধিক মানুষের রক্ত নেওয়া সম্ভব।
কাজেই, দশ জন বন্ধু মিলে আপনি যদি নিকটস্থ ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে রক্তদান করতে চান তাহলে সেটা সহজেই করা যায়। প্রয়োজন সদিচ্ছার।
কিন্তু, আপনি যদি আপনার চেনাশোনা একশত জন মানুষকে নিয়ে একসাথে একদিনে এবং একই সময়ে সেখানে গিয়ে রক্তদান করতে চান, তাহলে সেক্ষেত্রে ব্লাড ব্যাঙ্কের অন্যান্য দৈনন্দিন কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু দিনের বিভিন্ন সময়ে (সকাল, দুপুর, বিকাল ইত্যাদি) ভাগে ভাগে গেলে সেই ক্ষেত্রে এটাও করা সম্ভব। তবে বহু সংখ্যক মানুষ একসাথে গেলে সেক্ষেত্রে ব্লাড ব্যাঙ্কে জানিয়ে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়।
বিশেষত ছুটির দিন বাদে অন্যদিনে ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তদান করলেই সেটা বেশী ভালো। ছুটির দিনে অধিকাংশ রক্তদান শিবির অনুষ্ঠিত হয়, তাই সেই দিনে আরেকটি দল ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তদান করতে গেলে সেটা তাদের জন্য বাড়তি চাপের সৃষ্টি করতে পারে।
? ব্লাড ব্যাঙ্কেই রক্তদান শিবির আয়োজন বা in-house blood donation camp করার পদ্ধতি কী?
১) প্রথমে সম্ভাব্য রক্তদাতাদের একটি তালিকা প্রস্তুত করবেন, এবং তাদের নাম এবং স্বাক্ষর সেখানে থাকবে।
২) এরপর ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা বা মেডিক্যাল অফিসার অথবা কোনো চিকিৎসাকেন্দ্রের নিজস্ব ব্লাড ব্যাঙ্ক হলে তার অধিকর্তাকে একটি চিঠি লিখতে হবে যেখানে এই তথ্যগুলো অবশ্যই জানাতে হবে –
ক) কতজন রক্তদাতা আসবেন,
খ) কবে এবং কতক্ষণ ধরে তাঁরা আসবেন (একাধিক তারিখের প্রস্তাব দেবেন কারণ একটি নির্দিষ্ট তারিখে সেই ব্লাড ব্যাঙ্কের অন্য কাজ থাকতেও পারে, এমনকি অন্য কেউ সেই একই দিনে রক্তদান শিবিরের প্রস্তাব এর আগেই দিয়ে থাকতে পারে)।
৩) এই চিঠিটি লিখে ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সাথে সাক্ষাৎ করে তারিখটি ঠিক করে নিতে হবে, যাতে রক্তদাতা এবং ব্লাড ব্যাঙ্ক দুই তরফেরই কোনো অসুবিধা না হয়। আর তাদের তরফে এই চিঠিটি একটি প্রাপ্তিস্বীকার করে তারা আপনাদের দিয়ে রাখবেন।
৪) নির্দিষ্ট দিনে এবং যে যার নির্দিষ্ট সময়ে ঐ ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে রক্তদান করবেন।
৫) রক্তদান করার পরে রক্তদাতাকে সেই দিন সেই সময়ে সেই স্থানে রক্তদানের স্বীকৃতি স্বরূপ একটি Acknowledgement Card ব্লাড ব্যাঙ্কের তরফে দেওয়া হয়।
৬) অনেক ব্লাড ব্যাঙ্ক সেই ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তদান করলে রক্তদাতাকে একটি Blood Donor’s Credit Card (BDCC) দিয়ে থাকে, যেটি রক্তদাতা পরে সেই ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত কেনার সময়ে ব্যবহার করলে তার মূল্যে একটা টাকা ছাড় পান। রক্তদান শিবির আয়োজনের সময় এই ব্যাপারে লিখিত ভাবে জেনে নেবেন যে তাঁরা এই ব্লাড ডোনার ক্রেডিট কার্ড দেন কি না, আর দিলে সেটা যেন প্রতিটি রক্তদাতা পান সেটি সুনিশ্চিত করতে হবে। এই ব্লাড ডোনার ক্রেডিট কার্ড রক্তদাতার নিজস্ব নথি এবং আর্থিক মূল্য থাকায় এটি তার নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবেই গণ্য হয়, ফলে এই নিয়ে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা প্রয়োজন। (এই ব্লাড ডোনার ক্রেডিট কার্ড নিয়ে নানারকম দুর্নীতির অভিযোগ আসে যেটা নিয়ে পরে বিশদে আলোচনা করা হবে)।
এই ব্যবস্থায় রক্তদান শিবির আয়োজনের সময় দায়িত্ব ও খরচ ব্লাড ব্যাঙ্ক সরাসরি নিজেই বহন করবে। ফলে রক্তদাতা হিসেবে আপনার দায়িত্ব হলো শুধুমাত্র নিয়ম মেনে রক্তদান করা আর রক্তদানের প্রমাণস্বরূপ নিজস্ব নথি সংগ্রহ করা।
সরকারি চাকরি যারা করেন তারা রক্তদান করলে ছুটি পেতে পারেন, কাজেই সমস্ত নথি থাকলে তাদের পক্ষে ছুটির দিন ছাড়াও যেকোনো দিনেই রক্তদান করা সম্ভব। আর বেসরকারী সংস্থার ক্ষেত্রে এমন আইন না থাকলেও তারা তাদের অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আগে থেকে কথা বলে এইরকম শিবির আয়োজন করলে তাদের ক্ষেত্রেও রক্তদানের জন্য ছুটি পেতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
? নিকটস্থ ব্লাড ব্যাঙ্ক না থাকলে রক্তদান শিবির আয়োজন করার পদ্ধতি কী?
যেসব জায়গায় ব্লাড ব্যাঙ্ক নেই বা ব্লাড ব্যাঙ্ক বেশ দূরে (যেমন পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন গ্রামে), সেই সব অঞ্চলের মানুষের ক্ষেত্রে এই ভাবে রক্তদান করা খুবই কঠিন। তাই এই ক্ষেত্রে সেই অঞ্চলের নিকটস্থ ব্লাড ব্যাঙ্কের সাথে সেই অঞ্চলের কোনো অংশে রক্তদান শিবির করলে রক্তের যোগান বজায় রাখা সম্ভব। অর্থাৎ ব্লাড ব্যাঙ্কের নিজস্ব মেডিক্যাল অফিসার ও কর্মীরা নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে সমস্ত সরঞ্জাম সহ গিয়ে সেই অঞ্চলে রক্ত সংগ্রহ করবেন।
এই ক্ষেত্রেও আয়োজনের পদ্ধতিগুলি in-house blood donation camp-এর মতোই হবে। তবে NBTC-র গাইডলাইন অনুযায়ী সেগুলোর সাথে বাড়তি কয়েকটি বিষয় সুনিশ্চিত করতে হবে।
১) রক্তদান শিবির আয়োজন করার জায়গায়টি পর্যাপ্ত আয়তনের (যাতে প্রয়োজনীয় আলো – বাতাস চলাচল করতে পারে) এবং পরিষ্কার – পরিচ্ছন্ন হতে হবে।
২) সেখানে বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম ব্যবহৃত হলে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৩) রক্তদানের আগে একটি আলাদা জায়গায় counseling-এর ব্যবস্থা রাখতে হবে যে কাউন্সিলিংটা ব্লাড ব্যাঙ্ক করবে।
৪) রক্তদানের আগে রক্তদাতার উপর বিভিন্ন ডাক্তারী পরীক্ষা করার জন্য আলাদা জায়গা রাখতে হবে।
৫) রক্তদাতা এবং কর্মীদের জন্য refreshment এর ব্যবস্থা করতে হবে।
৬) কর্মীদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৭) শিবির থেকে জাত আবর্জনাগুলি সঠিকভাবে ফেলতে হবে।
এছাড়া আরো কয়েকটি বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হবে।
১) ব্লাড ব্যাঙ্কের পক্ষে সবসময় বহুসংখ্যক blood donation-এর উপযোগী couch আনা সম্ভব হয় না। ব্লাড ব্যাঙ্কের তরফে তা আগে থেকে জানানো হলে সেই ক্ষেত্রে স্থানীয় সংস্থা সেটার ব্যবস্থা করতে পারে।
২) Donor refreshment সংক্রান্ত খরচ সরাসরি ব্লাড ব্যাঙ্ক বহন করলেই ভালো। নাহলে এটা নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ আসে।
ব্লাড ব্যাঙ্কে থেকে করা রক্তদান শিবিরে আয়োজকদের সাহায্যের পরিমাণ (NBTC দ্বারা নির্ধারিত) –
কারণ | ব্লাডব্যাঙ্কের তরফ থেকে (৭৫ জন রক্তদাতার জন্য) দেওয়া মোট সাহায্য |
সার্টিফিকেট / ব্যাজ /মেমেন্টো | ৭৫ × ১৫টাকা = ১১২৫টাকা (প্রতি জনে ১৫ টাকা) |
পরিবহন (Transportation) | ১০০০টাকা |
IEC Materials (ব্যানার/ লিফলেট) | ৩৭৫টাকা |
ডোনার রিফ্রেশমেন্ট | ৭৫ × ২৫টাকা = ১৮৭৫টাকা (প্রতি জনে ২৫ টাকা) |
মোট সাহায্যের পরিমাণ = ১১২৫+১০০০+৩৭৫+১৮৭৫ টাকা = ৪৩৭৫ টাকা |
? রক্তদানের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা দরকার।
১) ভারত সরকারের আইন অনুযায়ী রক্তদান করে কোনো উপহার (যার বিক্রয়ে আর্থিক মূল্য আছে) নেওয়া ও দেওয়া, দুটো কাজই বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
২) এছাড়া যিনি এইভাবে টাকার জন্য রক্ত বিক্রি করছেন তিনি নিজের সুস্বাস্থ্যের কথা উপেক্ষা করেই এই কাজটি করেন অর্থাৎ তিনি কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে রক্ত দিতে অক্ষম হলেও টাকার জন্য রক্ত দিয়ে দেবেন। সেই রক্তের গুণমান খারাপ তো হবেই, এছাড়া এটি রোগীর প্রাণসংশয় ঘটাতে পারে।
৩) তাছাড়া, রক্ত বা তার উপাদানের দাম সরকার নির্দিষ্ট মানে ঘোষণা করা আছে, তার সাথে দান করা রক্তের উপর হওয়া বিভিন্ন পরীক্ষার মূল্যও নির্দিষ্ট। অর্থাৎ ব্লাড ব্যাঙ্ক একটি নির্দিষ্ট অর্থের বেশী দামে রক্ত বিক্রি করতে পারে না।
ফলে, যে ব্লাড ব্যাঙ্ক এইভাবে উপহার বা টাকা দিয়ে রক্ত কেনে, তার পক্ষে সেই বাড়তি টাকা উদ্ধার করতে রক্তের প্রক্রিয়াকরণে খরচ কমিয়ে রক্তের গুণমানের সাথে আপস করাই স্বাভাবিক।
এই রচনায় ডা ঋতম চক্রবর্তীর সহায়তা নেওয়া হয়েছে।
(চলবে)
Excellent