তাঁরা সবাই প্রতিবছর আমাদের বাড়িতে আসতেন। মা দুর্গা, কালি, লক্ষ্মী এমনকি উত্তম কুমার। আমাদের যৌথ পরিবারে তাদের নিয়ে কাড়াকাড়ি। কে কাকে ঘরে দেওয়ালে ঝোলাবে। মানে ক্যালেন্ডার আর কী। একেবার ঠাকুর দেবতার ছবি আটকালে সেটা আর খোলা হতো না।পরের বছর তার উপরে আর একজন ঠাকুর। কখনো কখনো তাদের স্থান হতো বই,খাতার মলাটে, কাউকে আবার বাঁধিয়ে রাখা হতো। সে যুগে এত ‘ইন্টেরিয়র ‘ ছিল না ,তাই যেখানে সেখানে ছবি লটকানো কেউ দৃশ্য দূষণ হিসেবে দেখতো না। সেই ক্যালেন্ডার যখন দেওয়াল থেকে সরানো হতো দাগ থেকে যেত।আজকাল জীবনে দাগ ফেলার জিনিস অনেক কমে গেছে।
ছোটবেলায় এরকমই একটা ক্যালেন্ডারের ছবি আমার ভীষণ ভালো লেগেছিল শিব ঠাকুর আর গণেশ। আসলে তখন বাবাদের এত কাছাকাছি পাওয়া যেত না, আর বাবাকে জড়িয়ে ছবি তোলা! ভাবাই যেত না। প্রশ্ন হলো শিবরা কেমন বাবা হয়?
সংসারের সব দায় মায়েদের ওপর, উনি টাকা দিয়ে খালাস। জানে ছেলে ক্লাস নাইনে পড়ে কিন্তু কোন সেকশন ঠিক জানে না, কিন্তু দেখা হলেই বলবে ‘পড়াশোনা ঠিক করছিস তো?’ রোজ সন্ধ্যায় একটু নেশা করে। নন্দী ভৃঙ্গীর মতো পাড়ার কোনো দাদা যদি খবর দেয় ছেলে মেয়ে বদমাইশি করেছে তাহলে পেদিয়ে কৈলাশ দেখিয়ে দেবে। তারপর যখন যখন ঘুমিয়ে পড়বো, অন্ধকার ঘরে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবে। বাবাদের ভালোবাসা দেখা যায় না।
জামা কাপড়ের দিকে বিশেষ ভ্রক্ষেপ নেই। গেঞ্জি আর ধুতি পরেই কাটিয়ে দেয়, যতক্ষণ না মা গেঞ্জিটাকে ঘর মোছা করে, আর ধুতি দিয়ে বাসন কেনে। রোজের সমস্যায় বাবাকে পাওয়া যায় না, কিন্তু বড়ো কোনো প্রবলেম হলে বাবা পার করেগা। সংসারের যাবতীয় ঝড়ঝাপটা একা একা চুপচাপ সামলায়, কারোর গায়ে কোনো আঁচ লাগতে দেবে না। সব বাবারাই নীলকন্ঠ।