রক্তাল্পতা মানে রক্তের অল্পতা। এনিমিয়া (anemia) হল রক্তাল্পতার ডাক্তারী নাম। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা দিয়ে রক্তের অল্পতা মাপা হয়।
রক্তাল্পতা আমাদের দেশের এক বড় স্বাস্থ্য সমস্যা, যে সমস্যাকে প্রতিরোধ করা যায়। আর বিরাট মাপের ওষুধের ব্যবসা চলে এ রোগকে ঘিরে। তাই রক্তাল্পতা সম্বন্ধে আমাদের ধারণা পরিষ্কার না করলেই নয়।
রক্তের কাজ
আমাদের শরীরে রক্তের কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রক্তের প্রধান দুটো অংশ—তরল রক্তরস (plasma) আর রক্তরসে ভেসে বেড়ানো রক্তকণিকা। রক্তকণিকা আবার তিন ধরনের—লাল রক্ত কণিকা (Red Blood Cells বা RBC), সাদা রক্ত কণিকা (White Blood Cells বা WBC) আর অণুচক্রিকা (Platelets)।
অন্য সব কণিকার চেয়ে রক্তে অনেক বেশী মাত্রায় থাকে লাল রক্ত কণিকা, তাই রক্তের রঙ লাল। লাল রক্ত কণিকার লাল রঙ আসে হিমোগ্লোবিন থেকে। হিমোগ্লোবিন লোহা আর প্রোটিনের যৌগ।
হিমোগ্লোবিন ফুসফুস থেকে অক্সিজেনকে কোষে বয়ে নিয়ে যায়। কোষে অক্সিজেন খাবারকে জ্বালিয়ে শক্তি উৎপাদন করে। খাবারকে জ্বালানোর সময় যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরী হয়, তাকেও হিমোগ্লোবিন কোষ থেকে বয়ে ফুসফুসে নিয়ে আসে বাইরে বের করে দেওয়ার জন্য। কোন কারণে শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হলে রক্তের অক্সিজেন বয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা কমে যায়, শরীরের কোষগুলোতে অক্সিজেন কম পৌঁছয়। অক্সিজেনের অভাব হলে খাবার কম পোড়ে, ফলে বেঁচে থাকার জন্য জরুরী শক্তিতে ঘাটতি পড়ে।
আসলে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতিকেই রক্তাল্পতা বলে।
আলোচনা যখন শুরুই করেছি তখন রক্তের অন্য উপাদানগুলোর কাজও জেনে নেওয়া যাক।
সাদা রক্ত কণিকার কাজ মূলত রোগ-জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করে শরীরকে রোগ থেকে রক্ষা করা।
শরীরের কোন জায়গায় কেটে গেলে কিছুক্ষণ বাদে রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। রক্ত জমাট বাঁধানোর কাজে বড় ভূমিকা পালন করে প্লেটলেট।
রক্তরসে থাকে জল, খনিজ পদার্থ আর কয়েক ধরনের প্রোটিন। এক ধরনের প্রোটিন শরীরের সব কোষে খাদ্য বস্তু পৌঁছায়, কোষ থেকে বর্জ্য পদার্থ নিকাশী ব্যবস্থায় নিয়ে আসে। আরেক ধরনের প্রোটিন রোগ প্রতিরোধের কাজ করে। আর কিছু প্রোটিন প্লেটলেটের সঙ্গে মিলে রক্ত জমাট বাঁধানোর কাজে অংশ নেয়।
রক্তকণা কোথায় তৈরী হয়?
গর্ভাবস্থার প্রথম পাঁচ মাস ভ্রূণের যকৃৎ (liver) ও প্লীহা (spleen)-য় রক্ত কণিকা তৈরী হয়। তারপর থেকে অস্থিমজ্জায় রক্ত কণিকা তৈরী হতে থাকে। জন্মের পর কেবল অস্থিমজ্জাতেই রক্তকণিকা তৈরী হয়।
রক্তাল্পতা হয় কেন?
লাল রক্ত কণিকা উৎপাদনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল লোহা আর প্রোটিন, এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক এসিড, ভিটামিন বি ১২ এবং ভিটামিন সি-রও প্রয়োজন।
একটা স্বাভাবিক লাল রক্ত কণিকার গড় আয়ু ১২০ দিন। আয়ু শেষে ধ্বংসপ্রাপ্ত লাল রক্ত কণিকার লোহার সিংহ ভাগ নতুন লাল কণিকা তৈরীর কাজে লাগে।
মোটামুটি তিন ধরনের কারণে বেশিরভাগ রক্তাল্পতা হয় বা হতে পারে।
১। শরীর থেকে রক্তপাত—রক্তপাত অনেক দিন ধরে অল্প-অল্প করে হতে পারে অথবা হঠাৎ একসঙ্গে অনেকটা হতে পারে। আঘাতের ফলে রক্তক্ষরণ, অর্শ, অংকুশ কৃমি-সংক্রমণ, মহিলাদের মাসিকের সময় রক্তপাত হল এ ধরনের কারণ।
২। লাল রক্ত কণিকা উৎপাদনে ব্যাঘাত—লোহা, ফলিক এসিড, ভিটামিন বি ১২, প্রোটিন, ইত্যাদি প্রয়োজনীয় উপাদানের অভাবে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। কিছু রোগ, এমনকি কিছু ওষুধের ক্ষতিকর প্রভাবেও ব্যাঘাত ঘটে।
৩। স্বাভাবিক আয়ুর আগে লাল রক্ত কণিকা ধ্বংস হয়ে যাওয়া—এমনটা ঘটে স্ফেরোসাইটোসিস (spherocytosis), সিকল সেল এনিমিয়া (sickle cell anemia), থ্যালাসেমিয়া (thalassemia) ইত্যাদি রোগে।
লোহার অভাবে রক্তাল্পতা (Iron Deficiency Anemia)
আমাদের দেশে রক্তাল্পতা হয় ৯০% ক্ষেত্রে লোহার অভাবে। তাই এই ধরনের রক্তাল্পতা নিয়ে বিশদে জানা দরকার।
সুষম খাদ্য পেলে লোহার অভাব হওয়ার কথাই নয়। টাটকা শাক-সব্জি, মোচা, কাঁচকলা, ইত্যাদিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে লোহা থাকে। খাবারে উপস্থিত লোহার প্রায় ১০% শরীরে শোষিত হয়। আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশ ডিওডেনাম থেকেই প্রধানত লোহা রক্তে শোষিত হয়। কমলার রস, মাছ, মাংস, ইত্যাদি কিছু খাবার লোহার শোষণে সাহায্য করে। আবার ভূষি, ডিম, চা, কিছু শাক-সব্জি, দুধ, ইত্যাদি লোহার শোষণ ভাল ভাবে হতে দেয় না।
একজন সুস্থ পূর্ণবয়স্ক পুরুষের দৈনিক লোহার প্রয়োজন ১-২ মিলিগ্রাম অর্থাৎ তার খাবারে ১০-২০ মিলিগ্রাম লোহা থাকলেই চলে।
ছোটোবেলায় ও বয়ঃসন্ধির সময় শরীর দ্রুত হারে বাড়ে, এ সময়ে লোহার চাহিদাও বেশী।
মাসিক ঋতুস্রাবের সময় মহিলারা দিনে প্রায় ৫ মিলিগ্রাম লোহা হারান, মাসে গড়ে এ বাবদ লোহা যায় ৩০ মিলিগ্রাম। তাই প্রতিদিন মহিলাদের দরকার পুরুষদের তুলনায় ১ মিলিগ্রাম অতিরিক্ত লোহা অর্থাৎ খাবারে ১০ মিলিগ্রাম অতিরিক্ত লোহা।
গর্ভাবস্থায় ও বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর প্রথম মাসগুলোতে মাসিক বন্ধ থাকে, কিন্তু সেই সময়েও লোহার প্রয়োজন পুরুষদের তুলনায় বেশী। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের দৈনিক প্রয়োজন গড়ে ৩.৮ মিলিগ্রাম লোহা আর বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় দৈনিক ২.৮ মিলিগ্রাম লোহা। এই সময়গুলোতে পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবে মহিলারা রক্তাল্পতায় আক্রান্ত হন।
আমাদের শরীরে রক্তের হিমোগ্লোবিন ছাড়াও লোহা থাকে মাংসপেশীতে, উৎসেচকে আর যকৃৎ ও অন্য কিছু ভাঁড়ারে। মহিলাদের শরীরে লোহার সঞ্চয় থাকে পুরুষের সঞ্চয়ের ৩ ভাগের ১ ভাগ।
লোহার ঘাটতি হলে প্রথমে শরীরের লোহার সঞ্চয় কমে, তারপর কম লোহাযুক্ত লাল রক্তকণিকা তৈরী হতে থাকে, আরও লোহার ঘাটতি হলে লোহার অভাব জনিত রক্তাল্পতা হয়।
লোহার ঘাটতির প্রভাব যে কেবল লাল রক্ত কণিকার ওপরই পড়ে এমন নয়, লোহার ঘাটতিতে শিশুদের আচার-আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, শেখার সমস্যা হয়, সম্ভবত শরীরে তাপ উৎপাদনেও সমস্যা হয়।
আমাদের দেশে লোহার অভাব জনিত রক্তাল্পতা হয় এসব কারণে—
• অংকুশ কৃমি সংক্রমণ
• গর্ভাবস্থা ও একই মায়ের বারবার বাচ্চা হওয়া
• অপুষ্টি
• মাসিকের সঙ্গে বেশী রক্ত যাওয়া
• খাদ্যনালী থেকে রক্তপাত (যেমন পেপটিক আলসার, অর্শ, ইত্যাদিতে)।
অনেকের ক্ষেত্রে অবশ্য একাধিক কারণ একসাথে থাকতে পারে।
রক্তাল্পতা চিনবেন কেমন করে?
• ফ্যাকাসে ভাব, অনেক সময় একটু হলদেটে, জন্ডিস বলে ভুল হতে পারে।
• ক্লান্তি, ঘুমঘুম ভাব।
• শ্বাসকষ্ট, কাজ করলে শ্বাসকষ্ট বাড়ে। (কেন না শরীরে অক্সিজেনের যোগান দিতে ফুসফুসকে বেশী কাজ করতে হয়।)
• বুক ধড়ফড় করে, পরিশ্রমে বুক-ধড়ফড়ানি আরও বাড়ে। (কেন না একই ভাবে হৃদয়কেও বেশী কাজ করতে হয়।)
• হৃদয় তার স্বাভাবিক কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায় না বলে বুকের বাঁ দিকে ব্যথা হতে পারে, যেমনটা হয় হার্ট এটাকে।
• মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কম হওয়ায় মাথা ঘোরে, শোয়াবসা থেকে উঠে দাঁড়ালে চোখে অন্ধকার দেখায়।
• অনেকের মুখের কোণে ও জিভে ঘা হয়, খাবার গিলতে কষ্ট হয়।
• দীর্ঘ দিনের রক্তাল্পতায় নখ শুকনো, ভঙ্গুর ও অবতল হতে পারে।
• মানসিক অবসাদও হতে পারে।
• মহিলাদের মাসিকে রক্ত যাওয়ার পরিমাণ কমে যায়, খুব বেশী রক্তাল্পতায় মাসিক বন্ধও হয়ে যেতে পারে।
রক্তাল্পতা মাপার উপায়
হিমোগ্লোবিনোমিটার দিয়ে রক্তের হিমোগ্লোবিন মাপা যায়। মাপা যায় কলরি মিটার বা সেমি অটোএনালাইজেরেও। কিন্তু সে ভাবে মাপার সুযোগ সব সময় কোথায়?
একটা পদ্ধতি শিখে রাখুন। একজন সুস্থ মানুষের চোখের নীচের পাতা নীচে টেনে দেখুন—ভেতরের অংশ গাঢ় লাল। রক্তাল্পতার রোগীর চোখের পাতার ভেতরের অংশ ফ্যাকাসে গোলাপী বা সাদা হবে।
লোহার অভাব জনিত রক্তাল্পতার চিকিৎসা
চিকিৎসা সোজা, তবে কতগুলো বিষয় জেনে রাখা দরকার।
• ওষুধ দেওয়ার আগে রক্তাল্পতার কারণ খুঁজে তার চিকিৎসা করে নেওয়া ভাল। যেমন অর্শ থেকে রক্তপাতের জন্য রক্তাল্পতা হলে যতক্ষণ না অর্শের চিকিৎসা করে রক্তপাত বন্ধ করছেন রক্তাল্পতা ভাল হবে না। আমাদের দেশে লোহার অভাব জনিত রক্তাল্পতার প্রধান কারণ কৃমি সংক্রমণ, তাই চিকিৎসার শুরুতেই সাধারণত কৃমি মারার জন্য এলবেন্ডাজোল ৪০০ মিলিগ্রামের একটা মাত্রা বা মেবেন্ডাজোল ১০০ মিলিগ্রাম করে দিনে দুবার তিনদিন দেওয়া হয়। (অবশ্য মহিলার গর্ভাবস্থায় ও শিশুদের ২ বছর বয়সের নীচে এ দুটো ওষুধ দেওয়া যায় না)।
• রোগীকে লোহা দেওয়া হয় লবণ রূপে—দু ধরনের লবণ—ফেরাস ও ফেরিক। ফেরিক লবণের তুলনায় ফেরাস লবণ তিনগুণ ভাল শোষিত হয়।
• ফেরাস লবণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সস্তা ফেরাস সালফেট (ferrous sulphate)। ফেরাস ফিউমারেট, ফেরাস গ্লুকোনেট, ফেরাস সাকসিনেট দামী, তবে ফেরাস সালফেটের তুলনায় কোন অংশে বেশী কার্যকরী নয়।
• খালি পেটে ওষুধ খাওয়া ভাল। খাবার সঙ্গে বা খাবার পরে খেলে লোহার শোষণ ৩৪-৫০% কমে।
• দিনে ২০০ মিলিগ্রাম লোহা খেলে হিমোগ্লোবিন তৈরীর হার সবচেয়ে ভাল হয়। ফেরাস সালফেটের ২০০ মিলিগ্রাম বড়িতে লোহা থাকে ৬০ মিলিগ্রাম অর্থাৎ দিনে ৩ টে বড়ি খেতে হয়।
• ১৫-৩০ কিলোগ্রাম ওজনের বাচ্চাদের এর অর্ধেক মাত্রা দিতে হয়।
• লোহার মোট দৈনিক মাত্রাকে ৩ থেকে ৪ ভাগে ভাগ করে দিতে পারলে লাল রক্ত কণিকা তৈরীর হার ভাল থাকে। অর্থাৎ বড়দের ২০০ মিলিগ্রাম ফেরাস সালফেটের বড়ি ১ টা করে দিনে ৩ বা ৪ বার দিতে হবে।
• রক্তাল্পতা ঠিক হওয়ার পরেও আরও ৩-৬ মাস ওষুধ খাওয়া উচিত, তাতে শরীরে লোহার সঞ্চয় ঠিক হয়। লোহার সঞ্চয় ঠিক না থাকলে আবার রক্তাল্পতা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
রক্ত তৈরীর নামে
আমরা জানি আমাদের গরীব দেশে রক্তাল্পতা একটা বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। আমরা যেমন জানি তেমনই জানে ওষুধ কোম্পানীগুলোও। তাই তারা নানান নামে নানান রূপে লোহার নানান লবণ দিয়ে বানায় রক্ত তৈরীর ওষুধ।
আমরা যখন ডাক্তারী ছাত্র তখন এক ওষুধ কোম্পানী কমলা লেবুর গন্ধযুক্ত রক্ত তৈরীর একটা ওষুধে ষাঁড়ের হিমোগ্লোবিন মেশাত। ১৯৯৮-এ কেন্দ্রীয় ওষুধ মহানির্দেশক ওষুধে স্বাভাবিক বা কৃত্রিম কোনও রকম হিমোগ্লোবিন মেশানোই নিষিদ্ধ করে দেয়। তাই সে কোম্পানী এখন একই নামে ওষুধ বানায় লোহার এমোনিয়াম সাইট্রেট লবণ দিয়ে।
দুবছর আগে আন্তর্জাতিক সংস্থা হেলথ একশন ইন্টারন্যাশানালের একটা অধ্যয়নে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট মেডিসিনাল ইউনিটের পক্ষে অংশ নিয়েছিলাম আমি। এই অধ্যয়নের লক্ষ্য ছিল ভারতের বাজারে অযৌক্তিক মিশ্রণ ওষুধ কি মাত্রায় উপস্থিত তা খতিয়ে দেখা।
ওষুধের বাণিজ্যিক তালিকা CIMS (Current Index of Medical Specialities)-এর এপ্রিল-জুলাই ২০১০ সংখ্যা তন্নতন্ন করে আমরা কেবল ফেরাস সালফেট আছে এমন কোন রক্ত তৈরীর ওষুধ খুঁজে পাইনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অত্যাবশ্যক ওষুধের তালিকায় মাত্র ২৫টা নির্দিষ্ট মাত্রায় মিশ্রণ ওষুধ (Fixed Dose Combination) স্থান পেয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম লোহার লবণের সঙ্গে ফলিক এসিডের মিশ্রণ। CIMS-এর তালিকায় আমরা ফেরাস সালফেটের সঙ্গে ফলিক এসিডের মিশ্রণ মাত্র দুটো ব্র্যান্ডে খুঁজে পেয়েছিলাম। নামদুটো মনে রাখুন, কাজে লাগতে পারে—
১। GSK-এর Fefol Spansule,
২। Ind-Swift-এর Ferritop-SR।
লোহার অন্যান্য দামী লবণের সঙ্গে কেবল ফলিক এসিড ছিল ৮০টা ব্র্যান্ডে।
আর লোহার লবণের সঙ্গে অন্যান্য উপাদানের অযৌক্তিক মিশ্রণ কটা পেয়েছিলাম জানেন? ১৩২ রকমের মিশ্রণ আর ২১২ টা ব্র্যান্ড।
আগেই বলেছি ১৯৯৮-এ ওষুধে হিমোগ্লোবিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। অথচ এমন ৪টে ব্র্যান্ড পেয়েছিলাম যাতে হিমোগ্লোবিন আছে—Haem Up (Cadila), Haem Up Gems (Cadila), Hemfer (Alkem), Hepp Forte (Lupin)।
রক্তাল্পতার ধরন না জেনে ভিটামিন বি ১২-র একটা মাত্রাও দিতে বারণ করা হয়। কেননা ভিটামিন বি ১২-র অভাব জনিত পার্নিসাস এনিমিয়ায় সারা জীবন চিকিৎসা চালাতে হয়, তাই এ রোগের রোগ-নির্ণয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন বি ১২-র একটা মাত্রা দিলেও রোগ চেনাটা ব্যাহত হতে পারে। অথচ আমরা ২১২টা অযৌক্তিক ব্র্যান্ডের ১৫৬টায় ভিটামিন বি ১২ পেয়েছিলাম।
তাহলে লোহার অভাব জনিত রক্তাল্পতায় কি করণীয়?
ফেরাস সালফেটের বড়ি কিন্তু জেনেরিক নামে ওষুধের পাইকারি বাজারে পাওয়া যায়, দাম ১০০০টার মোটামুটি ৫০ টাকা অর্থাৎ একটা বড়ি ৫ পয়সায়। ফেরাস সালফেট ও ফলিক এসিডের মিশ্রণও পাইকারি বাজারে পাওয়া যায় জেনেরিক নামে, অনেক কম দামে। সরকারী হাসপাতালে আমরা এই সব জেনেরিক নামের ওষুধই পাই। গুণে এগুলো দামী ওষুধের চেয়ে কোনও অংশেই খারাপ নয়।
রক্তাল্পতায় ও রক্তাল্পতা ঠেকাতে খাওয়া-দাওয়া
লোহাজাতীয় পদার্থ বেশী থাকে টাটকা শাক-সব্জি, মোচা, কাঁচকলায়। প্রোটিন পর্যাপ্ত পাওয়া যায়—ছোলা, ডাল, সয়াবীন, মাছ, মাংস, ডিম, দুধে! গরীব মানুষ কোথায় পাবেন এসব।
এসবের ভাল বিকল্প গেঁড়ি-গুগলি, শামুক, ঝিনুকের মাংস।
স্যার অনেক অনেক ধন্যবাদ এই শিক্ষামূলক লেখার জন্য।ভালো থাকবেন।