পায়েল খুবই শান্ত স্বভাবের মেয়ে। খাওয়া দাওয়া নিয়ে কোন সমস্যা নেই আর পড়াশুনোতেও বেশ ভাল। সদ্য শেষ হওয়া মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও সে ভালো রেজাল্ট করেছে। তাই বাবা মা মোটামুটি খুশিই ছিলেন। হঠাৎ করে গত কয়েক মাস ধরে তার আচরণে এক অদ্ভুত পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।তার খাওয়া-দাওয়া অনেকটা কমে গেছে।শাকসবজি ছাড়া অন্য খাবার খেতেই চাইছে না।মাংস দেখলেই যেন আঁতকে উঠছে। সেদিন লোভে পড়ে কয়েকটা চিকেন কাবাব খেয়ে ফেলেছিল।কিন্তু তারপরেই আবার গলায় আঙ্গুল দিয়ে বমি করে সেগুলো বের করার চেষ্টা করেছে। জিজ্ঞেস করলেই বলছে ওইসব ফ্যাটি খাবার খেলে ওজন বেড়ে যাবে। যদিও বাবা-মায়ের কখনো মনে হয়নি যে পায়েলের ওজন বেশি তবুও পায়েলের মনে হচ্ছে তার ওজনটা আরো অনেকটাই কম থাকা দরকার। তাই সে খাওয়াদাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে সারা দিনে চার ঘণ্টা করে বিভিন্ন ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করাও শুরু করেছে। পড়াশুনোর প্রতি নজর ক্রমশ কমছে আর সে শরীরের বিষয়েই সারাদিন চিন্তা করে চলেছে। এই সব করে কয়েক মাসের মধ্যেই পায়েলের চেহারা ভেঙ্গে পড়েছে, ওজন কমে গেছে প্রায় দশ কেজি। এর সাথে সাথে মাসিকের সমস্যাও তৈরি হয়েছে। বাবা মা বাধ্য হয়ে তাকে ডাক্তারবাবুর কাছে নিয়ে গেছেন।ডাক্তারবাবু জানিয়েছেন এটি একটি মানসিক সমস্যা এবং এর নাম “এনরেক্সিয়া নার্ভোসা”।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইংল্যান্ডের স্যার উইলিয়াম গাল এবং ফ্রান্সের চার্লস লাসিগ প্রথম এই জাতীয় রোগের বিবরণ দেন। সারা বিশ্বে ০.৩ শতাংশ মানুষ এই রোগের শিকার। অল্পবয়স্ক তরুণীদের মধ্যে এই রোগের প্রবণতা বেশি। মডেল, অভিনেতা, ড্যান্সার, ইত্যাদি পেশার মানুষজনের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। এই রোগের মূল লক্ষণগুলি হল নিজের চেহারা ও ওজন সম্বন্ধে অতিরিক্ত সচেতন ও ভীত হয়ে পড়া, খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দেওয়া এবং ওজন কমানোর জন্য নানান উপায় অবলম্বন করা। শাক-সবজি ছাড়া অন্য খাবার খেতে ভয় সৃষ্টি হয়। মাংস ও অন্য ফ্যাটি খাবার এড়িয়ে চলার প্রবণতা দেখা যায়। এর সাথে সাথে ওজন কমানোর জন্য বমি করা, অতিরিক্ত ব্যায়াম করা, খিদে কমানোর ওষুধ ও অন্যান্য ওষুধের ব্যবহার দেখা যেতে পারে। এর ফলে ওই রোগীর ওজন ক্রমশ কমতে থাকে এবং চেহারা ক্রমশ শীর্ণ -কায় হতে থাকে। এর সাথে সাথে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন -প্রেসার কমে যাওয়া, রক্তাল্পতা, হার্টের সমস্যা, হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া, রক্তে সোডিয়াম, পটাসিয়াম কমে যাওয়া, থাইরয়েডের সমস্যা, মাসিকের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
“এনরেক্সিয়া নার্ভোসা” রোগটির সাথে অনেক সময় উদ্বিগ্নতা, মন খারাপ, অহেতুক মিথ্যে কথা বলা, অযথা কান্নাকাটি করা, নেশার প্রবণতা, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার ইত্যাদি মানসিক সমস্যা যুক্ত থাকে।
সমস্যার গভীরতা খুব বেশি হলে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার। ওজন স্বাভাবিকের ৭৫ শতাংশের নীচে নেমে গেলে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হতে পারে। এই রোগের চিকিৎসায় বাড়ির লোকজন ও আত্মীয়দের গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করতে হয়।সময়মত ও সঠিক চিকিৎসায় এই রোগ থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ভালো লেখা।