১। রোজ একটি করে মাল্টিভিতামিন ট্যাবলেট খাওয়া কি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো? এতে কি আমাদের শরীরের ইমিউনিটি ক্ষমতা বাড়ে? ক্যান্সার বা হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে?
উত্তরঃ আজকাল বহু মানুষই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ভিটামিন ট্যাবলেট কিনে খান। বিশেষ করে করোনা মহামারীর সময়ে ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়ার প্রবনতা এতটাই বেড়ে গেছিল যে বাজারে বেশ নামকরা কিছু ব্রান্ডের ভিটামিন ট্যাবলেট উধাও হয়ে গেছিল। কিন্তু এভাবে ভিটামিন ট্যাবলেট খেয়ে কি আদৌ কোনো লাভ হয়?
লাভ তো হয়ই না, বরঞ্চ এভাবে কোনো কারন ছাড়াই ভিটামিন ট্যাবলেট কিনে খেলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে ফ্যাটে দ্রবণীয় যে ভিটামিন চারটি আছে, অর্থাৎ ভিটামিন A, D, E এবং K, সেগুলি দীর্ঘদিন ধরে বেশিমাত্রায় খেলে শরীরে জমে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষের উপর দীর্ঘদিন পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে মাল্টি ভিটামিন ট্যাবলেট আদৌ ক্যান্সার বা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারেনি। বয়স্ক মানুষদের স্মৃতি শক্তির কোনো উন্নতি ঘটাতে পারেনি। এছাড়াও সারা পৃথিবী জুড়ে যে সমস্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে তার বেশিরভাগেই মাল্টি ভিটামিন ট্যাবলেটের বিশেষ কোনো উপযোগিতা উঠে আসেনি।
এতএব ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া মাল্টি ভিটামিন ট্যাবলেট না খেয়ে শাকসবজি, ফল মুল এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অনেক ভালো। এতে শরীরের সত্যিকারের ল্যাভ হয়। মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট খেয়ে অনেকেই দাবী করেন তিনি গায়ে জোর ফিরে পাচ্ছেন, খিদে বাড়ছে। তবে এটি প্লাসিবো এফেক্ট ছাড়া কিছুই নয়।
২। ডাক্তারবাবু, আপনি এক্ষুনি বললেন প্লাসিবো এফেক্ট, এই জিনিসটা আসলে কী? মাঝে মাঝেই অনেকের মুখেই প্লাসিবো চিকিৎসার কথা শুনি।
উত্তরঃ প্লাসিবো কী বোঝানোর আগে একটা বহুল প্রচারিত গল্প শোনাই। এক দেশে ক্ষেপাটে রাজা ছিলেন। তিনি এক শত্রু সৈন্যের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিলেন। তার মৃত্যদণ্ড দেওয়া হবে সাপের কামড়ের মাধ্যমে। অপরাধীকে একটা চেয়ারে বেঁধে ফেলা হলো। তার চোখও বেঁধে দেওয়া হলো। এবার রাজা এক অদ্ভুত নির্দেশ দিলেন। তিনি সাপের বদলে দুটি ছুঁচ আনালেন এবং আদেশ দিলেন যে ছুঁচ দুটি যেন সেই অপরাধীর পায়ে এমনভাবে ফুটিয়ে দেওয়া হয়, যাতে সে ভেবে নেয় যে, সে সাপের কামড়ই খেয়েছে।
তাই করা হলো। এবং আশ্চর্য ব্যাপার নির্বিষ ছুঁচ ফোটানোর সাথে সাথে লোকটি চিৎকার শুরু করল, এবং কিছুক্ষনের মধ্যে তার মৃত্যু হলো।
গল্পের সত্যতা কতটুকু জানিনা, তবে সত্যি যদি এটা ঘটে থাকে, তাহলে এটাকে প্লাসিবো এফেক্ট বলা যায়। অর্থাৎ মানুষটির দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে সে বিষাক্ত সাপের কামড় খেয়েছে, এবং সেই বিশ্বাসই তার মৃত্যুর কারন হয়ে দাড়ালো।
এরকম প্লাসিবো চিকিৎসা শাস্ত্রেও বহুদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অনিদ্রার রোগীকে স্যাকারিনের বড়ি দিয়ে দেখা গেছে, তার দিব্যি ঘুম হচ্ছে। অথবা দীর্ঘমেয়াদি ব্যাথার রোগীকে ওষুধ ছাড়াই কোনো ক্যাপ্সুল বা ট্যাবলেট দিয়ে দেখা গেছে তার ব্যথা অনেক কমে গেছে।
এতক্ষণ আমরা যে ব্যাপারগুলো দেখলাম, সেগুলো যতটা না পরিমান ওষুধের কেরামতি, তার চেয়েও বেশি যে জিনিসটা লক্ষ করার মতো, তা হচ্ছে মানসিক অবস্থা। আর একে আমরা ‘প্লাসিবো ইফেক্ট বলতে পারি।
প্লাসিবো ল্যাটিন শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে- I shall Please, অর্থাৎ, ব্যাপারটা সন্তুষ্টির সাথে জড়িত। প্লাসিবো (Placebo) হচ্ছে এমন এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি কিংবা ঔষধ, যার আসলে কোনো ঔষধী গুণাগুণ নেই; কিন্তু তারপরেও সেটা রোগীর উপরে কাজ করে। সহজভাবে বললে, প্লাসিবো এমনভাবে মানসিক অবস্থা তৈরি করে, ফলে রোগীর মনে হয় তার রোগ সেরে যাচ্ছে।
ঝাড়ফুঁক, তাবিজ, কবচ এগুলো কাজ করে এই প্লাসিবোর মাধ্যমেই। বর্তমানে মর্ডান মেডিসিন বাদে যে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি আছে সেগুলির সাফল্যের পেছনের কারন এই প্লাসিবো। রোগীর সাথে চিকিৎসকের মানসিক যোগাযোগ যত দৃঢ় হবে, তত প্লাসিবো ভালো কাজ করে।
তবে প্লাসিবোর ব্যবহার নিয়ে বহু তর্কবিতর্ক আছে। সাধারণত একজন মর্ডান মেডিসিনের চিকিৎসক প্লাসিবো ব্যবহার করতে চাননা। কারন এটি রোগকে কমায় না, শুধু মানুষের মনে একটা মিথ্যে ভালো থাকার অনুভুতি এনে দেয়।
তবে বিভিন্ন ভ্যাকসিন এবং ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এই প্লাসিবোর ব্যবহার আছে। এখানে একদল মানূষকে ওষুধ অথবা ভ্যাকসিন এবং অন্য দলকে প্লাসিবো দিয়ে ওষুধ বা টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়।