১।
বুবুনের বড্ড মাথা গরম। কথায় কথায় জিনিষপত্র ভাঙচুর-চেঁচামিচি লেগেই আছে। দিন-দিন পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। পাশের বাড়ির কাকিমা, বুবুনের মাকে একজন জ্যোতিষীর কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। এর আগে কেউ কেউ সাইক্রিয়াটিস্ট দেখাবার কথা বলেছিল বটে, তবে সেটা খুব একটা মনঃপুত হয়নি, ছেলে কি পাগল? জ্যোতিষী কুষ্ঠি বিচার করে, হাতটা দেখে পাথর-টাথর দিলেন।
বুবুন এখন বছর পঁচিশের যুবক। হাত ভর্তি নানান্ দামি-অদামি পাথর– কোনো’টা সোনায় বাঁধানো আবার কোনোটা রূপোয়! তবে খারাপ লাগার বিষয় হোল ওর মনটাও আজ পাথরের মতো, কিছুই দাগ ফেলে না।
২।
“….মুক্তা এমন একটি রত্ন, জ্যোতিষশাস্ত্র মতে ধারণ করতে পারলে যা জাতক-জাতিকার ভাগ্য বদলে দিতে পারে। ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলে মুক্তা পরলে বিশেষ উপকার মেলে। দাম্পত্য অস্থিরতা, মানসিক অশান্তি থেকে মেলে মুক্তি। তবে মাথায় রাখতে হবে, যে কোনও রত্নই তিন মাস পর থেকে ফল দেয়।” বিশ্বাস দম্পতির ৩০ বছর একসাথে মুক্তোকে বিশ্বাস কাটিয়ে দিলেন, কিন্তু একে অপরকে আজও বিশ্বাস করেন না।
৩।
মিহিকা আর মাইরা ছোটো থেকেই হরিহরাত্মা।মলমাসের এক সাধারণ দিনে মিহিকার বিয়ে হয়, মাইরার বিয়ে হয় দিন ক্ষণ মিলিয়ে।
পাঁচবছর পর, মিহিকার স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখের ভরা সংসার। আর মাইরা স্বামীকে হারিয়ে নিজে চাকরি করে বৃদ্ধ শাশুড়িকে নিয়ে সংসার করছে।
৪।
নিতু এবার ন’মাসে পড়বে। প্রথম থেকেই, নিতু সিজার করতে চায়, নরমাল ডেলিভারির ঝামেলা ওর পোষাবে না। এবার লাস্ট ভিসিট, ডেলিভারি ডেট কনফার্ম হবে। বাড়ির বড়োরাও সাথে গেলেন, তবে এক বিশেষ আর্জি নিয়ে-পঞ্জিকা দেখে, বাছাই করা দিন আর সময়ের লিস্টি নিয়ে। আজকালকার ভাষায় এস্ট্রো সিজার। সোমবার রাত ১১টা সব থেকে ভালো সময়। রাতের বেলা নন ইমার্জেন্সী অপারেশন করতে ডাক্তারবাবু রাজি হননি। রাতের বেলা অপারেশনের সময় নিতুর কোন সমস্যা হলে নিতুর জীবনের ঝুঁকি বাড়বে। ওরা এখন ডাক্তার বদলের কথা ভাবছে।
আমরা যা ভাবি, যেমন ভাবে পরিস্থিতিকে দেখি, তার প্রভাব’ই আমাদের জীবনে পড়ে। এভাবে দিনের পর দিন আমরা নিজেদের চিন্তা-ভাবনার দায় পরিস্থিতির ওপর চাপিয়ে দিচ্ছি। ভালো কিছু ফলের আশায়, নিজেদের মানসিক দুর্বলতা বাড়িয়ে তুলছি। সবচেয়ে বেশি আস্থা যেখানে থাকা দরকার, সেই মনের জোরের ভাঁড়ার ক্রমশ খালি হচ্ছে, বুঝতেও পারছি না। মনের চোখে চালসে পড়ছে, সবই ঝাপসা তাই!
কঠিন বাস্তব কে খুব সহজ ভাবে লিখেছেন ।??
আশা করি সবাই উপকৃত হবে ।