তারিখটা সম্ভবত ৯ জুন, ২০১৯। এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে দুই জুনিয়র ডাক্তারের ওপর নৃশংস হামলায় ডা পরিবহ মুখার্জি আর ইয়শ টেকওয়ানি বীভৎসভাবে আহত হলেন। আইসিইউ-তে পরিবহকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে হল। এনআরএস হাসপাতাল টোটাল বন্ধ, ছাত্র ডাক্তারেরা ফুঁসছেন। সরকারের প্রধান বলে বসলেন, এই ডাক্তারেরা পোশাক (অর্থাৎ জাত আর সামাজিক অবস্থান) দেখে চিকিৎসা করে। শেষ পর্যন্ত কিন্তু ছাত্র ডাক্তারদের আন্দোলন জিতল। তাঁদের দাবি মেনে নিলেন সরকারের সেই প্রধান। মনে পড়ে, এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ থেকে এক সুদীর্ঘ মিছিল বেরিয়েছিল। কারা ছিলেন সেই মিছিলে? ডাক্তার এবং ডাক্তারি ছাত্ররা তো বটেই, ছিলেন অজস্র সাধারণ মানুষ। তাঁদের সমর্থন আর অংশগ্রহণ ছাড়া জয় আসা ছিল দুরূহ।
অন্য তারিখটা সম্ভবত ১৬ নভেম্বর, ২০১৪। কোরপান শাহ্, জরি শ্রমিক, এবং মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জড মানুষ। চোর সন্দেহে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলে পিটিয়ে মারা হয় তাঁকে। আজও কেউ শাস্তি পেয়েছেন বলে জানি না। আমরা কয়েকজন, এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের সামনে সামান্য একটু গেট মিটিং করতে পেরেছিলাম। অধিকাংশ, অধিকাংশই বা বলি কেন, প্রায় সমস্ত এনআরএস ছাত্র ডাক্তারেরা তখন বিশেষ কিছু করার দরকার মনে করেননি। আমরা কোরপানের পরিবারকে সামান্যই সাহায্য করতে পেরেছিলাম। আমার এক বন্ধু যেমন বলেছিলেন, সে আমাদের পাপস্খালনের অতি দুর্বল প্রচেষ্টার বেশি কিছু ছিল না।
স্বপ্নদীপ কুণ্ডু, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েই র্যাগিং-এর দাপটে প্রাণ হারালেন। তাঁর মা বাবার অবস্থা বোধকরি আমরা কেউ কল্পনাতেই আনতে পারব না। এঁর মৃত্যু যেন বৃথা না যায়। প্রাথমিক খবর থেকে মনে হয়, এ এক হত্যাকাণ্ডই, সরাসরি খুন নাও যদি হয়, আত্মহত্যা করানো অন্তত। কোরপান শাহ্ হত্যার পরে এনআরএস তার এলিট অবস্থান থেকে একচুল নড়েনি, আমরাও তাঁর জন্য তেমন গা ঝাড়া দিয়ে বসিনি। কিন্তু কারণ যাই হোক না কেন, আজ অবস্থাটা কোরপানের মতো নিশ্চুপভাবে হত্যা মেনে নেবার পক্ষে নয়।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা স্বপ্নদীপের হত্যাকারীর শাস্তির দাবিতে মিছিল করেছেন। তাঁদের অভিনন্দন। হোক কলরব এর পাশে দাঁড়ানো মানুষজন এমনটাই চায়। তবে অপরাধী যেহেতু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, অপরাধের জন্ম দেওয়া সিস্টেমকে যেহেতু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বেড়ে ওঠার সুযোগ দিয়েছে, যাদবপুরের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী ও অধ্যাপক শিক্ষাকর্মীদের দায় তাই আরেকটু বেশি। মিছিল করাই শুধু নয়, অপরাধীদের ধরার ব্যাপারে তাঁদের একটা দায় আছে, দায় আছে এই নৃশংস সিস্টেমকে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে লাগাতার সংগ্রাম চালানোর।
হোক কলরব। হোক শাস্তি। র্যাগিং নিপাত যাক। ধর্ষকামীদের জন্য কোনো মার্জনা নয়।
আমি আর্টিকেল রেটিং এর ধৃষ্টতা প্রদর্শনের যোগ্য নই।তবে,মান্যবর লেখক সংক্ষিপ্ত যে ইতিহাস তুলে ধরেছেন তা প্রেক্ষিতে এটুকু তো বলতেই পারি যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃতগৌরব উদ্ধার
এর জন্য তীব্র বিতৃষ্ণা বোধ উজ্জীবিত হোক,”হোক কলরব ” স্বপ্ন নীল দের স্বপ্ন সৌধ ভেঙে গুড়িয়ে দেবার মাকড়সার যে জাল,কাপুরুষতা,অমানবিকতার যে ঘুঘুর বাসা গড়ে তোলা হয়েছে, তা ভেঙে খান খান করে দেবার শপথ গ্রহণ করে পথে নামুক। পশ্চিম বঙ্গের সরকার, প্রশাসন কে এদের মুখোমুখি হবার সাহস সঞ্চয় করতে বাধ্য করার লক্ষ্যে ” হোক কলরব ” উত্তাল হোক এবার।