মেডিকেল কলেজে পড়ার সুবাদে মানে জায়গাটার ভৌগোলিক কারণে না বুঝেই যে যে অমৃতধারার ছোঁয়া পেয়েছি, না বুঝেই, ভাবলে অবাক হই।
ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউটের ওই ঘরে যে অমূল্য নাটকগুলি দেখেছিলাম, প্রায় পঞ্চাশ বছর হতে চলল, আজও নাড়া দেয়।
পানিহাটি হাসপাতালে কাজ করি যখন গাইনিকোলজিস্ট অক্ষয় ঘোষ। কিচ্ছুটি বুঝিনি তাঁকে দেখে। অবাক হলাম অনেক পরে ওই হাসপাতাল থেকে চলে যাবার পরে। ওই সব নাটকে অভিনয় করতেন অক্ষয় ডাক্তারবাবু। কী হিংসে যে হল জেনে! পরশপাথর ছুঁয়েছিল অক্ষয়কে।
সেই পরশপাথর, বাদল ওরফে সুধীন্দ্রনাথ সরকারের জন্মদিন পেরিয়ে এলাম।
যদি সাধারণ মানুষের কথা ভাবি এই জন্মদিনগুলো আসলে এক ধরণের সংস্কারের মত মনে হয়। যতই উচ্ছ্বসিত ছবি পোস্ট জুলাইয়ে… সেই তারিখ মনে করিয়ে দেয় এই তারিখে মানুষটি এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছিল… গেল… তার ফিনিশিং রোপটি ছোঁবে বলে।
শুধুই ফিনিশিং রোপ ছোঁয়া। কিম্বা অসহায় বুদ্বুদের মত। যার একমাত্র পরিণতিই হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের পরে উধাও হয়ে যাওয়া।
কিন্তু কোনও কোনও তারিখ মনে করিয়ে দেয় সেই মানুষটি শুধু শুধুই অর্থহীন সেই শেষ সীমানার দিকে হেঁটে যাননি। তাঁর সাথে বয়ে নিয়ে গেছেন নিজস্ব এক আলোর বৃত্তও।
ওই তারিখে আরও অনেকে জন্মেছেন… জন্মাবেনও। কিন্তু তিনি জন্মেছিলেন বলেই তাঁর চারপাশের পৃথিবী অসাধারণ হয়ে উঠেছিল।
থার্ড থিয়েটার বস্তুটা আমার যৌবনে যে খুব ভালো বুঝতাম কিম্বা এখনও বুঝি তা না। যেমন খুব স্পষ্ট না থার্ড ওয়ার্ল্ডের ধারণাও।
এই তৃতীয় শব্দটাই খুব সন্দেহজনক। ভারি অশান্তিরও। যে রকম শান্ত দুইএর সংসারে তৃতীয় কোনও অস্তিত্বই অশান্তির। আমি সে ও সখার মতই বিভ্রান্তির ব্যাপার তৃতীয় এই ধারণাটি। বিভ্রান্তির… কিন্তু অমোঘ। এক এক সময় মনে।।তে থাকে এই তৃতীয়টিই এক এবং এক মাত্র সত্যি। গোছানো আর অনেক যত্নে সাজানো এক আর দুই আসলেই অলীক।
জোর করে বানানো রিয়ালিটির এক আর দুই কে তুচ্ছ করে মাথা তোলে দুর্বিনীত অ্যাবস্ট্র্যাক্ট তিন। মাথা তোলে এবং ইন্দ্রজিত…, ভোমা… বাসি খাবার…শাড়ি …
আমাদের জীবনে ঘটা প্রতিটি ঘটনাই অসংগতিপূর্ণ আর যুক্তিহীন। ভেবে দেখলে প্রহেলিকাময়। এই অ্যাবসারডিটির প্রবহমানতাই আমাদের যাপিত আর উদযাপিত সময়।
“রিয়েলিটি কখনওই যুক্তিকে অনুসরণ করে না। আমরা কোনও ঘটনাকে বিশ্লেষণ করার বা বোঝার জন্য কতকগুলো কাল্পনিক যুক্তিকে তৈরি করে ঘটনা আর তার পাশে জড়ো হওয়া চরিত্রদের ওপর চাপিয়ে দিই।”
সময় পথিক বাদল সরকারের একের পরে এক সৃষ্টি তখন পরিবেশিত হচ্ছে ইউনিভারসিটি ইন্সটিটিউটে আর থিওসফিক্যালে। খোঁজ পেলেই আমি আর সুনন্দা যেতাম। কোনও প্রবেশমূল্য থাকত না। যেন দর্শকের উপস্থিতিটাই নগদে এক বড় পেমেন্ট।
নাটক শেষে একটা চাদরের চারকোণা ধরে কুশীলবরা হেঁটে যেতেন আমাদের পাশ দিয়ে। এক দুটাকা দিয়েছি কি কখনও? মনে নেই। আমরা তখন থার্ড ইয়ার কী ফোর্থ ইয়ার। অবাক হয়ে যেতাম ভাবনার বিশালত্ব দেখে।
এখনও অবাক হই। পরশপাথর দেখেছিলাম একদম কাছ থেকে।