-“কি গো, দুবছর তো হলো এবার একটা নিয়ে নাও”
-“কিরে আর কতো গায়ে হওয়া লাগিয়ে ঘুরবি, এবার একটা নিয়ে নে”
-“তোমাদের সুখবরটা কবে পাচ্ছি?” এসব মন্তব্য শোনেন নি এমন দম্পতি এই ভারতবর্ষে একটাও খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না, যদি না বিয়ের বছর ঘুরতেই তাঁদের বাচ্চা হয়ে থাকে… অবশ্য সেক্ষেত্রেও দাবী আছে, “আরেকটা নিয়ে নাও!”
বিবাহিত দম্পতির বাচ্চা হচ্ছে না কেন এই নিয়ে দেশশুদ্ধ লোকের চোখে ঘুম নেই… আর সেই দম্পতি?? হয়তো অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে তাঁরা বাচ্চা নেয়ার জন্য প্রস্তুত নন, হয়তো তাঁদের বাচ্চা চাই না… বাবাগো, এটা শুনলে তো আর রক্ষে নেই, কিন্তু তবুও শুনুন, বুঝুন আর মানতে শিখুন অনেক দম্পতি স্বেচ্ছায় সন্তানের জন্ম নাও দিতে পারেন…
আর যাঁরা সন্তানের জন্ম দিতে চান, চাইছেন, তাঁরাও সন্তানের জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে biologically সক্ষম নাও হতে পারেন…. হয়তো infertility র সমস্যা নিয়ে ইতিমধ্যেই তাঁরা ভুক্তভোগী… হয়তো ডাক্তার-ক্লিনিক ইত্যাদি করে তাঁরা already বিপর্যস্ত, তাঁদের stress টা আরও বাড়াবেন না! সুখবর কিছু থাকলে তো জানতেই পারবেন!
সন্তান জন্ম দিতে না পারার অভিঘাত সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয় মেয়েদের… কারণ আমাদের সমাজে সন্তান জন্ম দেওয়া মেয়েদের জীবনে একটা স্বাভাবিক পর্যায় শুধুই নয়, মেয়েটির “পূর্ণতা” বা একমাত্র লক্ষ্য বানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সন্তান জন্ম দিতে না পারলে সে মেয়ের তো জীবনই বৃথা! এর ফলে কি হয়? সন্তান জন্ম দিতে না পারার জন্য anxiety, deepression, আত্মহত্যার ইচ্ছে, নিজেকে অক্ষম মনে করে কষ্ট পাওয়া….
দেখা যায় যে সব দম্পতি assisted reproductive technology (ART)-র মতন প্রযুক্তির দ্বারস্থ হয়ে মা-বাবা হতে চাইছেন তাঁরা ইতিমধ্যেই anxiety -depression এ ভুগছেন! (প্রায় ৪০ শতাংশ, কোনো ক্ষেত্রে বেশি)… একদিকে infertility-র সমস্যা, মা-বাবা হতে না পারার কষ্ট, সেই সঙ্গে “স্বাভাবিক” ভাবে মা হতে না পারার যে স্টিগমা, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সংকোচ, যার ফলে এই দীর্ঘ চিকিৎসার stress তাঁরা অনেক সময় বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়স্বজনের সাথে আলোচনা করতেও পারেন না, ফলে একাকীত্ব আরও বেড়ে যায়…. আর আমরা হয়তো জানিনা, তবে stress কিন্তু pregnancy র অন্তরায়… Stress-depression-anxiety কমে গেলে মা হওয়ার সম্ভবনা বাড়ে, ART র সাফল্যের সম্ভবনাও বাড়ে… সেই জন্যেই এই সময়ে stress কম রাখা, relaxation therapy এবং depression থাকলে সেটার চিকিৎসা করা প্রয়োজনীয়! (যদিও অধিকাংশ সময়ে preganancy-র সময়ে psychiatrist-এর পরামর্শ ছাড়াই রুগীর ওষুধ বন্ধ করে দিতে দেখি।)
এবার অনেকক্ষেত্রে আবার এমনও হয় যে বিজ্ঞাপনের সুবাদে বা কোনো পরিচিত দম্পতির সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে, অনেক বেশি আশাবাদী হয়ে treatment করতে আসেন দম্পতি, অথচ এই চিকিৎসার ব্যর্থতা আছে… কারোর ক্ষেত্রে একটা cycle এর পরে সাফল্য আসে, অনেকের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটা cycle লাগে, অনেকের ক্ষেত্রে সাফল্য আসেই না… ফলে ক্রমশ হতাশা বাড়তে থাকে… এদিকে যেসব ওষুধের দ্বারা এই চিকিৎসা করা হয় সেসব ওষুধের ফলেও আসতে পারে অবসাদ…. অনেকসময় এটাও বুঝতে অসুবিধে হয় যে অবসাদের কারণ এই ওষুধের side effect নাকি infertility -র জন্য তৈরি হওয়া হতাশা?? আর সেই জন্যেই হয়তো চিকিৎসার শুরুতেই মানসিক স্বাস্থ্যের একটা evaluation খুব দরকার! সেই সঙ্গে দরকার এই সম্পূর্ণ journey টার সময় মানসিক স্বাস্থ্যর পরিচর্যা ও যথাযথ চিকিৎসা… সমস্ত মানসিক ওষুধ-ই প্রেগন্যান্সির সময়ে ক্ষতিকারক এমনটা নয়, অনেকসময় কোনো মানসিক অসুখের অভিঘাত এতটাই যে, ওষুধ চালিয়ে যাওয়াই সন্তান এবং মা-এর ভালো থাকার জন্য জরুরী!
এই দীর্ঘ লেখার শেষে এটুকুই বলি, যে মা-বাবা হওয়ার অনুভূতি নিঃসন্দেহে খুব সুন্দর অনুভূতি কিন্তু biologically মা-বাবা হতে না পারা কিন্তু অক্ষমতা বা অপূর্ণতা নয়…. মাতৃত্ব একটা বোধ, যে বোধকে লালন করতে biologically মা হতে হয়না… আপনি অনেকভাবে মা হতে পারেন, যার একটা অন্যতম উপায় হলো adoption! আমাদের সমাজে adoption এর গ্রহণযোগ্যতা আরও যতো বেশি বাড়বে, ততো এই মা হতে না পারার হতাশা গুলো হয়তো কমে যাবে!
আর মা হতে না চাওয়া টাও একটা choice… এটাকেও গ্রহণ করতে শিখতে হবে আমাদের, মা হওয়াটাই একটা মানুষের একমাত্র ইচ্ছে নাও হতে পারে… কে কখন মা হবে, কিভাবে মা হবে, biologically মা হবে নাকি adoption-এর মাধ্যমে মা হবে, নাকি assisted reproduction-এর মাধ্যমে মা হবে, কটা বাচ্চার মা হবে, এসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে আমরা বরং মূল্যবৃদ্ধি, দেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ইত্যাদি নিয়ে মাথা ঘামাই… ওগুলোই বরং রাতের ঘুম উড়িয়ে দেবার মতন ইস্যু!!
দারুন লিখেছেন। অনেক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।