অরবিন্দ সুজাতার ছেলে বিশ্ব অফিসের কাছে ফ্ল্যাট নিয়েছে বিয়ের পরপরই।
শনিবার এসেছিল। ওইদিনই অনেক রাত করে অ্যাপক্যাব ডেকে বৌ ছেলে সমেত ফিরে গেল। যেতেই হবে। রোব্বারের সকালে বিশ্ব আর তার বৌএর বনসাইয়ের ক্লাস।
– কীসের ক্লাস? জিজ্ঞেস করেছিল তার স্কুল মাস্টার মা।
– ও তুমি বুঝবে না মা। ছোট টবে ছোট্ট মহীরুহ বানানোর খুব ট্রেন্ডি এক বিদ্যে। নিয়ম মত সার জল আলো। সব চে ইম্পর্ট্যান্ট হল যত্ন করে শেকড় ছাঁটা।
অফিসে সেমিনারের মাঝপথে অরবিন্দর কাছে ফোন আসে চার-পাঁচবার। ভাইব্রেশন মোডে রাখা, তবু বারবার ফোন এলেই ত্বরিত বেরিয়ে যাওয়া, চোখ এড়ায় না কারও।
লাঞ্চ ব্রেকের সময় বিনীত একটু ঠেস মেরেই বলে,
– আরে সাইলেন্ট মোডে ফোন রাখলেও তো ডিস্টার্বিংই। অ্যাট লিস্ট এরোপ্লেন মোডে রাখো। তুমি খেই হারিয়ে ফেললে লস তো তোমার শুধু না, কোম্পানিরও। এমডি ব্যাপারটা খেয়াল করেনি ভাবছ?
অরবিন্দের বিরাশি বছর বয়সী বাবা নবনীকান্তকে এই অসুবিধের কথা কে বোঝাবে? ডিমেনশিয়ার রোগী। একটু আগের কথা বেমালুম ভুলে আবার খাতায় লেখা নম্বর মিলিয়ে ফোন করবে। – হ্যাঁ রে গুলতি, তুই কখন ফিরবি? দুপুরে খেইচিস কিছু?
অরবিন্দর বৌএর স্কুলে চাকরি। দুপুরে থাকে না।
বাড়িতে দেখাশোনার জন্য রাখা কাজের মেয়েকে বলা আছে আপদ বিপদ কিছু হলে ফোনে জানাতে।
অথচ অবাধ্য অসুস্থ বুড়োর নিজেরই হাতের কাছে ফোনটি চাই।
আসলে সবেধন নীলমণি অরবিন্দের জন্য উদ্বেগের সীমা নেই।
নাতি বিশ্বব্রত ঠাট্টা করে বলে – চিন্তা না আরও কিছু। দাদুর মোটো এখন, নেই কাজ তো খই ভাজ।
হয় তো তাইই। অর্থহীন, তবু কাজের মধ্যে শতবার অকাজের এই ফোন আসবেই।
সন্তানের জন্য এই উদ্বেগের ব্যাপারটা বোধহয় জেনেটিক।
শনিবার আকুল অরবিন্দ পইপই করে বলেছিল বিশ্বকে।
– এত রাত করে বেরুচ্ছিস, পৌঁছেই একটা ফোন করিস বাবা।
শনিবার রাত গেল… রোব্বারের সারাটা দিন গেল। সোমবারও গত। আজ মঙ্গলবার। আজও অরবিন্দর যে টেলিফোন আসার কথা সে টেলিফোন আসেনি।
নেই কাজ তো খই ভাজ দর্শনে বিশ্বাস না করা তৃতীয় প্রজন্ম। তাই অরবিন্দ নিজে ফোন করে তাকে বিরক্ত করতে লজ্জা পায়।
তারও আজকাল নিজের বাবার মতই বড় চিন্তা হয় সন্তানের জন্য। কিন্তু সেই দুশ্চিন্তা সে ঝেড়েও ফেলে লহমায়।
সে জানে তার সন্তান বনসাই টেকনোলজির ক্লাস করছে রেগুলার। তৃতীয় প্রজন্ম শিখছে কী ভাবে শেকড় ছেঁটে ফেলতে হয়।
Haimanti Bhattacharyaর জন্য অণুগল্প।