কিনে আনা স্বাস্থ্য
বাজার-পুঁজি -মুনাফা আর আপনি
বিষাণ বসু
স্বাস্থ্য মানে ডাক্তারি নয়। দুঃখের বিষয় হল, অধুনা ডাক্তারিটাও ডাক্তারের এক্তিয়ারের মধ্যে নেই।
কথাটা কেমন যেন শোনায়। ছোট করে ব্যাখ্যা না দিয়ে, পাশ কাটিয়ে, এগোনো মুশকিল। স্বাস্থ্যের বড় অংশ হল মুখের অন্নের নিশ্চয়তা, পানীয় জলের নিরাপত্তা, বায়ুদূষণ থেকে মুক্তি। তার সঙ্গে যোগ করুন গণ টিকাকরণ। এগুলোই স্বাস্থ্যবান থাকার মূল কথা।
তাহলে চারদিকে যে এত ডাক্তার-নার্স, হাসপাতাল, নার্সিং হোম, প্যাথ ল্যাব দেখি, তারা কোন কম্মে লাগে? যখন মানুষের দেহ যন্ত্র বিগড়ে যায়, তাকে সারানোর কাজে লাগে। সে লাগা কেমন? বিষাণ যেমন এই বইতে লিখেছেন, তেমন। রান্নাঘরের জলের কলের প্যাঁচ কেটে গেলে, জল ছেঁচে বের করার মতই। আসল কাজটা হল কলটাকে সারানো। কিন্তু বেশি বুদ্ধিমান কিছু মানুষ জানেন, কল সারালে, তাঁদের জল ছেঁচা যন্ত্রের দাম যাবে কমে। তাঁরা তারস্বরে, এবং সমস্বরে, বলতে থাকেন, রান্নাঘর থেকে জল বের করে দাও, শিগগির, নইলে সর্বনাশ। তাঁদের গলার জোর আর বেশভূষার ছটায় অন্যদের চোখ যায় ধাঁধিয়ে, কলটার প্যাঁচ সারানোর মিস্ত্রির পয়সা খরচ করার কথা তাদের মনে থাকে না।
এই আদি সমস্যা ভুলিয়ে দিলে জল ছেঁচা যন্ত্র ব্যবসায়ীদের লাভ। তাঁরা সেই লাভের বখরা যথাযোগ্য স্থানে পৌঁছে দিতে কার্পণ্য করেন না। সুতরাং রাজা মশাই জল ছেঁচা যন্ত্র কেনার জন্য রাজকোষ থেকে অর্থ বরাদ্দ করেন। কোনও প্রজার রান্নাঘরে জল জমলে, ইন্সুরেন্স কোম্পানী সরকারি পয়সায় সেই জল ছেঁচে দেন। অবশ্য এক বালতির বেশি জল ছাঁচলে তাঁদের নাফা কমে, তাই এক কোমর জলে ঘর ভাসলে তাঁরা আর নেই, গেরস্তের গেরো।
অন্যদিকে, দেশে অন্নজলের ঘোর অনটন হলেও, হুইস্কি ব্র্যান্ডি আর মুরগি মটন নিয়ে তেমন টানাটানি নেই। Covid মহামারীতে কয়েক কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেলেও, কতজন যে নতুন বিলিয়নেয়ার হলেন, সে ভেবে আমাদের বুক পঞ্চান্ন ইঞ্চি হয়। কে না জানে, এ বাবদে পাকিস্তান নেহাত কমা। বল বল বল সবে, ভারত আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে। কোথায় এমন … এমন লৌহপুরুষের স্ট্যাচুর ওপর ঢেউ খেলে যায় যুগপুরুষের কপ্টার কাহার দেশে। তাছাড়া, আমাদের কুম্ভ ও সাগরমেলা হয়, স্কুল বন্ধ করে দিয়ে আমরা মহামারী দিব্যি রুখে দিই।
এ হেন অবস্থায় সত্যিকারের স্বাস্থ্যনীতি কী, কী হওয়া উচিত ছিল, আর আমরা পাঁচ বছরে একবার ছাপ দেওয়া পাবলিক কী করতে পারি, আদৌ কিছু করতে পারি কিনা, সে নিয়ে গভীর ভাবনাচিন্তা করা যে ভস্মে ঘি ঢালার মতো, সেটা বন্ধু বিষাণ বোঝেননি। বোকা বলে বোঝেননি, এমন নয়, আমাদের ওপর অসম্ভব প্রত্যাশা তার, সেজন্যই বুঝে উঠতে পারেননি।
আমরা অবশ্যই বিষাণ বসুর মতো বোকা নই। আমরা নিশ্চয় গাঁটের কড়ি খরচ করে তাঁর এ বইটা পড়ব না।
তাই আমার, এ লেখাটি পাঠ প্রতিক্রিয়া, এবং বিধিসম্মত সতর্কীকরণ। এর পরেও কেউ বইটি পড়বেন না, এই আশা রেখে, প্রকাশক ধানসিঁড়িকে যথাযোগ্য গালি দেবার জন্য তাঁদের সাকিন ফোন ইত্যাদি পেশ করলাম।
.
ধানসিঁড়ি, 20 বি, সূর্য সেন স্ট্রিট, মো 7596888695
বাহ! চমৎকার লিখেছেন!