একঘেয়ে শরৎশেষের একটা সন্ধ্যা। বুড়ো হাতুড়ে বেরিয়েছে চায়ের সন্ধানে। পৈতৃক লাঠিটুকুই অবলম্বন। একটা বেশ রমরমে চায়ের দোকান। প্রচুর সমবেশী পরিবেশক। ছেলেরা খৈনি টিপছে। আপাততঃ দোকান ফাঁকা। একটা মাত্র উপনেত্রধারিণী কিশোরী কাউন্টারে।হাতুড়ের ক্ষিধেও পেয়েছিলো। যতটা ক্ষিধে ততটা রেস্ত নেই। তাই রেস্তোরাঁয় খাদ্যতালিকা দেখে লাঠি সামলে শুধালো” মা, এখানে ডিমের চপ পাওয়া যাবে?”
দাম পনের টাকা শুনে খুশি হয়ে একটা ডিমের চপ খাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলো। এমতাবস্থায় একজন রংবদলী বাবু এসে বললেন
“আরে হাতুড়েদা, ইত্যাদি ইত্যাদি…”
শেষ পাতে প্রশ্ন করলেন লিভারের একটা ভালো ওষুধ বলুন তো!
হাতুড়ে চপ খেয়ে পাঞ্জাবির হাতায় মুখ এবং শিকনি মুছে বললেন
লিভারের কোনও ওষুধ নেই।
রংবদলী বাবু এ্যাতো বড়ো হাঁ করলেন যে আস্ত একটা ডিমের চপ তার মধ্যে ঢুকে যায়।
দোকানকন্যা হঠাৎ এসে একটা নরম কাগজ দিয়ে হাতুড়ের মুখটি মুছে দিলো। এমা সব কিছু লেগে আছে তো মুখে….
সপ্রশ্ন হাতুড়ে এ্যামন স্নেহের কারণ বোঝেন না।
কালো দোকানকন্যার চশমা হ্যালোজেনের আলোয় ঝিকিয়ে ওঠে। …..ছোট থেকেই দোকানে কাজ করছি,কেউ কোনোদিন মা বলে ডাকে নি….
নিরুত্তর হাতুড়ের লাঠিটা হঠাৎ অনেক শক্ত হয়ে যায়। মনে হয় হাতুড়ে আর রাস্তায় উল্টে পড়বে না।
হাতুড়ে রংবদলী বাবুর সঙ্গে চায়ের দোকানে চলে। ছোট্ট মা পথের দিকে চেয়ে থাকে।
চায়ের দোকানে নিঃশব্দে বসেন
-কৈ বলুন লিভারের ওষুধ….
-লিভারের কোনও ওষুধ হয় না।
-তাহলে যে এ্যাতো দামি দামি ওষুধ খাচ্ছি…. ছোকরার গলায় অবিশ্বাস ঝরে পড়ে।
-যেটা খাচ্ছেন সেটা একটা বাইল অ্যাসিড মাত্র। এটাকে পেটের আন্ত্রিক জীবাণুরা বাইল সল্টে পরিণত করে….মানে কৃত্রিম পিত্তে পরিণত করে। এটা সঠিক ভাবে বলতে গেলে একটা…..কোলেরেক্টিক পদার্থ…
ঐ দোকানকন্যা কৃষ্ণ সৌদামিনীর ঝলক তুলে ক্লান্ত দৃপ্ত মুখে সাইকেল নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়।হয়তো বা ওর বাবা নেই….হয়তো এই বৃদ্ধকে দেখে ওর নিজের শয্যালীন বাবার কথা…..
আমার যা শ্রেষ্ঠধন সে তো শুধু চমকে ঝলকে,
দেখা দেয়, মিলায় পলকে।
বলে না আপন নাম, পথেরে শিহরি দিয়া সুরে
চলে যায় চকিতে নূপুরে।
সেটাই তো সেরা প্রাপ্তি।হঠাৎ হাওয়ায় ভেসে আসা ধন
-ও হাতুড়েদা কী ভাবেন? শরীর খারাপ লাগছে নাকি?
না তো?
তাহলে কোলেরেক্টিক মানে কি?
-মানে হলো এঁ এঁ যারা পিত্ত ক্ষরণ বাড়ায় ফলে পায়খানা ভালো হয়…কিন্তু অকেজো লিভার ঠিক হয় না হেঁ হেঁ
আর যেগুলো সিরাপ… লিভার টনিক বলে বিক্রি হয় সেগুলো সব গুড়জল….এগুলো লিখলে ব্যবসা ভালো হয়
[কবিতাটি বলাকা কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া]
(পরবর্তীতে হার্ট, কোলেস্টেরল ইত্যাদি ইত্যাদি এবং তাদের ওষুধ নিয়ে বালখিল্য আলোচনা থাকবে)