আমার এ গোটা দেহ দান করে যাবো
অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সব লাগুক না কাজে আগামীর,
বহুকাল ধরে যারা অসুখে স্থবির,
তাদের জাগাতে ফের বহুভাগে শরীরের অঙ্গ বিলাবো।
একটা কিডনি দেবো ফেক নিউজ হোতাদের ,
বিকৃত তথ্যের বিক্রেতাদের,
আইটির ভাইটির ঘৃণা ভরা বিষ ছেঁকে দিক।
রোজনামচায় রোজই আরো বিষ মেশে,
নীল ছোপ সারা গায়ে এ সোনার দেশে,
ক্ষীর কারা খায় সেটা সকলেরই জানা,
যারা মুখ ফুটে বলে যায় জেলখানা,
সে বিষ ওষুধ বলে চালাবার চেষ্টাতে
ভুলে যাই আমার শহরে ঠিক আমারই পাড়াতে,
শঙ্কর মুদি আর করিমের ফলের দোকান পাশাপাশি
বিনা রেষারেষি আছে বহুকাল ধরে,
দুজনের মাঝখানে পরিখা কাটলে দেশ মরবে বেঘোরে।
অন্য কিডনি পাবে রাজাদের যতেক স্তাবক।
স্তুতি ছলে বস্তুত পুজো করে লোক,
মোহন সে ভুলভাল তেলে পিছলিয়ে যায় যত রূঢ় বাস্তব,
নাগরিক কান্নার শোকাতুর কলরব ঢেকে দেয় স্তব।
স্তাবকতা বেশি হলে সেটাকেই নাগরিক-কথা বলে ভুল করে,
সব আয়নার মুখ নিজের দিকেই রাজা ঘোরায় সজোরে,
প্রতিবিম্বটি ছাড়া আর কোনো সাথী তাঁর লাগে না জরুরি।
যে সব বিভীষণ-বিষ,
রাজাকে দেবতা ভ্রমে বানিয়ে চলেছে বিন তুঘলক,
আমার বৃক্ক যেন এ দেশ-বৃক্ষ থেকে দূর করে সেই ভয়ানক।
হৃৎপিণ্ড কাকে দেবো?
হৃদয় উপড়ে দেবো এদেশের আগামীর কচিকাঁচাদের,
আশা দিক লাব-ডুপ একদিন ভাঙা যাবে সব খাঁচাদের।
প্রতি ধুকপুকে পুষে রাখা স্বপ্নকে,
ছড়ানো দেখতে চাই কালকের কোটি কচি চোখে,
একদিন, একদিন ঠিক,
ধর্মবিভেদ ভুলে, জাতকে শিকেয় তুলে ,
মানুষকে মূলে রেখে দেশ গড়া হবে,
অলিন্দ নিলয় বেয়ে
ফের রক্তের স্রোত বহমান হতে থাক ভাবী শৈশবে।
ফুসফুস দিতে চাই সেই সব মুক্তমনাদের,
ইদানিং প্রতি শ্বাসে আতংক সঙ্গী যাদের।
হয় এ শিবিরে যাও নয় ও শিবিরে ,
তোমাকে থাকতে হবে লাইনের এধারে ওধারে,
ধর্ম ও রাজনীতি যাতে একবার দেখে নিয়ে দেগে দিতে পারে,
এরা আমাদের আর ওরা ওইদিকে।
এখনো ফেলেনি যারা বিভাজন-রেখা মেনে হাঁটাচলা শিখে,
কোভিডের মহামারী হোক বা না হোক,
শ্বাসের কষ্টে তারা ভোগে ইদানিং,
পুরনো ট্যুইট দেখে শিং উঁচানো পেয়াদারা বাজায় কলিং,
জেলের আঁধারে পচে তারা বিনা বেলে,
হাঁসফাঁস করে যদি কোনোদিন কোত্থাও খোলা হাওয়া মেলে ,
তবু সেই বোকাগুলো ধর্ম ও জাতহীন স্রেফ ভারতীয় হতে আশা রাখে পুষে,
ও বাতাস , দেখো যেন সে স্বপ্ন প্রতি শ্বাসে মান পায় সেই ফুসফুসে।
যকৃৎ দিয়ে যাবো হলুদ সাংবাদিকতাকে।
আজকাল বড় বেশি কই সেই ঝাঁকে,
হয় ডান নয় বাম , লাইভ রিপোর্ট করে যত সব মৃগ একচোখো,
সেই সব সংবাদে ঢং বাদে আর কিছু থাকে না আদৌ।
আহা আমার লিভার পেয়ে কিঞ্চিৎ ভালো নয় হোক ও,
বিলিরুবিনের মান চড়তে চড়তে গেছে বিপদের সীমা ছেড়ে কবে,
জানিনা অবশ্য এই অ-পক্ষ লিভারে ও লাশের কোন লাভ হবে।
শিরদাঁড়া পাক সব বুদ্ধিজীবিরা।
জ্ঞানে আর সম্মানে এ অধম ধারেকাছে আসে না তা জানি,
তবু কুর্নিশে ঝোঁকা দেখে এই অভিমানী মনে জাগে হয়রানি,
কোথায় গণ্ডগোল হয়ে গেছে আজ? সমাজকে বাদ দিয়ে মন্ত্র যে ‘নিশিদিন ভজো মহারাজ’,
কোথা থেকে এলো সেই অপদেবতাটি?
মঞ্চের লোভে এত দূরে গেলে মাটি,
স্বভাবত খোয়া যায় সব কশেরুকাসহ গোটা শিরদাঁড়া ।
এক সাধারণ নাগরিক উপহার দিয়ে গেলে
হয়তো দাঁড়াবে সোজা সেসব বেচারা।
সবশেষে পড়ে আছে চোখ ।
সে অক্ষি রাজাদের হোক।
নাগরিক কর্নিয়া হয়তো বা পাল্টাবে আমূল দৃষ্টিকোণ,
প্রাসাদের অলিন্দ থেকে হাসিমুখে হাত নেড়ে
যে সব শোকের দৃশ্য চোখে পড়ে না,
হয়তো কবির চোখ পেয়ে গেলে দেখবেন রাজা তা তখন।
এই দেহ এ দেশকে দিয়ে যেতে চাই ।
এ স্বপ্ন দেখে যাবো আমি আমরণ।