বাঙ্গালী অমরত্ব লাভ করিয়াছে। রাজনীতির মাকাল ফল খাইয়া জীবনের প্রতিটি হওয়া না হওয়ার পিছনে রাজনীতির দুরহ অভিসন্ধির নিবিড় যোগ খুঁজিয়া পাইয়াছে।এবং মৃত্যুর মত চরম সত্যকে গোপনে বিগত চার –পাঁচ মাসে সুকৌশলে জয় করিয়া লইয়াছে। নারায়ণ।নারায়ণ।
নারায়ণ নাভির পদ্ম দিয়া কান খুঁচাইতেছিলেন। নারদের কথা শুনিয়া পদ্মটিকে মুখের মধ্যে পুরিয়া কহিলেন- “সকাল সকাল ইয়ার্কি আমার পছন্দ নয়।মিথ্যে খবর ছড়িয়ে টি.আর.পি বাড়াতে এসেছ? জার্নালিজমে এই শিখেছিলে?”
নারদ কান ধরিয়া,জিভ কাটিয়া কহিল- “প্রভু,ক্ষমা করুন। মিথ্যা বলিয়া ভোট চাইনা। চিত্রগুপ্তের জাবদা খাতাটি নিজে উলটে দেখে এসেছি। চাইলে আপনি যাচাই করে নিন”।
নারদের কনফিডেন্স দেখিয়া নারায়ণ ভ্রু কুঁচকাইয়া শিবকে ফোন লাগাইলেন। “কি ব্যাপার মহাদেব? স্বর্গে তেত্রিশ কোটি রেখে এমনিতেই ওভারপপুলেশনে ভুগছি। তার ওপর ঝগড়ুটে রাজনীতিক বাঙ্গালিগুলোকে কোন আক্কেলে তুমি অমরত্ব দিয়েছ?”
সারারাত গাঁজার টানে শিবের এক্কেবারে “বোম-ভোলে” অবস্থা। নারায়ণের ফোনে নেশার দফারফা। প্রচন্ড রাগে শিব যেই না নটরাজ হইয়াছেন হাতের মোবাইল ধরণী লইল। ওপারের কথা কর্ণে পশিল না।
নারায়ণ এবার ব্রহ্মাকে ফোন করিলেন। কিছু বলার আগেই ব্রহ্মার ফোনে ইন্দ্রের গলা- “ নারদ এই খবর নিয়ে আমাদের কান আগেই বাসি করেছে। আমরা তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম”।
সকলে মিলিয়া ধর্মরাজের কাছে উপস্থিত।চিত্রগুপ্তের খাতা উলটাইয়া সকলের চোখ বিস্ফারিত। প্রতিটি বাঙ্গালীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে একটাই কথা লেখা। “এমনিতে মরিত না। ডাক্তারের গাফিলতিতে মৃত্যু ঘটিয়াছে”।ডাক পড়ল চিত্রগুপ্তের। কাঁচুমাচু মুখ করিয়া চিত্রগুপ্ত কহিল- আমার কোনো দোষ নাই।বাংলা সংবাদপত্র হতে জানিয়াছি।
এত কর্মকান্ড করিয়াও পুরুলিয়ার সুচবিদ্ধ শিশুর মৃত্যুর কারণ “চিকিৎসার গাফিলতি”।
সকলে হাঁ হাঁ করিয়া উঠিলেন। চিত্রগুপ্তের মাহিনার চুয়ান্ন শতাংশ কাটিয়া লইবার দাবী উঠিল। দেবাদিদেব নটরাজকীয় দশাতেই চিত্রগুপ্তের মাথায় গাঁট্টা মারিলেন। গজানন রাগে কানের মাথায় ফোঁস করিতেই চিত্রগুপ্ত কাঁদিয়া কহিল-“আমার দোষ কি? নারদ তো জার্নালিজমের দেবতা। ওকেই ধরুন না কেন”?
বিপদ বুঝিয়া নারদ পালানোর তাল খুঁজিতেছিল। গনেশের লম্বা শুঁড় তাঁকে পাকিয়ে ধরিয়া আনিয়াছে।
দেব-দেবীদের ধমক খাইয়া নারদ সোজা ধর্মরাজের পায়ে আছড়াইয়া পড়িয়া কহিল “এ আমি আপনার জন্য করেছি স্যার। মর্ত্যে কেউ মারা গেলেই যমরাজের দোষ দেয়। চিৎকার করে আপনার নামে গালমন্দ পাড়ে। এ আমার সহ্য হয়না। তাই আপনার মান বাঁচাতে আমি সব দোষ ওই স্বঘোষিত ভগবান (থুড়ি ডাক্তার) বাবুদের উপর দিয়ে দিয়েছি, স্যার।এতে আমার টি.আর.পি. বেড়েছে। আপনারও মান বেড়েছে। আপনার ডিপার্টমেন্টের মরণের কারণ খোঁজার ঝক্কি সামলাতে হচ্ছেনা”।
নারদের কথা শুনিয়া সভা নিশ্চুপ হইল।
ধম্মরাজ অশ্রুসজল চোখে নারদের দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া প্রকম্পিত ওষ্ঠাধর ফুলাইয়া নারদকে বুকে টানিয়া কহিলেন “ দিন রাত মড়া নিয়ে কারবার। তাও নাম নাই। কেউ তো অন্তত পাশে আছে।”
ধম্মরাজের এহেন কীর্তি দেখিয়া ব্রহ্মা কহিলেন “ এ অন্যায়। একের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া ধম্মে সইবে না। ধর্মরাজ কর্তব্যে বিচলিত হবেন”।
তাহলে উপায়? সবাই মহাদেবের দিকে তাকালেন। মহাদেব ছিলিমে তা দিয়া খৈনি দলিতে দলিতে কহিলেন “ কর্তব্যের চুলোয় আগুন। এ জগতে মৃত্যুই একমাত্র সত্য। জন্ম নয়। প্রতি মৃত্যুর দায় একার কাঁধে নিয়ে যমের বাপবাপান্ত হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। তার থেকে বরং মর্ত্যের নীলকন্ঠ ডাক্তারদের ঘাড়ে মৃত্যুর দায় চাপানো হোক। তাছাড়া ডাক্তাররা কয়েক পাতা আউড়ে আমাদের অধিকারে ভাগ বসাচ্ছে। তার বেলা? এমনিতেই মর্ত্যধামে জনবিষ্ফোরণ। মৃত্যুহার বাড়ালে তবেই অমরনাথে ভিড় কমবে। সব্বাইকে দর্শন দিতে দিতে একই পোজে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।কোমরে ব্যথা ধরে যায়। জালি কোম্পানির ব্যথার মলমে কাজও তথৈবচ। ভিড় কমলে সুখে দুটান দেওয়া যায়”।
কিন্তু ভিড় কমলে গনেশের দুধের জোগান কে দেবে?
নারদ এতক্ষনে সাপোর্ট পাইয়া গদগদ হইয়া কহিল “ কাকা,আমি তো আছি। টি.আর.পি.-র আধা শতাংশ তোমার জন্য”।
সকলে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিলেন। মৃত্যুর কারণ আর ভক্তজনে আলাদা আলাদা করিয়া ব্যাখ্যার প্রয়োজন নাই। জন্মহার কমানোর চাপ ব্রহ্মার মাথা হইতে নামিল। মর্ত্যের দখলিকৃত স্বর্গধামগুলি পুনরায় ভগবানের বাসযোগ্য হইবে ভাবিয়া সকলে সম্মতি দিলেন।
কিন্তু অমরত্বের কি হইবে? নেতৃবৃন্দ যে গত ভোটে অমরত্ব প্রদানের কসম খাইয়াছিলেন। নারদের কাছে সে উপায়ও রহিয়াছে। নারদ মর্ত্যে ফোন করিয়া কহিলেন “পরের জনসভায় ঢোঁক গিলে বলতে হবে-অমরত্ব তো দিয়েই দিয়েছি। চিকিৎসার প্রহসন যত মৃত্যুর কারণ। ডাক্তারবাবুরাই স্টেথোস্কোপের প্যাঁচে অমরত্বের গলা টিপে ধরে রেখেছেন”। বুদ্ধিমান জনগণ বাকিটা বুঝিয়া লইবে।
খবর পৌঁছিল মর্ত্যের স্বাস্থ্যদপ্তরে। ডেথ সার্টিফিকেটে সংশোধনী আনা হইল। মৃত্যুর কারন দর্শানোর স্থানে কালো হরফে মোটা মোটা অক্ষরে ছাপানো হইল “ এমনিতে মরিত না। চিকিৎসকের গাফিলতিই মৃত্যুর কারণ”।
সকলে হাসিমুখে প্রস্থান করিলেন।
শুধুমাত্র স্বর্গের চিকিৎসক বিধান বাবু আড়ালে আসিয়া মেডিক্যাল কাউন্সিলে ফোন করিলেন। স্বর্গের বিধান জানাতেই চিকিৎসকেরা রে রে করিয়া উঠিলেন। বিধান বাবু ঢোঁক গিলিয়া আশ্বস্ত করিলেন – রোগীর পরিজনেদের হাতে মৃত্যু ঘটিলে ইন্দ্রের কাছারীকে বলিয়া স্বর্গের সাউথফেসিং ওয়ান বি.এইচ.কে. পাওয়াইয়া দিবেন। এছাড়া চিকিৎসকের মৃত্যুর কারণ হিসেবেও লিখিয়া দিবেন “এমনিতে মরিত না। চিকিৎসকের গাফিলতিই মৃত্যুর কারণ”।
Absolutely true confession. Any death for any reason falls on the Dr to safeguard the admin and top level people in Health Dept. Look at Kota children death – 120 death in 35 days in a single hospital. Reason – Chinese non functional equipments !!!