একটা গোটা মেলা চলে গেল, আর দু’চারটে গল্প তৈরি হবে না, হতেই পারে না। নিউবারাকপুর বইমেলারও অনেক গল্প। কোনোটা চোখের সামনে, কোনোটা চোখের আড়ালে।
সমাদৃতার লড়াইয়ের গল্প, দীপকদাদের বাণ মারার গল্প, সোমনাথকাকুর প্রতিটি সেমিনারে জামাই ঠকানো প্রশ্নের গল্প….. তবে সেসব গল্প পরে হবে। প্রথমে আমার কুকুরের কামড় খাওয়ার গল্প শোনাই। অথবা নেহাৎই এক না’মানুষ প্রেমের গল্প।
কুকুরের সাথে আমার আত্মিক বা তাত্ত্বিক কোনোরূপ সম্পর্ক নেই। তবে কিছুটা দান্তিক সম্পর্ক আছে। কুকুর বারবার আমাকেই কেন কামড়ায় কে জানে? আমাকে কোনো ভাবেই ছিঁচকে চোরের মতো দেখতে না। ডাকাতের সাথে চেহারা তবু কিছুটা মেলে।
রাত আটটা নাগাদ মেলার সামনের এক দোকানে আরো কয়েকজনের সংগে চা-টা খাচ্ছিলাম। একটা নেড়ি কুকুর ঘোরাঘুরি করছিল, সেটাকে বিস্কুট খাওয়াতে খাওয়াতে ঘাড়ে হাত বোলাচ্ছিলাম। সে ব্যাটা বেশ আদর খাচ্ছিল।
এমন সময় আরেকটা নেড়ি কোথা থেকে এসে ঘ্যাঁক করে কামড়ে দিয়েই পালালো।
সে তো কামড়েই খালাস, তারপর হাজার ফ্যাচাং। বাড়ি গিয়ে চোরের মতো সাবান দিয়ে ক্ষতস্থান ধুতে গিয়ে রুপালীর কাছে ধরা পড়লাম। তারপর যা ঘটার তাই ঘটলো। সেসব বিস্তারিত বলে আর আপনাদের ধৈর্য চ্যুতি ঘটাতে চাই না।
পরের দিন রোগী দেখে মেলায় পৌঁছাতে দেরী হয়েছিল। চায়ের দোকানে চা খেতে গিয়ে আমাকে কুকুরে কামড়ানোর অনেক থিওরি শুনতে পেলাম। সবচেয়ে আকর্ষণীয় যেটা সেটা হলো, আমি নাকি যে কুকুরটাকে আদর করছিলাম সেটা মেয়ে নেড়ি। তাতে জেলাস হয়ে ছেলে নেড়িটা আমায় কামড়ে দিয়েছে।
আমি আপত্তি জানাতে যুক্তিবাদী এক আঁতেল কাকু বললেন, পরীক্ষা ছাড়া কোনো কিছু মেনে নেওয়া উচিৎ না। মেয়ে নেড়িটা এখনো দোকানের সামনে শুয়ে রয়েছে। তুমি আরেকবার গায়ে হাত বোলাও। তাহলে একেবারে হাতে কলমে পরীক্ষা হয়ে যাবে। তাছাড়া তুমি তো টীকা নিচ্ছই। তোমার আর ভয় কীসের।
ন্যাড়া বেলতলায় একবার গেলেও যেহেতু আমি ন্যাড়া নই, তাই কুকুরটার গায়ে হাত বোলাতে লাগলাম। সকলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। যেন হিন্দি সিনেমার ভিলেন নায়িকার সাথে বদমাইশি করার চেষ্টা করছে। এখনি নায়ক ঝাঁপিয়ে তাকে বাঁচাবে। কিন্তু সকলকে হতাশ করে নায়ক এলো না।