বাচ্চারা দাঁতের সমস্যাতে প্রায়শই ভোগে এবং দাঁতের যন্ত্রণা যথেষ্ট কষ্টদায়কও বটে। আসুন দেখে নেওয়া যাক বাচ্চাদের মুখের পরিচর্যা করার জন্য কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে..
১. একদম কোলের বাচ্চা যাদের দুধের দাঁত ওঠেনি তাদের মাড়ি বা গাম প্যাড ভালোভাবে পরিষ্কার করা নরম কাপড় দিয়ে প্রতিবার খাওয়ানোর পর পরিষ্কার করে দেওয়া উচিত।
২. অভিভাবকদের অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিৎ বাচ্চা মুখে পরিষ্কার জল ছাড়া অন্য কোনো জুস বা দুধে ভর্তি ফিডিং বোতল বা সিপি কাপ নিয়ে যেন না ঘুমিয়ে পড়ে, এতে দীর্ঘক্ষণ মুখে শর্করাযুক্ত খাবারের উপস্থিতির জন্য ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। বাজারে উপলব্ধ প্যাকেটের জুস বা অন্যান্য খাবারে সেভাবে কোনো পৌষ্টিক গুণাগুণ থাকে না, ২ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধই বাচ্চার জন্যে সবথেকে ভালো।
৩. ৬ মাস বয়সে বাচ্চার প্রথম দাঁত আসার পর আস্তে আস্তে বুকের দুধের সাথে যথেষ্ট পৌষ্টিক গুণাগুণ সম্পন্ন সবজি পেস্ট করে বাচ্চাকে খাওয়ানো উচিৎ এতে বাচ্চার দৈহিক বিকাশ ভালোভাবে হয়।
৪. ২ বছরের বেশি বয়সি বাচ্চাকে বুকের দুধ বা ফিডিং বোতল, সিপি কাপ দেওয়া অনাবশ্যক, এতে দুধের দাঁতের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে যাকে ডাক্তারী পরিভাষায় “Early Childhood Caries” বলা হয়। এতে পরবর্তীকালে স্থায়ী দাঁত যেগুলো উঠবে সেই দাঁতের ক্ষতি হয়।
৫. একটু বড় হলে বাচ্চাদের অভিভাবকদের খেয়াল রাখা উচিৎ জলে ফ্লুরাইড নামক যৌগের পরিমাণ ঠিক মতো আছে কিনা। বর্তমানে স্কুল ওয়াটার ফ্লুরিডেশন প্রকল্পে জলে ফ্লুরাইডের পরিমাণ মাপমত করার ব্যবস্থা হচ্ছে এবং WHO-এর মতে জলে ফ্লুরাইডের পরিমাপ ০.৫- ১ পি.পি.এম হওয়া উচিত। যদি তেমন পরিমাপ না থাকে তাইলে নিকটবর্তী ডাক্তারবাবুর পরামর্শ অবশ্যই নেওয়া উচিত ফ্লুরাইড সাপ্লিমেন্ট যুক্ত টুথ পেস্ট প্রয়োজন হবে কিনা।
৬. ৩ বছরের ছোট বাচ্চাদের ফ্লুরাইড যৌগের প্রয়োজন পড়ে না তেমন, টুথ পেস্ট তখনই দেওয়া উচিত যখন বাচ্চা থুতু বাইরে ফেলতে শিখবে এবং সেটা গিলে নেবে না। দুধের দাঁত ৬ মাসে প্রথম ওঠার সাথে সাথে নরম দাঁড়ার (সফট ব্রিস্টল) ব্রাশ পরিষ্কার জলে ভিজিয়ে হালকা করে ব্রাশ করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন এবং ৩ বছর বয়স অব্দি সেভাবেই ব্রাশ করানো দরকার, চাইলে পরে বাচ্চার বয়স ১.৫ – ২ বছর হলে একদম মটর দানার সাইজের বাচ্চাদের পেস্ট (ফ্লুরাইড ছাড়া) নিয়ে পেস্টের একটা হালকা প্রলেপ তৈরি করিয়ে ব্রাশ করানো দরকার। ৩ থেকে ৬ বছরের বাচ্চাদের ফ্লুরাইড ছাড়া বা প্রয়োজনে খুব সামান্য ফ্লুরাইড যুক্ত পেস্ট দিয়ে ব্রাশ করানো উচিত এবং ৭ বছরের বেশি বাচ্চাকে ফ্লুরাইড যুক্ত পেস্ট ব্যাবহার করতে দেওয়া উচিত। তবে দেখে নিতে হবে বাচ্চা যেন তা গিলে না ফেলে এবং বাইরে থুতু ফেলতে পারে।
৭. বাচ্চারা মিষ্টি জিনিস খেতে খুব পছন্দ করে, তবে অভিভাবকদের খেয়াল রাখা উচিৎ বাচ্চাদের যখনই কোনো মিষ্টি, আঠালো খাবার দেওয়া হচ্ছে সেটা যেন কোনো ভারী খাবার বা হেভি মিলের পরেই দেওয়া হয় এবং তারপর যেন ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করে দেওয়া হয়।
৮. দিনে ২ বার ব্রাশ করানোর অভ্যেসটা ছোট থেকেই তৈরি করা দরকার বাচ্চাদের মধ্যে এবং তার সাথে ফ্লসিং করে দাঁতের মাঝে জমে থাকা খাবারের টুকরো বের করে নেওয়ার সঠিক পদ্ধতি শেখানো উচিৎ।
৯. বাচ্চাদের টুথ ব্রাশ বাছার সময় নরম দাঁড়ার ব্রাশ নেওয়া উচিৎ এবং ব্রাশ করাটা হালকা করে সার্কুলার মোশনে অর্থাৎ বৃত্তাকারে
করা উচিত, দাঁতের মাঝের খাবারের টুকরোর জন্যে ব্রাশ দিয়ে ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেল করে হালকা করে স্ট্রোক করা উচিত। নিমের দাঁতন, ছাই, বাজারে উপলব্ধ গুঁড়ো মাজন এসব দিয়ে ব্রাশ করা উচিত না, এতে দাঁতের ক্ষয় হবার প্রবণতা থাকে। বাচ্চাদের ০.৩৫% Sodium Monoflurophosphate টুথ পেস্ট দিয়ে ব্রাশ করানো যেতে পারে।
১০. বাচ্চাদের কিছু কিছু অভ্যাস থাকে যেটা অনেক বয়স বধি দেখা যায়, যেমন আঙ্গুল চোষা, মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া, দাঁতে দাঁতে কিড়মিড় করা প্রভৃতি। এধরনের সমস্যা দেখলে নিকটবর্তী ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন কারণ এতে দাঁতের যেমন ক্ষতি তেমনি দাঁতের গঠনেরও প্রভূত ক্ষতি হয়।
সর্বোপরি বাচ্চাদের দুধের দাঁতের যত্নের ওপর নির্ভর করে স্থায়ী দাঁতের সুস্থ সবলতা। এজন্য বাচ্চাদের দাঁতের সমস্যাকে কখনোই কম গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিৎ না। ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন অভিভাবকদের এবং নিয়মিত বাচ্চাদের দাঁতের পরিচর্যার ওপর নজর রাখা উচিৎ।
ভালো লিখেছেন ডাক্তারবাবু। উপকৃত হলাম।
Osadharon. Onek patient upokar pabe. Dant somporke ei sob choto choto byapar gulo jana uchit . Janen onekei. Sohoj sorol vasai bojhanotai asol
ভালো লিখেছেন।
Dat er jotno kivabe nite hobe bachader seta khb valo korei uposthapona kora hoyechhe akhane.Asha kori ate bachha ra khb upokrito.
Khub Bhalo.