ভ্যালেন্টাইন ডে’র কথা। সেদিন ভেবেছিলাম দিনের শেষে বেশ বসরাই গোলাপের খুশবু লিখব। ঘুম ঘুম চাঁদ মাধবীরাতের মায়াবী কোন প্রেমকহানি। সরসীর বুকে কুমুদিনী দুলে দুলে হাসবে। অথবা জেন Z-দের ম্যানিকিউরড পিঙ্ক নেইল আর্টে লাভ সাইন আর লিপস্টিক ছোপের বিজ্ঞাপনকথা।
সেসব কি আর কপালে আছে! যত্ত সব বেঢপ কহানি আমার চোখেই পড়বে আর ডায়েরিতে লিখে রাখতেই হবে।
সকালের চেম্বারে শেষ বেলায় এলেন দুই মহিলা। প্রথম জন মধ্যবিত্ত ঘরোয়া বউ টাইপের, ফর্সা মিষ্টি হাসিখুশি, সাজগোজ নেই কিন্তু পরিচ্ছন্ন পরিপাটি, কথাবার্তায় বোঝা যায় শিক্ষাদীক্ষা আছে। দ্বিতীয় জনের সবকিছু ঠিক আগের বিপরীত শব্দ। শনের নুড়ি চুল, তেলচিটে সাতজন্মে না কাচা শাড়ি –তিনিই পেশেন্ট। দুজনে কে কার কি হয় মেলাতে পারছিলাম না। এটুকু বুঝলাম পেশেন্টের ট্যাঁক এক্কেবারে ফাঁকা, স্বামী সগ্গে, ছেলে বৌ থাকতে খেতে দেয় –চিকিৎসা খরচ দেবে না বা দেবার সঙ্গত নেই।
বললাম –আগেই সরকারি হাসপাতালে গেলেন না কেন, ওষুধ পেতেন ফ্রিতে?
পেশেন্ট মহিলা বললেন –একা বাসে চড়তে পারি না যে বাবা।
বোঝা গেল আরো কিছু গলদ। পায়ে তো একেবারে দগদগে ঘা বাঁধিয়ে এসেছেন –বেশ দেরী হয়ে গেল যে।
কি করব বাবা, নেকাপড়া জানি না। সেই শুনে শুনে কান পচা কথা।
একবার আমাদের সরকারি হাসপাতালে, পাঁচ নম্বর ডেলিভারি হতে আসা মহিলার স্বামীকে ভোকাল রামধোলাই দিচ্ছিলেন সিস্টার দিদিমণি, সে -ও বলেছিল –ক্যা করেগা গরীব আদমী !
যাই হোক মোদ্দা কথা পেশেন্ট মহিলাটি বেশ বিপাকে ছিলেন। সঙ্গের বউটি, কে হয় জানিনা –দেখাতে নিয়ে এসেছেন। এ পর্যন্তও না হয় ঠিক ঠাক ছিল –অনেকেই করেন। এবার পেশেন্টকে যখন দেখতে শুরু করলাম — গার্জিয়ান মহিলা ঝটপট পেশেন্টের পা খপ করে প্রায় নিজের কোলের উপর তুলে ধরে, খুউব যত্ন করে দেখাতে লাগলেন। পূঁজ রক্ত ভরা ভয়ানক দগদগে ঘা –যে কেউ পরমাত্মীয়ও হাত দিয়ে ছুঁতে দ্বিধা করবে। বহুবছর ধরে মানুষ দেখছি তো –একটু অবাক হলাম না বললে ভুল হবে।
যাই হোক–শেষ মেশ সব পরীক্ষা করে দেখা গেল দীর্ঘদিনের অযত্ন, সুগার না মাপা, সুগারের ওষুধ না খাওয়া, খালি পায়ে হাঁটা, অপরিচ্ছন্ন থাকা এইসব মিলে গোলটা বেঁধেছিল। ওষুধ পত্তর দিয়ে সারানোও গেল। পেশেন্টকে নিয়ে এসেছিলেন যিনি, তিনি নাকি বাড়ি গিয়ে ড্রেসিংও করে দিয়ে এসেছেন।
দিন দশেক পরে, পরের বার পরীক্ষার দিনে ঘা সেরে যাওয়ায়, দুজনের অনুমতি নিয়ে ছবি তোলার সাহসও হল আমার।
আসল গল্পটা হল– প্রথমদিনে গার্জিয়ান মহিলার ব্যতিক্রমী সুশ্রূষার হাতটি আমার মনে ছাপা ছবি হয়ে রইল! কারণ, সেদিন পেশেন্টকে দেখার শেষে যখন জিজ্ঞাসা করেছিলাম –উনি আপনার কে হন? পেশেন্ট মহিলা বললেন –“আজকেই বাসস্ট্যান্ডে আলাপ। আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি দেখে এই দিদি বাসভাড়াটাও নিজে দিয়ে আমাকে হাত ধরে নিয়ে এলেন গো।”
সঙ্গী বউটি বললেন — “বাজার করে ফিরছিলাম, ওনার পায়ের অবস্থা দেখে সবজির ব্যাগ বারান্দায় নামিয়েই ওনাকে নিয়ে এসেছি। যাই, একটা বেজে গেল –এখন গিয়ে রান্না বান্না করে, তবে বাড়ির লোকজনকে খেতে দেব, শাশুড়ীমার বয়স হয়েছে, ছেলেটাও স্কুল থেকে ফিরে বসে থাকবে।”
দরজার ফাঁকে তার বিলীয়মান শাড়ি দেখতে দেখতে মনে হল–দুনিয়াটা এইসব বেআক্কেলে মেয়েদের আঁচলে বাঁধা আছে।
Enarai duniyata ke bnachiye rekhechhen. Khub bhalo laglo pore
Beautiful