(একটি হলেও তো হতে পারে ধরণের জোর করে ভাবা কল্পগল্প)
__________
– বাবা, ও বাবা…
-তোকে না কতবার বলেছি আমি তোর বাবা না , আমি তোর কেউ না।
-আমি কি তোমাকে তবে কেউ না বলে ডাকবো ?
– ধ্যাৎ, না না, ওটা কেমন যেন শোনাচ্ছে তার চেয়ে বাবাই বল বরং ।
– মানে যেভাবে আমি জন্মালাম কিছুটা তো তোমার থেকেই না বলো বাবা ?
– হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস কিন্তু …
– কিন্তু কিসের? তোমার মনের থেকেই তো জন্মেছে আমার চেতনা !
– ঠিক আমার থেকে না রে। আসলে এই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কত রকমের পাথর আর ধুলো। সেই পাথর এর উপর যুগ-যুগান্ত ধরে আকাশ থেকে কত রকমের কত রকমের আলো। সূর্যের কথা তো ছেড়েই দিলাম। আরও কত। সেইসবের যোগ-বিয়োগে, নানারকম বিকিরণের থেকে শক্তি নিয়ে তৈরি হয়েছিল আমাদের অনেক আগের পূর্বপুরুষ। তারপর তার থেকে আস্তে আস্তে আমি… আমরা… আমাদের থেকে তোরা। আর আমাদের জানা গুলো ওই যাকে বলে স্মৃতি সেগুলো সেগুলো আমাদের থেকে তুই পেলি!
-হ্যাঁ বাবা ওই যে নীলচে গোল মতন একটা কি যেন দেখা যায় আকাশে ঝুলে আছে, ওখানেও আমাদের মত এরকম আছে?
– নারে, আমি আমি যতদূর জানি ওখানে যারা আছে ,
তারা বাতাস জল মাটি পাথর আর সূর্যের আলো এইসব মিলে অন্য রকমের অন্য কিছু। ওদের বাঁচতে ওই সব লাগে।
– তাহলে আমরা এরকম কেন? আমাদের কেন বাতাস লাগেনা?
– যেখানে যেরকম। যেখানে বাতাস নেই সেখানে আমাদের মতন। যেখানে পাথর নেই সেখানে হয়তো আরেক রকম। এই সবকিছু মিলেই সেটাকে বলে প্রাণ!
– ওখানেও বাবার সঙ্গে সন্তান কথা বলে? এই যেমন আমি আর তুমি বলছি! মানে ভাব বিনিময়?
– প্রাণ তো অনেক রকমের। ও’খানের সেরা প্রাণ যেটা, যারা সবচেয়ে বুদ্ধিমান, তাদের বলে মানুষ। সেই মানুষের বাবা আর সন্তান, হ্যাঁ কথা বলে বৈকি। বাবা ছেলে কথা বলে। মা ছেলে কথা বলে। ভাই ভাই কথা বলে। ভাই বোন কথা বলে । বন্ধু পরিচিতরা কথা বলে।
– ভাই বোন কাকে বলে বাবা ?
– সে অন্য রকম ব্যাপার। আমাদের যেমন ছেলে মেয়ে এরকম কোন আলাদা কিছু নেই ওদের মধ্যে সেই সব আছে। সেই জন্যই তো বাবা-মা ভাই-বোন এই শব্দগুলো এসেছে ।
– আমরা যেরকম কথা বলি ওরাও কি সেরকম ভাবেই কথা বলে
– না রে! এই আমরা যেমন তুই আমি কথা বলছি তরঙ্গ দিয়ে। যে তরঙ্গ যেতে বাতাস লাগেনা কিন্তু ওদের ওখানে তো বাতাস আছে, ওরা সেই বাতাসে তরঙ্গ তুলে কথা বলে ।
– বাতাসে তরঙ্গ তুলে? কি মজা কি মজা। ওরা তবে আমাদের মতন এইরকম তরঙ্গ জানেই না , হ্যাঁ বাবা?
– জানে বৈকি জানে তো! ব্যবহার জানে। যদিও ব্যাপারটা অনেক পরে আবিষ্কার করেছে, জেনেছে। ওরা তার নাম দিয়েছে ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক তরঙ্গ। অবিশ্যি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ নাম দেবার অনেক আগে থেকেই ওরা তার ব্যবহারটুকু জানত। ওরা ওদের শরীরের ব্যবহারিক অঙ্গটাকে বলে চোখ। চোখ দিয়ে দেখে। আর বাতাসের তরঙ্গ শোনে কান বলে একটা যন্ত্র দিয়ে। ওই যে পৃথিবী বলে গ্রহটা সেখানে বাতাস আছে। বাতাসের তরঙ্গ তুলে ওরা শব্দ শোনে। আবার বাতাসে ছোট ছোট অনু মিশিয়ে ওরা গন্ধ শোঁকে। আমাদের তো বাতাস নেই। সেই জন্য ওই এক রকমের তরঙ্গ দিয়েই আমরা কথাও বলি দেখার কাজটাও করি। গন্ধ পাই না। কিন্তু তার দরকারই বা কী? মোটমাট ওরা ওদের মতো ভালো আছে। আমরা আমাদের মতো ভালো আছি।
– বাবা ও বাবা …
– আবার কি হলো? দেখছিস না সূর্যটা আড়ালে চলে যাবে একটু বাদেই। যাবার আগে আর একটুখানি শক্তি নিয়ে নিই এই আলো থেকে দুজনে। নইলে যখন অন্ধকার নামবে তখন তোকে না পাবো দেখতে না পারবো তোর কথা শুনতে।
– বাবা তুমি না বলেছিলে আমাকে একটা খেলনা দেবে ওই নীলচে গ্রহের মানুষের ছেলেরা যেরকম খেলনা নিয়ে খেলে!
– হ্যাঁ দেবো তো! সেই জন্যই তো শক্তি জমাচ্ছি। শক্তি না জমালে খেলনাটা ধরে আনবো কি করে?
– খেলনাটা ধরে আনবে, হ্যাঁ বাবা? কি করে ধরবে?
– আরে, সেটাই তো মজা। ওই মানুষগুলো আমাদের এখানকার ব্যাপার-স্যাপার জানবে বলে একটা খেলনা গাড়ি পাঠিয়েছে। সে গাড়িটা আবার, যারা পাঠিয়েছে তাদের সাথে কথা বলে এই আমাদের মতন তরঙ্গ দিয়ে ।
– খেলনাটা কি করে ধরবে বাবা?
– সহজ তো। আমার এখান থেকে তরঙ্গ ছুঁড়ে ওর যে তরঙ্গ ছাড়ার ব্যবস্থা টা সেটুকু দখল করে নেবো আর তারপর ওকে বাধ্য করবো আমার কথা মত চলতে। তখন ওটা এগিয়ে আসবে আমাদের কাছে আর তুই তখন খেলনাটা নিয়ে খেলবি
– খেলনাটা ওরা কি জন্য পাঠালো বাবা?
– ওরা আসলে জানতে চাইছে এখানে কিরকম কি পাথর রয়েছে। জল আছে কি না। আরও কী রয়েছে। ওরা এখানে এসে থাকতে পারবে কিনা। এই সব। কিন্তু আমরা যে আছি সেটা ওরা জানে বলে মনে হয় না।
– একদিন হয়তো আমরা যে আছি জানতেই পারবে। না বাবা?
– ওদের জানতেই দিলে চলবে না যে এইখানে তুই আমি রয়েছি। এইখানে আমাদের মত এক রকমের প্রাণ রয়েছে। আমরা যেখানে আছি, এখানে যে প্রাণ আছে জানতে দেব না। সেই জন্যই তো খেলনাটা ওদের থেকে কেড়ে নিলাম আমি।
– বাবা খেলনাটা যখন আমার কাছে আসবে কি নাম দেব ওটার?
– নতুন নাম দেবার দরকার নেই বুঝলি ওরা তো নাম দিয়েই দিয়েছে। আমরাও ওই নামেই ডাকব ওকে… বিক্রম!
★
The Chandrayaan 2 Vikram lander was targeted for a highland smooth plain about 600 kilometers from the south pole; unfortunately the Indian Space Research Organisation (ISRO) lost contact with their lander shortly before the scheduled touchdown (Sept. 7 in India, Sept. 6 in the United States).