ইনকিলাবের কথা বললেই, আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে চাটগাঁ’র বেঁটেখাটো মাস্টারমশাই,
উনিশশো তিরিশের আঠারোই এপ্রিল গণেশ লোকনাথ আর তারকেশ্বরকে নিয়ে যাঁর অসম লড়াই,
অথবা লাহোর জেলে দাস ক্যাপিটালের পাতা ওল্টাচ্ছেন ভগৎ
সিং, ক’ঘন্টা পরে যার ফাঁসি।
কেউ বিপ্লবের শ্লোগান তোলেন যখন, তখন আমি জয় মাস্টারদা অথবা জয় ভগৎ বলতে ভালোবাসি।
মা মাটি মানুষের বাড়বাড়ন্ত জয়ধ্বনি শুনে মনে হয়, তাঁরা কি বিদ্যাসাগরের কথা বলেন?
মা’কে ভালোবাসার কথা ছেড়েই দিলাম, অগণিত বিধবার দুঃখ ঘোচাতে যিনি সমাজের বিপরীত দিকে চলেন,
তিনি যে মাটি আর মানুষেরও, সে কথা না বললেও হয়। তবু যদি সংশয় থাকে কিছু পড়ে,
একটু কষ্ট করে ঝাড়খন্ড্ যান। দেখুন আঠেরো বছর কি করে গেছেন তিনি কার্মাটঁড়ে।
তাই , যখনই আপনারা মা মাটি মানুষের জয় গেয়ে হেঁকে যান রণে বনে জলে জঙ্গলে,
আমিও তখনই ঠিক জোড়হাত মাথায় ঠেকিয়ে, জয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ফেলি বলে।
আজকাল বন্দেমাতরম যে সব মুখে শুনি, মাঝে মাঝে রাগে গা রি রি করে ওঠে,
ও নাম নিয়েছিলেন ক্ষুদিরাম আর কানাইলাল। বিনয় বাদল আর দিনেশের যে শ্লোগান ঠোঁটে,
সে কি মেকি ভোটভিক্ষায় কাজে আসে, বলুন তো! তবু আমার কাছে সে গলা মাতঙ্গিনী হাজরার,
পুলিশের গুলি তাঁর বুক ফুঁড়ে গেছে, তবু ও গান্ধীবুড়ি তেরঙা সামলে রেখে বন্দেমাতরমে দেন শেষ শ্বাস তার।
নিতান্ত অভ্যাসে বন্দেমাতরম বলে চেঁচিয়ে ওঠেন যতবার যেখানেই যিনি,
আমি সেই উনিশশো বিয়াল্লিশে ফিরে গিয়ে মনে মনে বলে উঠি
‘ জয় মাতঙ্গিনী!’
সীতা বিনা রাম আর রাধা বিনা শ্যাম ইষ্টনাম নয়, রাজনৈতিক শ্লোগান কেবল,
এ কথাটা ভক্তজন কবে বুঝবেন জানা নেই, হয়তো ইচ্ছাকৃত নারীদের নাম মোছা ছল,
সেই কথা থাক। আমার শ্রীরামও পরিবার ছেড়ে একাকী লড়েছেন ,
তবে অগ্নিপরীক্ষার বিরুদ্ধে,
সমাজের দশ মাথা আর বিশ হাতের কারবারীরা সবাই ছিলেন বিপরীতে যুদ্ধে,
তার ওপরে কোনো বানরসেনাও জোটেনি। তবু তিনি একা নিভিয়ে দিয়েছেন শতাব্দী ধরে চলে আসা অন্যায়,
কেন জানিনা, জয় শ্রীরাম শুনলে আপনিই বলে উঠি, ‘ জয় শ্রীরামমোহন রায়!’
প্রতীকেরা যেই দেন তাঁদের শ্লোগান, আমার মগজে তার রঙ বদলায়।