Skip to content
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

চেক-মেট

416890748_7613903738621955_1544595044000688408_n
Dr. Aniruddha Deb

Dr. Aniruddha Deb

Psychiatrist, Writer
My Other Posts
  • January 14, 2024
  • 7:48 am
  • No Comments
মাই হার্ট লেপ্ট — এই ইংরেজি কথাটার মানে আমি বুঝতাম না। মানে, ডিকশনারিতে কী লেখা আছে জানতাম, কিন্তু কী ধরণের আনন্দ পেলে মানুষের হৃদপিণ্ড হঠাৎ তাদের মুখে এসে হাজির হবে, তা মাথায় ঢুকত না। বুঝেছিলাম হঠাৎ, এক বাইশে জুলাইয়ের সন্ধ্যায় — যে দিনটা মনে রাখার আর কোনও কারণই ছিল না।
জানতাম, মেরি লু আবার ফিরে আসবে। আমার বন্ধুরা, বিশেষ করে শুভায়ু, বলত ওর কথা ভাবা ছেড়ে দে, গুপি। অ্যামেরিকান বন্ধুরা, কেবল সাদা চামড়া নয়, যারা বহু বছর, বা সারা জীবন এখানে আছে, বলত, একটা মেয়ের জন্য এমন হা-হুতাশ করার কোনও মানে হয়? ওরে, ও যে সমুদ্র থেকে এসেছিল, তাতে আরও অনেক মাছ আছে… এত হতাশ হোস না। অনেক বন্ধুকে বাদ দিয়েছিলাম জীবন থেকে — কেবল এই জন্যই। রয়ে গেছিল সবচেয়ে কাছের আর পুরোনো বন্ধু — বাবান। ও অন্তত কখনও বলেনি, মেরি লু আর আসবে না।
প্রায় তিন বছর পরে যখন একটা বার্‌-এ হঠাৎ ওকে দেখলাম, তখন এতটাই অবাক হয়ে গেছিলাম, যে সত্যিই বুঝেছিলাম, মুখে কী করে হৃদপিণ্ড পৌঁছে যায়। সে অবশ্য শুধু তিন বছর পরে মেরি লু-কে দেখেছিলাম বলে, তা নয়। স্যাক্রামেন্টো থেকে প্রায় পঁয়তাল্লিশ মাইল দূরে (এ দেশে থেকে থেকে আমার মাইলে হিসেব বলা অভ্যেস হয়ে গেছে। আমাদের হিসেবে সত্তর কিলোমিটার মতো) প্লেসারভিল-এর মতো এঁদো জায়গায় সখ করে মেরি লু…
অবশ্য তিন বছর আগেও আমরা এখানেই থাকতাম। ন-বছর হল চাকরি করি স্যাক্রামেন্টোতে, থাকি প্লেসারভিলে। দেশি বন্ধুবান্ধবরা হাসাহাসি করে, কিন্তু আমার প্লেসারভিল-ই ভালো লাগে… যাক সে কথা। মেরি লু-র কথায় আসি। আমার প্লেসারভিলের বাড়ি থেকেই চলে গেছিল। তিন বছরে দেখিওনি। চিঠি-চাপাটি-ক্রিসমাস-কার্ড দূর-অস্ত, ফোনও করেনি — এমনকি এই সেদিনও ফোনটা বন্ধই ছিল। ই-মেইলেরও উত্তর দেয়নি কোনও দিন। তার দর্শন তিন বছর বাদে… তা-ও আবার এই পুরুষ অধ্যুষিত মদিরালয়ে — বার্‌ — যেখানে একলা মেয়েরা একটা উদ্দেশ্যেই আসে!
মেরি লু বার-এ গিয়ে মদ খাওয়া পছন্দ করত না। মদ খাওয়াই পছন্দ করত না — ওর পাল্লায় পড়ে আমারই বরং বার্‌-এ যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বাড়িতে মদ রাখতাম। আজ মেরি লু নিজেই বার্‌-এ! চোখ সরাতে পারছিলাম না। বার থেকে দূরে কোনের টেবিলে আমি। এখান থেকে ঘরের সবটাই প্রায় দেখতে পাই। বার্‌টা তো বটেই।
একা-ই ছিল। বার্‌-এ যে অন্য তিনটি মেয়ে ঘোরাফেরা করছে, তাদের সঙ্গে ওর খুব একটা কথাবার্তা হচ্ছিল না। আমি চোখ দিয়ে গিলছিলাম। দেখতে একেবারে একই আছে। ঠিক সেই হাসি, সেই চোখের চাহনি, সেই গালে টোল… শুধু বদলেছে আচরণ। এত প্রগলভ ছিল না। হেসে হেসে দৃশ্যত অপরিচিত পুরুষের গায়ে ঢলে পড়ত না। আর মদ খেত না। খুব কালেভদ্রে — ঈস্টারে, থ্যাঙ্কসগিভিং-এ বা ক্রিসমাসে আধ গ্লাস ওয়াইন…
বার্‌ থেকে দূরে বলে আমার সঙ্গে চোখাচোখি হতে সময় লাগল। ততক্ষণে আমার দৈনিক বরাদ্দ দু-গেলাস মদের একটা শেষ করে ফেলেছি প্রায়। থমকাল। স্বাভাবিক। তারপরে লাস্যময়ী ভঙ্গীতে এ-টেবিল, ও-টেবিল ঘুরে এগোতে লাগল — খদ্দেরদের সঙ্গে ইয়ার্কি করতে করতে। এই মেরি লু আমার পরিচিত নয়। আমার চেনা মেরি লু সিরিয়াস, গম্ভীর, ঠাট্টা ইয়ার্কি ওর চলে না তা নয় — কিন্তু প্রগলভতা নেই। তিন বছরে অনেক বদলেছে।
বদলাক। তবু, ও মেরি লু।
ক্রমে আমার টেবিলের কাছে এসে ঘাড় বেঁকিয়ে, আড়চোখে তাকিয়ে বলল, “হাই, হ্যান্ডসাম!”
অ্যামেরিকার বার্‌-এ বহু অভিজ্ঞতার ফলে মেয়েদের এই ভ্রূভঙ্গী আর সম্বোধন আমার অপরিচিত না হলেও, এই মানুষটার ক্ষেত্রে দুটোই অবাক করা। তাই উত্তর দিতে দেরি হল। কিন্তু মুখে আহ্বান না থাকলেও আমার শরীরের ভাষায় নিশ্চয়ই কিছু ছিল, আমার উলটো দিকের চেয়ার টেনে নিয়ে বসে বলল, “আমাকে এক পাত্তর খাওয়াবে না?”
বললাম, “অবশ্যই… কী ইচ্ছা করো? তোমার প্রিয় বিষ কী?”
বলা বাহুল্য, কথাগুলো ইংরিজিতেই হচ্ছিল — তাই বাংলা করে লিখতে গিয়ে আটকাচ্ছে — ‘হোয়াট ইজ ইওর উইশ’ এবং ‘হোয়াট’স ইওর ফেভারিট পয়জন’ — কথাগুলোর সাদা-সাপটা বাংলা হয় না।
পয়জন কথাটা ব্যবহারের আরও একটা কারণ ছিল। মেরি লু মদকে বলত — বিষ। ডোন্ট ড্রিঙ্ক দ্যাট পয়জন। তাই ইচ্ছে করেই বলেছিলাম।
কটাক্ষটায় পাত্তা দিল না। বলল, “একটা হুইস্কি সাওয়ার।”
বেশ তাড়াতাড়ি খায়। একটা শেষ করে ফেলল আমি তিন চুমুক দেবার মধ্যে। বলল, “আর একটা।”
বেশ নেশার মতো লাগছিল। প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে নতুন সম্পর্ক, তায় আজ ও দেহ পসারিনী। কোনও দিন ভাবিনি এমন পরিস্থিতিতে পড়ব। মজা-ও, আবার কোথাও যেন একটা ভালো না-লাগা। আমি শরীরভিত্তিক প্রেমে বিশ্বাসী নই। কায়মনোবাক্যে ভালোবেসেছিলাম মেরি লু-কে। তাই ওর চলে যাওয়ায় এতটাই ভেঙে পড়েছিলাম।
কখন কথাটা তুলব? এখনই? না। আজই? হয়ত। বা হয়ত আজ না, কয়েক দিন পর জানতে চাইব — কেন চলে গেছিলে আমাকে ছেড়ে?
বেরোলাম বেশ রাত করে। মেরি লু বেরোবার আগে বাথরুম গেল। সেই ফাঁকে চট করে সেলফোন বের করে বাবানকে লিখলাম — মেরি লু ব্যাক। বাবান আর আমি একসঙ্গেই অ্যামেরিকা এসেছিলাম। ও আমার গার্জিয়ান মতোও বটে। ও যেখানে যায়, আমি সঙ্গে সঙ্গে সেখানেই চলি। আমার একাকীত্ব নিয়ে বাবান আর ওর বউ টুকু বেশ উদ্বিগ্ন থাকে। বার বার বলে বিয়ে করতে। মেয়ে দেখে আসে। দেশে আমার মা-মাসিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওদের বলে, চেষ্টা তো করছি। কিন্তু জানেন তো গুপির স্বভাব। নিজে যা ঠিক করবে তা-ই করবে। মেসেজটা পাঠিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ফোন বন্ধ করে দিলাম। বাবান না হোক, এই মেসেজ দেখলে টুকু সঙ্গে সঙ্গে ফোন করবে। টুকু মেরি লু-কে খুব পছন্দ করত না। সেটা আমি জানি। বাবান লুকোবার চেষ্টা করত, তাও আমি বুঝতাম।
অভ্যেসের চেয়ে বেশিই মদ খেয়েছি। গাড়ি নেই আমাদের কারওরই। আমি মদ খেতে এলে গাড়ি নিয়ে আসি না। অফিস থেকে ফিরে বাড়িতে রেখে হেঁটে আসি। মেরি লু-র জুতোয় হাই হিল। বলল, “কতদূর?”
মেরি লু ও-বাড়িতেই থাকত। তাই উত্তর দিলাম না। ও-ও আর কিছু না বলে হাঁটা শুরু করল। টলছে। এক হাতে আমার কনুই জড়াল। জুতো খুলে হাতে নিল। এ দেশের মেয়েরা প্রায়ই এরকম করে। আমার অস্বস্তি হয়। তারপরে এই পায়েই বিছানায় শোবে। পা ধুতে বলতে হবে। অবশ্য এ দেশের লোক তো জুতো পায়েও বিছানায় উঠে যায়… যত্তোসব।
বাড়িতে ঢুকে মেরি লু বলল, “বেডরুম কোনদিকে?”
জানতে চাইলাম, “ঘুম পেয়েছে? এত তাড়াতাড়ি?”
মেরি লু আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, “দেরি করতে চাও? বেশ তো, হানি… ইট’স ইওর মানি…”
পয়সার কথা বলছে কেন? কিন্তু আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগে বলল, “বাড়িতে মদ আছে? কোথাও তো লিকার ক্যাবিনেট দেখছি না।”
মেরি লু যাবার পরেও প্রায় এক বছর আমি বার্‌-এ যেতাম না। বাড়িতে ফিরে অপেক্ষা করতাম ওর জন্য। বাড়িতেই মদ খেতাম। তারপরে কবে আবার বার্‌-এ যাওয়া শুরু করেছিলাম। বোতলগুলো পড়ে থাকত। একদিন টুকু এসে সব কিচেন ক্যাবিনেটে ঢুকিয়ে দিয়েছিল।
ধুলোমাখা হুইস্কির বোতলটা নিয়ে এসে মেরি লু বোতলে মুখ লাগিয়েই চুমুক দিয়ে বলল, “তুমি?”
মনে হল কেন নয়? যদিও আমি সাধারণত যা খাই তার ডবলেরও বেশি খাওয়া হয়েছে আজ — মেরি লু-কে সঙ্গ দিতে গিয়ে। কাল না হয় অফিস যাব না। দেরি করে দু-জনে একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করব। কাছে গিয়ে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে এনে হাত থেকে বোতল নিয়ে চুমুক দিলাম। আমার শরীরে ইলেকট্রিকের শক লাগল। এই সেই চিরপরিচিত শরীর। কত আদর করেছি…
মেরি লু আমার ঢিলে টাই টেনে খুলে ফেলল। ছুঁড়ে ফেলল ওদিকের সোফায়। শার্টের বোতাম খুলতে খুলতেই ফাঁক করে বুকের লোমে হাত বোলাতে বোলাতে চুমু খেল। ওই অবস্থায় দাঁড়িয়েই বিবস্ত্র করতে থাকলাম আমরা একে অপরকে। তারপর, কেবল অন্তর্বাস পরা অবস্থায় আমাকে ঠেলে সোফায় বসিয়ে দিল মেরি লু। আমার দু-দিকে হাঁটু গেড়ে বসে এক হাত ভাঁজ করে পেছনে নিয়ে গিয়ে ব্রা খুলে ফেলল। আমার হাত থেকে হুইস্কির বোতলটা নিয়ে যখন চুমুক দিচ্ছে — তখন আমি ওর প্যান্টি খুলছি। আমার নজর ওর বাঁ কোমরে…
খোলার আগেই সন্দেহ হচ্ছিল। অত সরু প্যান্টির কাপড়ের আড়ালে অতটা চামড়া ঢাকা পড়ে না। কিন্তু প্যান্টিটা ইঞ্চিখানেক নামিয়েই নিঃসন্দেহ হলাম। মেরি লু-কে আমার ওপর থেকে সরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। মেরি লু বোতলটা সামলাতে গিয়ে সোফায় প্রায় চিত হয়ে পড়ল। বলল, “কী হল?”
আমি কথা না বলে ওকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে ওর কোমরের দিকে তাকিয়ে বললাম, “তিমিটা কোথায়?”
অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে মেরি লু বলল, “কোন তিমি?”
মেরি লু উল্কিটার কথা ভুলে গেছে হতে পারে না। ওর কোমরে ওটা রয়েছে ওর পনেরো ষোলো বছর বয়স থেকে। আমার সঙ্গে যখন পরিচয়, তখনই ওটা সময়ের সঙ্গে একটু ধেবড়ে গেছে। নীল তিমি, ছোট্ট, দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে ইঞ্চি দেড়েক। মাথা থেকে জল ছিটছে ফোয়ারার মতো। অনেকটা বাচ্চাদের কার্টুনের স্টাইলে আঁকা। ও লজ্জা পেত। বলত, মুছে ফেলবে। আমি বলতাম, না। ওটা আমার আদরের। ওটার গায়ে চুমু খেতাম। জিভ দিতাম। মেরি লু বলত, ওটা ওর সতীন। আমি ওটাকে যত ভালোবাসি, মেরি লু-কে তত ভালোবাসি না। মুছে ফেলেছে ওটা। আমি কেমন যেন হয়ে গেলাম। ওর শরীরটাকে ডাইনে বাঁয়ে, সামনে পেছনে ঘোরাতে থাকলাম। জিজ্ঞেস করতে থাকলাম, “কোথায় গেল? কোথায় তোমার উল্কি? তিমিমাছটা কোথায়?” কোথাও নেই। ওর শরীরে আজ কোনও উল্কিই নেই।
মেরি লু হাত দিয়ে ঝাপটা দিয়ে আমাকে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসল। বলল, “হোয়াট ইজ রং উইথ ইউ?”
আমার ততক্ষণে খেয়াল হয়েছে। আমি সরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কেন মুছেছ? কার ওস্কানিতে? মার্ক? না ডেভিড? এতদিন কার কাছে ছিলে? ওদের কাছে, না আর কেউ এসেছিল তোমার জীবনে?”
এক লহমায় মেরি লু-র চোখের বিহ্বলতাটা কেটে গিয়ে ফুটে উঠল একই সঙ্গে ভয় আর ঘৃণা। এই দুটোই আমি আগে দেখতাম। চলে যাবার আগে। কোনও রকমে সোজা হয়ে বসতে বসতে হাতড়াতে শুরু করল ওর জুতোজোড়া। দৃষ্টি ইতিউতি। জামাকাপড় সব সারা ঘরে ছড়িয়ে আছে। আমরা এর ওর পোশাক খুলে ঘরের ডানদিকে বাঁদিকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলেছি। কোনওটাই হাতের কাছে নেই। আমার দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে চেয়ে বলল, “ও মাই গড্‌! ইউ আর ক্রেজি…”
আমার মাথায় আগুন জ্বলে গেল। এই কথাটা… এই কথাটাই বার বার বলত চলে যাবার আগে। দু হাত মুঠো করে ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। বললাম, “খবরদার যদি তুমি আমাকে ক্রেজি বলেছ আবার…”
মেরি লু ডানহাতি। হুইস্কির বোতলটা ওর বাঁ হাতে। আড় চোখে দেখতে পেলাম বোতলটা আমার দিকে ধেয়ে আসছে, খোলা মুখ দিয়ে হুইস্কির ফোয়ারা ছিটছে সারা ঘরে… সরে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমারও ভারসাম্য কম। বেশি সরতে পারলাম না, তবু বোতলটা আমার মাথার মাঝখানে না পড়ে কপালের পাশে লাগল। বেশ জোরে।
তারপরে কিছু মনে নেই।
জ্ঞান ফিরল পরদিন — জ্ঞান ফিরল, না ঘুম ভাঙল জানি না, কিন্তু চোখ মেলে দেখলাম, আমি আমার বিছানাতেই। পরনে রাত পোশাক। মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে যন্ত্রণায়। বাইরে ঝাঁ-ঝাঁ করছে রোদ। কত বেলা হয়েছে? কটা বাজে? মোবাইলটা? মনে পড়ল, কাল রাতে ফোনটা অফ করে প্যান্টের পকেটে রেখেছিলাম। নিশ্চয়ই নিচে বসার ঘরেই পড়ে আছে। উঠে আগে বিছানার পাশে রাখা বোতল থেকে জল খেলাম। তারপরে বাইরের ঘরে যেতে গিয়ে দেখি আমার জামাকাপড় শোবার ঘরেই বিছানার পাশে চেয়ারে ভাঁজ করা রয়েছে। কে রাখল? মেরি লু? কিন্তু সে কোথায়? ঘরে তো নেই।
মোবাইল সুইচ অন করামাত্র টুং-টুং শব্দের সারি জানিয়ে দিল অজস্র মেসেজ ঢুকছে। ফোনটা হাতে নিয়েই শোবার ঘর থেকে বেরোলাম। বাড়িটা বেশি বড়ো না। দোতলায় দুটো শোবার ঘর, একটা বাথরুম। বাথরুমে কেউ নেই, অন্য ঘরটাও খালি। সিঁড়ি দিয়ে নেমে নিচে বসার ঘর, খাবার ঘর আর রান্নাঘর। কোথাও নেই মেরি লু। মেরি লু নেই, মেরি লু-র জামা-জুতো-ব্যাগ — একটা হালকা নীল ছোটো ব্যাগ ছিল বটে ওর সঙ্গে — ফোন আর সামান্য কিছু টাকাকড়ি রাখার মতো। নেই। জানি ফোন থাকলেও নম্বর আর একই নেই, তবু একবার ফোন করে দেখব…
ফোনের দিকে তাকিয়ে আবার চমকে উঠলাম। সকাল সাড়ে এগারোটা প্রায়। অজস্র মেসেজ। বেশিরভাগই বাবানের। কাল রাত থেকে — “আরিব্বাস! মেরি লু? আবার কোত্থেকে হাজির হল?” থেকে শুরু হয়ে কাল রাতেই শেষ পর্যন্ত, “কী হচ্ছে-টা কী? মেরি লু-কে পেয়ে আমাদের ভুলেই গেলি, শালা…” হয়ে আজ সকালে, “তুই কোথায় রে? অফিসে আসিসনি কেন?” পর্যন্ত।
একটা মেসেজ রায়ানের। রায়ান আমার বস। আজ কোনও বিশেষ কাজ নেই, তাই একটাই মেসেজ — খবর না দিয়ে কাজে আসিনি কেন, গোছের।
মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে। এখন কথা বলতে পারব না। কফির জল বসিয়ে বসলাম উত্তর লিখতে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফোন বাজল। ভিডিও কল করেছে বাবান।
ধরতেই হল। স্ক্রিনে বাবানের উদ্বিগ্ন মুখ। “কী হয়েছে তোর? আমি তো টুকুকে বললাম, গিয়ে খোঁজ নিতে।”
বাবান থাকে স্যাক্রামেন্টোর খুব কাছে। আটত্রিশ মাইল। টুকু গাড়ি চালিয়ে এতদূর আসবে? বললাম, “আরে দরকার নেই, বারণ করে দে। রাতে বেশি মদ খেয়ে ফেলেছি। ঘুম ভাঙেনি।” গলায় স্বাভাবিক কথা বলার সুর আনার চেষ্টা করলাম।
বাবান বলল, “এখনও বেরোয়নি। বারণ করে দিচ্ছি… মেরি লু কোথায়? দেখি?”
বললাম, “মেরি লু নেই।”
“নেই? সে কী? চলে গেছে আবার?”
আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না। বললাম, “হুঁ।”
“কেন গেছে? কিছু হয়েছিল? ঝগড়া করেছিলি আবার?”
ভালো লাগছে না। বললাম, “শোন, রায়ানকে বলে দিবি, যে আমি কাল রাতে মদ খেয়ে আজ কাজে আসতে পারিনি? হ্যাংওভারে মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে। কথা বলতে পারছি না। কফিও খাইনি। ঘুমোব। পরে কথা বলছি।”
লাইন কেটে দিয়ে গরম জলে কফি মিশিয়ে কাপটা নিয়ে এসে বসার ঘরে বসলাম। দুটো অ্যাসপিরিন ট্যাবলেটও নিলাম। খাবারও খেতে হবে। সে পরে হবে। আপাতত কফিতে মোটা করে দুধ আর চিনি দিয়েছি।
সোফায় বসতে গিয়ে দেখি পায়ের কাছে মেরি লু-র প্যান্টি। অবাক হলাম। তাড়াহুড়ো করে খুলে ওখানেই ফেলে দিয়েছিলাম। ওখানেই পড়ে আছে? আর ব্রা-টা? ওটা ও নিজেই খুলেছিল। তারপরে ছুঁড়ে ফেলেনি। হাতটা মেলে ছেড়ে দিয়েছিল। তাকিয়ে দেখি সোফার ওপাশের সাইড টেবিলের পাশে পড়ে আছে। পুরোটা মাটিতে পড়েওনি। টেবিলের ওপরে একটা সুদৃশ্য বাটিতে একটা হুক আটকে ঝুলে আছে।
মেয়েটা অন্তর্বাস ফেলে রেখে চলে গেল? আশ্চর্য! অথচ — সারা ঘরটা দেখলাম… আমি ওর জামা আর স্কার্ট খুলেছিলাম। জামাটা টান মেরে ফেলেছিলাম ওই সোফার ওপরে — আমার জামার পাশে গিয়ে পড়েছিল। আর স্কার্টটা পড়েছিল অন্য দিকের সোফার সামনে — কার্পেটে।
নেই। তাহলে তাড়িঘড়ি জামাকাপড় পরে বেরিয়ে গেছে — ভয়ে? বোতল দিয়ে মারার আগে ভয় পেয়েছিল। কিন্তু তাহলে আমার জামাকাপড় ভাঁজ করে রাখল কেন? আমাকে রাত-পোশাক পরিয়ে, বিছানায় শুইয়ে…
মেয়েদের মন বোঝা ভার।
সন্ধেবেলা বাবান আর টুকু এসে হাজির হল। আমাকে দেখে বাবান আঁতকে উঠল। সকালে কপালটা ফোনের অ্যাঙ্গেল দিয়ে লুকিয়েছিলাম। এখন বাড়িটা আধো-অন্ধকারে রেখেও শেষরক্ষা হল না।
“কী করে হল?”
বললাম, “কাল টালমাটাল হয়ে পড়ে গেছি…”
“বাজে বকিস না গুপি। কেউ মেরেছে। কে? মেরি লু?”
বাধ্য হয়ে পুরোটাই বলতে হল। বাবান গম্ভীর হয়ে গেল। টুকু বলল, “তুমি সব ব্যাপারে এত বুদ্ধি রাখো গুপি, এই একটা ব্যাপারে কেন এত অবুঝ? বার বার একটা মেয়েকে প্রাক্তন প্রেমিকের কথা জিজ্ঞেস করলে সে থাকবে?”
আমি উত্তর দিলাম না। আমি চাইনি জিজ্ঞেস করতে, কিন্তু উল্কিটা নেই দেখে আর থাকতে পারিনি। উল্কির কথাটা বাবানকে টুকুর সামনে বলা যাবে না। এর আগেও দেখেছি, অন্য মেয়ের শরীর নিয়ে আলোচনার মধ্যে বাবান থাকুক, টুকু চায় না। টুকু সমানে বলে যেতে থাকল, আমারই দোষ। বিরক্ত করে নাকি আগের বারেও মেরি লু-কে তাড়িয়েছি, এবারও… আমি কিছু বললাম না। টুকু কিছু বোঝে না। নিজের মতো ভাবে, নিজের মতো বলে — মাথায় একবার কিছু ঢুকলে আর বেরোয় না। বাবানকে বললাম, “হুইস্কি খাবি?”
বাবান গাড়ি নিয়ে এসেছে, টুকুকে বললাম, “তুই চালাতে পারবি না?”
টুকুটা মহা পাজি। বলল, “সকালে আসব বলেছিলাম, বাবানকে বললে, টুকু একা এতদূর গাড়ি চালিয়ে আসবে? আর এখন বন্ধুকে হুইস্কি খাওয়ানোর তাগিদে টুকুকে দিয়ে রাত্তিরে গাড়ি চালানোতে আপত্তি নেই?”
ঠিকই বলেছে। আমারই দোষ। বললাম, “তা হলে আমিই খাই।”
বোতলটা দেখে বাবান ভুরু কোঁচকাল। বলল, “তুই আবার বাড়িতে মদ রাখছিস?”
বললাম, “আবার কোথায়? এতো সেই তিন বছরের পুরোনো। টুকু তুলে রেখেছিল।”
বাবান বলল, “কাল বের করেছিলি? কেন? মেরি লু এসেছিল বলে?”
খেয়াল না করে বলে ফেলেছি, “মেরি লু-ই বের করেছিল। নিজে খাবে বলে।”
“মেরি লু? মেরি লু হুইস্কি খেল?” বাবান আর টুকু মুখ তাকাতাকি করল। টুকু বলল, “মেরি লু তো মদ খাওয়া একেবার পছন্দ করত না।”
আমি উত্তর না দিয়ে দু-কাঁধ ঝাঁকালাম। সাহেবি এই কাঁধ ঝাঁকানির অনেক অর্থ হয়। তার মধ্যে যেটা আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম তা হল, ওসব নিয়ে আমার অত ভাবার সময় নেই। বাস্তবিক, আমি ছোটো থেকে দেখেছি, মানুষ বদলে যায়। তাই মেরি লু কখনও মদ খেত না, আজ খায়, সে নিয়েও আমার বিশেষ মাথা ঘামানি নেই।
আমি মদ খাচ্ছি, বাবান আর টুকু নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে পিৎজা অর্ডার দিচ্ছে, তারপরে টুকু বলল, ওয়াশরুমে যাবে। আমি তক্কে তক্কে ছিলাম। যেই দরজা বন্ধ হয়েছে, বলেছি, “ওর উল্কিটা আর নেই।”
বাবান অবাক হয়ে বলল, “উল্কি? কার উল্কি? কী উল্কি?”
বাবান মেরি লু-র ওই উল্কি অন্তত হাজার বার দেখেছে। মেরি লু সাঁতার কাটতে ভালোবাসত। বিকিনি পরলে তিমি মাছের অন্তত খানিকটা সবসময়েই দেখা যেত। আর মেরি লু উল্কিটা আছে বলে যতটা লজ্জা পেত, উল্কিটা দেখাতে লজ্জা পেত না বলে লুকোত না।
নিজের কোমরের বাঁ দিকে হাত দিয়ে বললাম, “আরে এখানে যে…”
সঙ্গে সঙ্গে বাবান বলল, “ও, ওই তিমি মাছের ট্যাটু-টা? নেই মানে?”
“নেই মানে নেই। চামড়ার ওখানটা এখন পরিষ্কার। ইন ফ্যাক্ট ওর শরীরে কোথাও আর ট্যাটু নেই।”
বাবান একটু ভেবে বলল, “ট্যাটু ভ্যানিশ করে যায়?”
আমি বললাম, “নিজে থেকে যায় না, তবে করা অবশ্যই যায়। কতবার বলত ওটা লেজার করে পরিষ্কার করে নেবে। আমিই বারণ করতাম। খুব মিষ্টি ছিল তিমিমাছটা।”
বাবান কিছু বলল না। আমি বললাম, “ওটা নেই দেখেই আমার মনে হয়েছিল মার্ক, বা ডেভিডের কাছে ও যদি ফিরে গিয়ে থাকে? ওরা তো ওকে বলত ওটা মুছে ফেলতে।”
বাবান কী বলত জানা হল না, সিঁড়ির ওপর থেকে বাথরুমের দরজা খোলার শব্দ পাওয়া গেল। বাবান মন দিল মোবাইল ফোনে। নিচে এসে টুকু বলল, “বাবা, মেয়েটা এল গেল… কোথাও কোনও নিশানা পর্যন্ত নেই,” ভাবলাম বলি, আছে। ব্রা আর প্যান্টি। বললাম না। আগেরবার একটা নাইটি, দু-চারটে জামাকাপড় আর কয়েকটা প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া লিপস্টিক ফেলে গেছিল। এসব কথা ওদের বলিনি — আজও বললাম না। টুকুর সামনে মেরি লু-র ব্রা আর প্যান্টির গল্প করতে পারি না আমি। আবার বাবানকে আলাদা করেও ওসব পোশাকের কথা বলা যায় না। যদি দেখতে চায়? কী বলব? সেই তখনই তিন বছর আগে একটা কার্ডবোর্ড কার্টনে ওর সবকিছু তুলে রেখেছিলাম বেডরুমের ক্লোজেটের ওপরের তাকে, আজও ব্রা আর প্যান্টি-টা ওখানেই রেখে দিয়েছি।
সোফায় বসে টুকু বলল, “আবার দুজনে কাজের কথা বলছ নাকি? অ্যাই, ফোনটা রাখবে? একটা জরুরি কথাই তো জিজ্ঞেস করা হয়নি। কোথায় দেখা হল মেরি লু-র সঙ্গে? কী ভাবে?”
কথাটা জিজ্ঞেস করা হয়নি নয়, আমিই আলোচনাটা ওদিকে যেতে দিইনি। কোথায় দেখা হয়েছে বললে ওরা কী ভাবে নেবে, কী জানি… সরাসরি জিজ্ঞেস করায় বলতেই হল। আবার কর্তা-গিন্নী মুখ তাকাতাকি করল। টুকু বলল, “আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। মেরি লু-র সঙ্গে বার্‌-এ দেখা হয়েছে… ভাবতেই পারছি না।”
আবার কাঁধ ঝাঁকালাম। আমার কিছু এসে যায় না। টুকু বলল, “তাহলে কাল যদি তোমাদের ওই বার্‌-এ দেখা হয়ে থাকে তাহলে আজ তুমি ওখানে যাওনি কেন? ওখানেই তো আবার দেখা পাবার সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা।”
আমি মাথা নাড়লাম। মেরি লু যদি আমার কোনও আচরণে ভয় পেয়ে বা রাগ করে চলে গিয়ে থাকে, তাহলে আজ ওখানে আমাকে দেখতে পেলে হয়ত দরজা থেকেই ফিরে যাবে। তার চেয়ে আমি প্যাট্রিককে ফোন করে বলে দিয়েছি…
প্যাট্রিক বারম্যানের নাম।
“ও তোকে বলে দেবে বার্‌-এ কোন মেয়ে আসছে, না-আসছে?” জানতে চাইল বাবান।
কেন বলবে না? ও তো জানে না মেরি লু আমার কে। ও দেখেছে মেরি লু-কে আমি বার্‌ থেকে তুলে নিয়ে — যাকে বলে পিক-আপ করে নিয়ে বেরিয়েছি। পরদিন আমি ফোন করে বলেছি, আমি ইন্টারেস্টেড। আমি রোজ বার্‌-এ যাই না। তাই যদি মেরি লু আসে, আমাকে ফোন করে জানালে আমি আবার যাব। আমি একটা আপস্ট্যান্ডিং মেম্বার অফ দ্য সোসাইটি। আমার নামে কোনও অপরাধের রেকর্ড নেই। বার্‌-এও আমি যথেষ্ট রেস্পেক্টেড খদ্দের।তাহলে?”
টুকু বলল, “মেরি লু বেশ্যাবৃত্তি করছে? ছি!”
বললাম, “ও কী কথা! আদ্যিকালের মনোবৃত্তি? সেক্স ওয়ার্কার কথাটা জানো না?”
টুকু মুখ ভেটকে বলল, “নাম দিয়ে কি আর পরিচিতি আটকাবে? বেশ্যা বেশ্যাই।”
রাগ হয়ে গেল। বাবানকে বললাম, “তোর বউয়ের মতো মানসিকতার মহিলারা কমছে না বলেই উইমেন্স লিব মার খাচ্ছে।”
ওরা কিছু বলল না, বুঝলাম আমার কথাটা পছন্দ হয়নি।
মেরি লু আর এলই না। প্যাট্রিকও কিছু খবর দিতে পারল না। বলল, “ও ঠিক অ্যাভারেজ হুকার নয়, বুঝলেন? হুকাররা সাধারণত একা আসে না। অন্তত এই বয়সের মেয়েরা তো নয়ই। দু-জন চারজন একসঙ্গে থাকে — একে অপরের দেখাশোনাও করে বটে। তবে ও একাই এসেছিল — দিন দুয়েক আগে থেকে আসতে শুরু করেছিল। আবার চলে গেছে কোথায়…” সাড়ে সাত বছর কেটে গেছে সেই রাতের পরে। আমি বুঝতে পারছিলাম, মেরি লু আমার জীবন থেকে চলে গেছে চিরদিনের মতো।
আমিও চলে গেছি। করোনার ফলে বাবানের চাকরি গেল ২০২০র মাঝামাঝি। কয়েক মাস পরে জানাল নতুন চাকরি পেয়েছে — মিনিয়াপোলিস শহরে। ইউ-এস-এ আসার পর আজ পর্যন্ত আমরা সব জায়গায় একসঙ্গে গিয়েছি। এই প্রথম আলাদা হলাম। বাবান বাড়ি এসে খবরটা দিয়েছিল, টুকুও এসেছিল সঙ্গে। তাই কী চাকরি, কোথায় চাকরি — এসব কথা টুকুর সামনে আর জিজ্ঞেস করিনি। বাবান আগেই লিখে জানিয়েছিল। হোটেলে হাউসকিপারের চাকরি। মানে ঘর পরিষ্কার করা, বিছানা করা, বাথরুম ধুয়ে মুছে সাফ করে শুকিয়ে খটখটে করে বেরোনো। বড়ো হোটেলে একটা ঠেলাগাড়ি থাকে, তাতে সাবান, ঝাড়ন, ঝাড়ু — এইসব থাকে। এ সমস্যা আমাদের জীবনে প্রথম না। রিসেশন হয়েছে, চাকরি গেছে, আমরা গতর খাটিয়ে কাজ করেছি — আবার চাকা ঘুরেছে, চাকরি এসেছে। এ দেশে ডিগনিটি অফ লেবার আছে, কেউ বাঁকা চোখে তাকায় না। কিন্তু এবারে অন্যরকম। এখন বাবানের জীবনে টুকু আছে। টুকু কিছুতেই বুঝতে পারছে না, ওর কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার স্বামী কী করে মেথরের কাজ করবে। আমি হেসে বাঁচি না।
কিন্তু বাবান চলে যাওয়ার পরে আর ভালো লাগছিল না। একা থাকা, একা খাওয়া, কাজে গিয়ে বাবানের সঙ্গে দেখা না-হওয়া, বাড়ি ফেরার আগে ওর সঙ্গে ক্যাফেতে বসে আড্ডা না-দেওয়া, সপ্তাহান্তে তিনজনের মাঝে মাঝে এদিক ওদিক বেড়াতে না-যাওয়া… মনে হতে শুরু করল, বাড়ির চাপ মেনে নিয়ে বিয়েটা করেই নিই। কিন্তু যেদিনই সন্ধেবেলা মনে হত, অনেক হয়েছে, এবারে রাজি হয়ে যাই… সেদিনই বা পরদিন রাত্তিরে এত তীব্রভাবে মেরি লু স্বপ্নে আসত, যে অনেক সময় সকালে উঠে এদিক ওদিক ওকে খুঁজতাম। বুঝলাম, এতটাই ভালোবাসি, যে অন্য কাউকে আমার জীবনে বা শয্যায় স্থান দিলে দুজনের প্রতিই অন্যায় করা হবে।
অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক করলাম, বাবানের কাছাকাছি চাকরি খুঁজব। ট্রাম্প গিয়ে বাইডেন এসেছে, কিন্তু ইকোনমির হাল বদলানোর তেমন চিহ্ন নেই। বাবান বার বার চেষ্টা করছে কম্পিউটার ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরতে, পারছে না। এদিকে বাড়িতেও অশান্তি তুঙ্গে। আজকাল টুকু ওকে ছোঁয় না। বিছানায় শুতে দেয় না। বলে পায়খানা ঘেঁটে এসেছ — দূরে থাকো। ও বাইরের ঘরে সোফায় শোয় — এ দেশে যার নাম কাউচ। আমি দূর থেকে সাহস দিই। বলি, আমি চেষ্টা করছি আসতে। তারপরে আর চিন্তা থাকবে না।
মিনিয়াপোলিসে শীতে বড়ো ঠাণ্ডা। কিন্তু খুঁজতে খুঁজতে অদ্ভুতভাবে ওখান থেকে ঘণ্টা চার সাড়ে চার দূরে সু সিটিতে একটা দারুণ চাকরি পেয়ে গেলাম। সু মানে জুতো নয়। বানান সিউক্স। ওখানেও শীতে খুব ঠাণ্ডা, কিন্তু মিনিয়াপোলিসের অর্ধেকেরও কম। তবে চাকরিটা পছন্দসই হওয়াতে আর ভাবলাম না। তার ওপর, মালিক বলল, এক্সপ্যানশনের সম্ভাবনা আছে — বন্ধুকেও চাকরিতে ডেকে নিতে পারব।
চাঁটিবাটি তুলে হাজির হলাম নতুন শহরে, নতুন বাড়িতে। বাড়ি থেকে অফিস দূরে নয়, আবার উলটো দিকে কিছু দূরেই স্টোন স্টেট পার্ক — শহুরে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ অভয়ারণ্য। ছবির মতো সুন্দর। মাস তিনেকের মধ্যেই বাবানেরও চাকরি হল। পরের মাসে ওরা আসবে। এসে বাড়ি-টাড়িও দেখে গেল। সবে ভাবতে শুরু করেছিলাম, আবার আগের মতো আমরা তিনজনে হইচই করে থাকব নতুন শহরে…
মানুষ ভাবে এক, হয় আর এক।
সু সিটির বার্‌-এ যখন সন্ধেবেলা ওকে দেখতে পেলাম, তখন আমি অনেকক্ষণ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনি। এখানে মেরি লু? অ্যামেরিকার এই ধ্যাধ্‌ধেড়ে গোবিন্দপুরে? ও তো প্লেসারভিল থেকেও সপ্তাহে পাঁচ দিন স্যাক্রামেন্টো যেত — আর আমাকে বলত, চলো না, নিউ ইয়র্ক চলে যাই?
বার্‌-এর অল্প আলোতে মেরি লু-কে দেখাচ্ছিল যেন স্বপ্নলোকের পরী। কী সুন্দর রূপ আর ফিগার দুটোই ধরে রেখেছে। কিচ্ছুটি বদলায়নি। সেই লালচে সোনালী চুলে আলো পড়ে ঝলসে ওঠা, সেই হাসি, সেই টোল…
এবারে আমাকে দেখতে পায়নি। বার্‌-এর সামনের দিকেই ঘোরাফেরা করছিল। সঙ্গে একটা হাবাগোবা টাইপের মেয়ে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আস্তে আস্তে বার্‌-এ গিয়ে আর একটা ড্রিঙ্ক অর্ডার দিয়েছিলাম। যাবার সময় চোখাচোখি হয়েছিল। ফেরার সময় দেখলাম আমাকে নজর করছে। কিছুক্ষণ পরে আস্তে আস্তে উঠে এসে আমার টেবিলে বসল।
“হাই?” এবারে আর হ্যান্ডসাম বলল না। অনেক গম্ভীর আগের বারের চেয়ে। অনেকটা আমার চেনা মেরি লু-র কাছাকাছি।
“হাই…”
কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আজ আমি বদ্ধপরিকর। অতীতের কথা জিজ্ঞেস করব না। কেন চলে গেছিল জানতে চাইব না। মার্ক আর ডেভিডের প্রসঙ্গ তুলব না। না, না, না।
জানতে চাইল আমি কী করি। বললাম, নতুন চাকরি নিয়ে এসেছি। জানতে চাইলাম, ও কাছাকাছিই থাকে কি না। ধরি মাছ, না ছুঁই পানি ধরনের উত্তর দিল। সব দেহব্যবসায়ীই বোধহয় তাই করে। এখানে সম্পর্ক কেবল টাকার বিনিময়ে শরীরের। আমি ওদের ধার ধারি না। বার্‌-এ কোনওদিন হুকার ধরিনি। তাই কী কথা বলা উচিত জানি না। মেরি লু-র সঙ্গে এরকম সম্পর্ক তৈরি করতে হবে? কী যেন বলেছিল টুকু — বেশ্যা? ছি!
আমার গাড়িতেই ফিরলাম। এখানে বেসামাল মদ না খেলে গাড়ি চালালে অসুবিধে নেই। পুলিশ খুব খেয়াল করে না। মেরি লু আজ অনেক সংযত। আমিও। বেশি কথা কেউই বলছি না। বাড়িতে এসে আস্তে আস্তে বসার ঘরটা ঘুরে দেখল। এখানে বাড়িতে মদ নেই। বার থেকে বেরোনোর সময় বলে দিয়েছিলাম। চাইলে একটা বোতল তুলে নিতে পারি। মাথা নেড়েছিল। দরকার নেই। এদিক ওদিক দেখে বলল, “নাইস হাউস।”
বললাম, “ভোরবেলা যখন আলো ফুটবে, তখন দেখবে কী সুন্দর।”
মেরি লু হাসল। বলল, “আমি জানি এই দেশটা কত সুন্দর।” তারপরে শোবার ঘরের দিকে আঙুল তুলে বলল, “ওটা বেডরুম? যাব?”
বললাম, “ইয়েস। তুমি যাও, আমি একটা কাজ সেরে আসছি।”
কাজ কিছু ছিল না। কিন্তু আমি আড়াল থেকে ওকে দেখতে চাইছিলাম। আগে, যখন একসঙ্গে থাকতাম, তখন আমি প্রায়ই লুকিয়ে মেরি লু-কে পোশাক বদলাতে দেখতাম। অদ্ভুত উত্তেজনা হত। তারপরে ঘরে ঢুকে কপট হতাশা দেখাতাম। “এ বাবা, তুমি পোশাক বদলে ফেলেছ? আমি দেখতে পেলাম না…”
এখানেও তাই করলাম। মেরি লু শোবার ঘরে ঢুকে পোশাক ছাড়ল। আমি বাইরের ঘরে আমার ডেস্কে বসে আড়চোখে দেখলাম। নজর কোমরের দিকে। কী দেখব… বা বলা ভালো, কী দেখব না জানতাম। তাও একটা হতাশা বুকটা মুচড়ে দিল। শেষে মেরি লু বিছানায় শুয়ে চাদর দিয়ে নিজেকে ঢেকে দেবার পরে ঘরে ঢুকে বললাম, “পোশাক বদলে ফেলেছ? আমি দেখতে পেলাম না?”
খিলখিল করে হাসল মেরি লু। বলল, “এবারে নিজে পোশাক ছেড়ে তাড়াতাড়ি বিছানায় এসো দেখি?”
আমার পোশাক ছাড়া মন দিয়ে দেখতে দেখতে বলল, “ইউ আর ভেরি হ্যান্ডসাম, ইউ নো?”
জানি। তবু এবারে ওর বলাটা আমাকে আরও উত্তেজিত করল। আগের বারের হাই হ্যান্ডসামের চেয়ে এটা অনেক ভালো। আস্তে আস্তে বিছানায় গিয়ে ওর পাশে শুলাম। তারপরে দু হাতে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।
আহ… কতদিন পরে… সাড়ে দশ…, প্রায় এগারো বছর।
অস্ফূটে মেরি লু বলল, “আলো জ্বলবে?”
বললাম, “জ্বলুক। নইলে দেখতে পাব না তোমাকে।”
অনেকক্ষণ পরে মেরি লু বলল, “কাল সকালে তুমি শহরে যাবে?”
“কেন?”
.
“তাহলে আমাকে নামিয়ে দেবে?”
“তুমি যেতে চাইলে নামিয়ে দেব।”
“যেতে চাইলে মানে?”
“যদি না যেতে চাও? যদি থেকে যেতে চাও? আমি তো চাই তুমি থেকে যাও।”
মেরি লু হাসল। বলল, “থেকে যাব? কত দিন?”
“চিরদিন?”
মেরি লু হেসে আমাকে চুমু খেল। বলল, “ইউ আর কিউট। আই হ্যাভ নেভার সিন এনিওয়ান লাইক ইউ বিফোর।”
ভেতর থেকে ঠেলে আসা রাগটাকে দমিয়ে রেখে চুমু খেলাম।
অনেক রাতে, তখন মেরি লু ঘুমিয়ে পড়েছে, আমি আস্তে আস্তে চাদর সরিয়ে আবার ওকে দেখলাম। এখন ওর শরীরে অনেকগুলো উল্কি। ডান কাঁধে, দুই হাতে, ডান বুকের ওপরে, পিঠের ওপরে — অনেক উল্কি। সব কিম্ভূত, আজকালকার, অর্থ-বোঝা-যায়-না, এমন উল্কি। কোনওটাই বাচ্চাদের কার্টুন নয়। আর হ্যাঁ, কোমরে কিছু নেই।
কোমরের সাদা, নিখুঁত, অকলঙ্কিত চামড়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আবার রাগ ঠেলে বেরোচ্ছিল। কিন্তু আমি তো রাগ করব না। রাগ করে কিছু বলব না। প্রতিজ্ঞা করেছি। তাই চুপ করে আবার চাদর দিয়ে ওকে ঢেকে বালিশে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করলাম।
ক্রমশঃ (পরের রবিবার পরের অংশ)
PrevPreviousস্টেথোস্কোপ-১১২
Nextভুলে যাওয়া তারাNext
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত পোস্ট

দম্ভ, স্পর্ধা না ঔদ্ধত্য?!

May 20, 2025 No Comments

‘অগ্নীশ্বর’ সিনেমা দেখেন নি, এ রকম মানুষ আমাদের প্রজন্মে খুব কম থাকার কথা, অবশ‍্য বর্তমান প্রজন্মের কথা আলাদা। কাহিনীকার মেডিকেল কলেজের প্রাক্তনী বলাইচাঁদ মুখোপাধ‍্যায়, পরিচালক

উনিশ এগারো

May 20, 2025 No Comments

বাংলাকে যারা ভালোবাসো তারা উনিশকে ভুলো না এত সরকার গেলো এলো কেউ দিনটাকে ছুঁলো না। অমর একুশে ফেব্রুয়ারী যেই বাঙালী রক্তে লাল, মে’ মাস উনিশ

স্বাস্থ্যের সত্যি মিথ্যে ১০

May 20, 2025 No Comments

ডাবের জল কি শরীর ঠান্ডা করে? ডাবের জলের কি সত্যি কোন ঔষধি গুণ আছে? এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আমাদের জানতে হবে ডাবের জলে ঠিক

মহা (ডিএ) লোভের খতিয়ান

May 19, 2025 No Comments

গতকাল সারাদিন ধরে ডিএ রায় নিয়ে বহু আজেবাজে পোস্ট করেছি। আজ থেকে ওই ব্যাপারে আর কিছু বলব না। এই ডিএ পাবার লোভটা এককথায় লোভই। আর

E09: Body Balance & Brain Function: Science-Backed Movement Training

May 19, 2025 No Comments

সাম্প্রতিক পোস্ট

দম্ভ, স্পর্ধা না ঔদ্ধত্য?!

Dr. Amit Pan May 20, 2025

উনিশ এগারো

Arya Tirtha May 20, 2025

স্বাস্থ্যের সত্যি মিথ্যে ১০

Dr. Aindril Bhowmik May 20, 2025

মহা (ডিএ) লোভের খতিয়ান

Dr. Arunachal Datta Choudhury May 19, 2025

E09: Body Balance & Brain Function: Science-Backed Movement Training

Dr. Subhamita Maitra May 19, 2025

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

555219
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

[wppb-register]