আমার বাচ্চা কিছু খাচ্ছে না।— শিশু চিকিৎসকের চেম্বারে এসে প্রায়শ:ই মায়েরা এই অনুযোগ করেন।
অথচ চিকিৎসক ওজন নিয়ে দেখেন, তার ওজন স্বাভাবিক। সে দিব্যি প্রাণচঞ্চল ছটফটে। তার মধ্যে দুর্বলতার কোনও লক্ষণ নেই।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মায়েদের শিশু নিয়ে এই অনুযোগ অমূলক। দেখা গেছে প্রায় সব ক্ষেত্রেই মা শিশুকে স্বাভাবিক প্রয়োজনীয়তার থেকে অনেক বেশি খাওয়ান। যেমন ধরুন, তিন বছরের একটা শিশুর গোটা দিনে চার, বড়জোর পাঁচবার খাওয়ার কথা। তাও আবার চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ব্যবধানে। কিন্তু মা খাওয়াচ্ছেন দু ঘন্টা পর পর। সে যখন সদ্যজাত ছিল তখন চিকিৎসক বলে দিয়েছিলেন, দু ঘন্টা পর পর খাওয়াতে হবে। তারপর থেকে তাই চলছে। শিশু তার সদ্যজাত দশা থেকে বেরোতে পারেনি।
তাঁরা আরও বলেন ,বাচ্চার একদম ওজন বাড়ছে না।
— চিকিৎসক দেখলেন, ধরা যাক, শিশুর বয়স দু বছর। ওজন বারো কেজি। অর্থাৎ বয়সের তুলনায় একদম ঠিকঠাক তার ওজন। মা বললেন, প্রথম বছর তো বেড়ে হয়েছিল তিন কেজি থেকে ন’কেজি! তাহলে দ্বিতীয় বছর ছ’কেজির বদলে তিন কেজি কেন বাড়ল?
তিন কেজি বাড়ল, তার কারণ নিয়ম এটাই। প্রথম বছরের পর থেকে বছর প্রতি ওজন বৃদ্ধি কমতে থাকে। আমাদের দেশে দশ বছরে স্বাভাবিক জন তিরিশ কেজি। প্রতি বছর যদি ছ’কেজি করে ওজন বাড়াটা নিয়ম হতো, তাহলে ষোলো বছরের বছর ওজন হতো ছিয়ানব্বই কেজি তাই না? আবার এক ঝটকায় অনেকখানি ওজন বাড়বে সেই বয়ঃসন্ধির সময়।
খাবার দিতে হবে ভারি, অর্থাৎ হার্ড ফুড, তরল বা লিকুইড নয়। প্রতি বয়সে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা ভিন্ন। সবথেকে ভালো হয় চিকিৎসকের থেকে তাঁরা এ বিষয়ে যদি পরামর্শ করেন। কম খাওয়ানো ও বেশি খাওয়ানো কোনোটাই স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়।
আরও একটা বিষয়। বয়সের পক্ষে সঠিক মাত্রায় সঠিক মান ও অনুপাতের খাবারও কিন্তু সমবয়সী এক একটা শিশুর ক্ষেত্রে এক এক রকম ওজন বৃদ্ধি ঘটায়। এটা প্রতিটা শিশুর আলাদা আলাদা বাড়ার ক্ষমতা, অর্থাৎ growth potential, এবং ভিতরকার ব্যাপার। আপনার আমার কিছু করার নেই।
খাচ্ছে না যখন, তখন খিদে হওয়ার ওষুধ দিন ডাক্তারবাবু। এটা আরও একটা আবদার।
— এর উত্তর হলো, খিদে হওয়ার ওষুধ বলে সত্যিই কিছু হয় না। খিদে একটা অনুভব। খিদের অনুভব কেন্দ্র বা appetite centre মস্তিষ্কে থাকে। পাকস্থলীতে খাদ্য না থাকলে centre বা কেন্দ্র মানুষের মধ্যে খিদে অনুভূতি তৈরি করে। আর পেট ভরা থাকলে তৈরি করে তৃপ্তির বা পেট ভরার অনুভূতি। সুস্থ্য স্বাভাবিক শিশুদের ক্ষেত্রে এটাই সত্যি। খিদে পেলে তখনই খাবার দিতে হবে। এবং সুষম খাবার, অর্থাৎ যে খাবারে বয়সের জন্য দরকারি সব খাদ্য উপাদান প্রয়োজনীয় মান, পরিমাণ ও অনুপাতে থাকে।
অন্তত একটু ভিটামিন দিন ডাক্তারবাবু যাতে বাচ্চার ওজনটা অন্তত বাড়ে!
— নাহ্ ভিটামিন ওজন বাড়ায় না। পেশী বৃদ্ধি করে ওজন বাড়ায় প্রোটিন। আর স্থুলত্ব বৃদ্ধি করে ওজন বাড়ায় অধিক মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়া এবং শরীরচর্চা না করা।
ভিটামিন শরীরে লাগে খুবই কম যেটা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে, এবং পাওয়া যায় ফল শাক ও সব্জি থেকে। বাইরে থেকে ভিটামিন যোগান? সুস্থ স্বাভাবিক শিশুদের ক্ষেত্রে লাগেই না।
এগুলো মনে রাখুন। আর শরীরে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খেয়াল রাখুন তার সঠিক বিকাশও হচ্ছে কিনা। অর্থাৎ সঠিক বয়সে হাসতে কথা বলতে বসতে আর দাঁড়াতে শিখছে কিনা। এগুলো ভবিষ্যতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
২৪ ০৩.২০২৪