বেলা বারোটা নাগাদ বাড়ির সামনের রাস্তায় নেমেছি| দুটো ফুটপাথ জুড়ে রোদ একেবারে ছড়াছড়ি হয়ে আছে| X-mas-এর ঠিক এই সময়টাতে হু হু শীতে যখন এমন রোদ হতো আনন্দের চোটে আমরা বলতাম আজ রোদের বৃষ্টি হচ্ছে রে| দেখিস এবারের খ্রিষ্টপূজোয় সান্তা আমাদের সাথে কত মজা করবে| কত হাসবে| কত বল ডান্স করবে|
যেদিনের কথা বলছি, দেখি ফুটপাথের ওপর একটা চমচমের মতো মিষ্টি বাচ্চা — কোলভর্তি সান্তা নিয়ে লাফাচ্ছে| একটা সান্তায় হয়নি, দুতিনখানা কিনেছে| দুপুরের চড়া রোদে সান্তাদের লাল লাল কোটগুলো খোলতাই হয়েছে| তার বাবা বোধহয় উল্টোদিকের ফুটপাথে আরো কিছু কিনছিলেন| বাবাকে সান্তাগুলো দেখানোর জন্য এপাশ থেকে বারবার চিৎকার করে ডাকছিল বাচ্চাটা|
সামান্য ধৈর্য্য রাখতে পারলেন না মা| বোধহয় মনে করলেন দুচারটে সান্তা কিনে দিলেই কর্তব্যকর্ম শেষ| সেরফ আনন্দে দুদশ বার লাফাবার জন্য বাচ্চাটা বেধড়ক মার খেয়ে গেলো মায়ের কাছে|
গালাগাল দিলাম জোরসে| ভ্রূক্ষেপ নেই মায়ের| ততক্ষনে বাবা এপাশে চলে এসে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরেছেন| এবার বাবার ওপর নিজের অধিকার দেখাবার জন্য বাচ্চাটাকে টানতে টানতে একটি অন্ধকার দোকানঘরে ঢোকাবার চেষ্টা করলেন মা|
ভুলে গিয়েছিলেন যীশুপুত্রদের আনন্দ সহজে নষ্ট হয় না| তাই মায়ের মার খেয়ে চোখ ফেটে জল এলেও হেসেই যাচ্ছিলো সে| আহা হা এমন রোদবৃষ্টি দিনে সবার সামনে আমার ছোট্ট শীতপাখিটির কি অপমানই না হলো| বেবাক সান্তা| লাল কোট রঙ হারাচ্ছে দ্রুত| সূর্য্যে কী মস্ত ছায়া! তবু খিলখিল|
দিন চলেছে নদী হয়ে ——
এসেছে মারণরোগ|
কোনো সরকার, কোনো বিদ্যাধর, কোনো মিডিয়া –গণতন্ত্রের তিন, চার না পাঁচনম্বর থামগুলো কোভিডবন্দী শিশুর দীর্ঘ অবসাদ বা তার নিরাময় নিয়ে বলেন না একটি শব্দও|
একদল মারে|
অন্যদল ফের মারে|
ত্রিকালজ্ঞ মারার খবর দেয়| রসগোল্লায় জিভ ভিজিয়ে|
তবু আগামীর শিশু মুক্তি দেবে আমাদের|
হাসবে|
হয়ত ম্লান|
তবে নিশ্চিত| অমলিন|
তার পিতা ক্ষমার ভগবান|
মহাবিপ্লবী যীশু|
মরতে মরতেও ক্ষমা করে যান মৃত্যুদাতাকে|
সন্তান হারে কখনো?
উপহার পাই যেন —-একটি বড় সবুজ মাঠ|
আর আর আর? আর কী দিবি আমাদের?
——-” আমার যা খুশি “!
Ok. Done
সত্যি কি সুন্দর লেখা। শিশুর মন অনেকেই বোঝে না। শুধু লাল কোট রঙ হারাচ্ছে তা অনেক রঙ হারিয়ে যাচ্ছে। যীশু এখন আবার আসুক। আবার ক্ষমার বিপ্লব আসুক। সবুজ পাতা ক্ষমায় ভরে উঠুক এই ক্ষমাহীন সংসারে।