kবিখ্যাত IAS কোচিং সেন্টার Khan Study Group কে পাঁচ লক্ষ টাকা ফাইন করেছে Central Consumer Protection Authority (CCPA)। খান গ্রুপ সব কাগজ আর মিডিয়ায় এই মর্মে বিজ্ঞাপন দিয়েছে ২০২২ এর UPSC সিভিল সার্ভিসের ৯৩৩ সফল পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৮২ জনই নাকি ওদের কোচিং সেন্টারের।
এ বিষয়ে CCPA নোটিশ জারি করলে খান কোচিং সেন্টার জানায় যে, আসলে ওই ৬৮২ এর মধ্যে ৬৭৪ জনই তাদের সেন্টারে পড়তেন না। ওই সফল পরীক্ষার্থীরা হয়ত কখনও ওদের ওয়েবসাইট দেখেছেন, কেউ কেউ হয়ত বিনামূল্যের ‘মক টেস্ট’-গুলি দিয়েছেন। আর বাকি ৮ জন, তাঁরা কেউই ওই বছরের নয়। কেউ ২০১৯, কেউ ২০২০ তে পড়েছেন।
অর্থাৎ, ২০২২-এ, খান কোচিং সেন্টার থেকে, কারেন্ট কোচিং ব্যাচের একজনও পরীক্ষায় চান্স পাননি। পেপার জুড়ে অত ছবি ধাপ্পা!!
খবরটা পড়েই মনে হলো, Akash, Fiitjee, Allen জাতীয় কোচিং সেন্টার নিয়ে এরকম তদন্ত CCPA করে দেখবেন না? আজকাল ইশকুলগুলোতেও এসব কোচিং সেন্টারের লোকজন আসে – ইশকুলের ছাত্রছাত্রীদের ‘মক টেস্ট’ বা বিভিন্ন গেরামভারি নামের পরীক্ষা দিতে উদ্বুদ্ধ করা হয় – সেখানে রেজিস্ট্রেশন করার সময়ই সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীর যাবতীয় ডিটেইল নেওয়া হয় – কোচিং নিক বা না নিক, পরীক্ষায় সফল হলে সেন্টারের সফল পরীক্ষার্থীর তালিকায় তার ছবি ও নাম ছাপাতে বাধা কোথায়!!
এবং এই যে সফল ছাত্রছাত্রী মাত্রেই কোনও না কোনও কোচিং সেন্টারের প্রোডাক্ট, এমন বার্তা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদেরও যেকোনও মূল্যে কোচিং সেন্টারমুখী করে তুলছে, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনও যেনতেনপ্রকারেণ কোচিং সেন্টারের দেড়-দুই-আড়াই লাখ টাকা জোগাড় করতে বাধ্য হচ্ছেন।
প্রথমত, এঁদের দাবি যদি সত্যি হয় – অর্থাৎ সফল ছাত্রছাত্রী মাত্রেই কোচিং-প্রাপ্ত – যদি কোচিং ছাড়া সত্যিই আজকাল ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হওয়া অসম্ভব হয়ে যায়, তাহলে তেমন এন্ট্রান্স টেস্ট বা পরীক্ষাপদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বসা জরুরি।
জাতিগত সংরক্ষণের চোটে মেধা কীভাবে পদে পদে অপদস্থ হচ্ছে, এ নিয়ে অনেককেই বিচলিত হতে দেখি – কিন্তু কোচিং সেন্টার যেভাবে আর্থিক সামর্থ্যের ভিত্তিতে সংরক্ষণের পরিকাঠামো তৈরি করে ফেলছে, সে নিয়ে কাউকেই কিছু বলতে শুনি না। (প্রাইভেট মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে মোটা টাকা দিয়ে ভর্তি হওয়ার সুবিধের কারণে ‘মেধা’-র অসম্মান নিয়ে তো কথাবার্তাই দেখি না।) এ নিয়ে কথা বলতে গেলে একজন বামপন্থী মানুষই আমাকে জানান, এসব কোচিং সেন্টার নাকি গরীব মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। শুনে অবাক হলাম। কেননা, কোচিং সেন্টারে ৯০% ছাড় মানেও হরেদরে মোটা টাকা দিতে হওয়া, কেননা টিউশন ফিজ বাদে আরও অনেক খরচার বহর আছে, যাতে তথাকথিত ‘স্কলারশিপ’ মেলে না। তদুপরি, ব্যবসা করতে বসা কোচিং সেন্টার সামাজিক কল্যাণে ব্রতী হতে পারেন, সামাজিক সাম্যের কাজে অগ্রসর হবেন – এমন সোনার পাথরবাটির কথা বামপন্থীদের কেউ কেউও বিশ্বাস করতে পারছেন!!
আর দ্বিতীয়ত, এঁদের দাবি যদি মিথ্যে হয় – অর্থাৎ খান স্টাডি গ্রুপের মতোই, সফল পরীক্ষার্থীদের সামান্য অংশই যদি এঁদের সেন্টারে কোচিংপ্রাপ্ত হন, বা এঁদের সেন্টারে যাঁরা কোচিং নেন তাঁদের সামান্য কয়েকজনই যদি পরীক্ষায় সফল হন – তাহলে তো এঁদের এমন প্রচারের ঢক্কানিনাদ স্রেফ অনৈতিক-ই নয়, রীতিমতো অন্যায় ও শাস্তিযোগ্য। মিথ্যাপ্রচার এবং চিটিংবাজি, দু’কারণেই। এবং এই প্রচারে ভুলে উচ্চমধ্যবিত্ত-মধ্যবিত্ত-র টাকা গচ্চা যাচ্ছে, যে আর্থিক ক্ষতি তাঁরা হজম করতে পারলেও পারতে পারেন – কিন্তু নিম্ন-মধ্যবিত্তর পক্ষে টাকাটা অনেক। তদুপরি, ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই ক্লাস সেভেন-এইট থেকে এসব সেন্টারে দৌড়াচ্ছে – সপ্তাহে পাঁচদিন ইশকুল আর বাকি দুদিন আকাশ-ফিটজি-অ্যালেন – এ দৌড় যদি এমনকি কেরিয়ার মজবুত করার ক্ষেত্রেও অবান্তর হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাপ করার মতো মানদণ্ড কোথায় পাব!!
সত্যিটা কেউ খুঁজে দেখতে পারেন? প্লিজ??