Coincidence বা সমাপতন বলে একটা শব্দ আছে যার একটা অন্য নাম “কাকতালীয়”। কাক ডেকে উঠলো আর তার পরেই তালগাছ থেকে পাকা তাল টুপ করে খসে নিচে পরলো এই দুটি ঘটনার মধ্যে আপাত যোগাযোগ থাকলেও যুক্তি বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গিতে খুঁটিয়ে দেখলে কোনও যোগাযোগ যে নেই সেটা ধরা পরে।
এই যে যোগাযোগ এর কথা বললাম, একে temporal association বলে অর্থাৎ দুটি event বা ঘটনার মধ্যে সময়কালের যোগাযোগ। আগে কাকপাখিটি ডেকেছিল এবং তার পরে তালফলটি খসে পরেছে। এই বিবৃতিটি সব অর্থে সঠিক। মুশকিল এখানেই যে এই সঠিক বিবৃতিটি খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ না করলে আমরা একটা বেঠিক বিবৃতি দিয়ে ফেলতে পারি – কাক ডাকার জন্যই তাল খসে পরেছে। একে বলে causal association বা কার্যকারণ এর যোগাযোগ। এক্ষেত্রে কোনও কার্যকারণ সম্পর্ক না থাকলেও স্রেফ টেম্পোরাল এসোসিয়েশন আছে বলেই আমরা ধরে নিলাম যে কজাল এসোসিয়েশনও আছে।
এই হাস্যকর অপযুক্তিকে আরেকটু বাড়িয়ে চিন্তা করার একটা মারাত্মক উদাহরণ দেয়া যাক, সেটাই এই লেখার আসল বিষয়। ধরা যাক কোনও মরণাপন্ন রুগী হাসপাতালে এসেছেন। তাঁকে বাঁচানোর জন্য বৈজ্ঞানিক প্রটোকল মেনে একটি জীবনদায়ী ওষুধ ইনজেকশন দেয়া হল। সেই ওষুধটি কাজ করলো না কারণ তার আগেই রুগীর অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
এবার এই ঘটনার পরে রুগীর বাড়ির লোক বলতে পারেন যে রোগীকে ডাক্তার/নার্স ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলেছে। অর্থাৎ সেই বাড়ির লোকের কাছে টেম্পোরাল এসোসিয়েশন মানেই কজাল এসোসিয়েশন। আগে ইনজেকশন পরে মৃত্যু, অতএব ইনজেকশনের জন্যই মৃত্যু। এই কুযুক্তি মাথায় চেপে বসার ফল হয় মারাত্মক। এর পরেই রাগের মাথায় হাসপাতাল ভাঙচুর, ডাক্তার/নার্সকে গালাগালি, মারধোর ইত্যাদি।
এমনও হয়েছে যে রুগী মরণাপন্ন নয়, তার প্রটোকল মেনে চিকিৎসা করার জন্যই তাকে ইনজেকশন দেয়া হয়েছে (বা শিশুদের ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে) এবং তার পরে রুগীর (বা শিশুর) অবস্থার অবনতি হয়েছে বা মৃত্যু হয়েছে এবং তারপরে ওই একই ভাঙচুর, মারধোর। অর্থাৎ সেই একই ফ্যালাসি বা কুযুক্তি।
ইনজেকশনের সাথে মৃত্যুর আদৌ কোনো কার্যকারণ সম্পর্ক আছে কিনা সেটা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেই বলা সম্ভব। এর জন্য ওই ইনজেকশনের পরীক্ষা, রোগীর পোস্টমর্টেম পরীক্ষা, রুগীর চিকিত্সার সব কাগজপত্র পরীক্ষা ইত্যাদির পরে বিশেষজ্ঞরা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এর আগে যা কিছু সিদ্ধান্ত তার সবটাই অযৌক্তিক, অবৈজ্ঞানিক।
লেখাটা যেহেতু সর্বসাধারণের জন্য লেখা তাই জটিল বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ইচ্ছে করেই বাদ গেছে। এই ত্রুটি নিজগুণে পাঠক মার্জনা করবেন।