নিজেদের চারপাশে আমরা সবসময় একটা কমফোর্ট জোন বানিয়ে রাখতে পছন্দ করি। যাঁদের বয়স একটু বেশির দিকে তাঁরা এই কমফোর্ট জোনে থাকতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন, বলা ভালো এর মধ্যে স্বাছন্দ্যে থাকা উপভোগ করেন।
এই কমফোর্ট জোনের মধ্যে অনেক শান্তি আছে, নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নেওয়া আছে। কোন রকম সমালোচনার ভয় না পেয়ে নিজেদের মতো কাজ করে নেওয়া যায়। খুব সুন্দরভাবে আমাদের কমফোর্ট জোন আমাদের খুঁতগুলোকে ঢেকে রাখে।
বয়স বাড়তে থাকলে একটা সময়ের পর এই কমফোর্ট জোন নিজেদের অজান্তেই সংকুচিত হয়ে আসে। জীবনে আমাদের শেখবার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই কমফোর্ট জোন স্বল্পমেয়াদী হলেই ভালো। ক্রাইসিসের সময় নিজের ইচ্ছেমত নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারি জিরিয়ে নিতে পারি। যেখানে আমরা বিশ্রাম নিতে পারি। কিন্তু ভয় থাকে এই কমফোর্ট জোনই না নতুন কোনও ক্রাইসিসের জন্ম দেয়! তাই কমফোর্ট জোনকে আরও সম্প্রসারিত করুন, নিজের বাঁধনগুলো আলগা করে ধাক্কা দিন নিজেকে, এক জোন অতিক্রম করে পরের জোনে গিয়ে পৌঁছান।
আমেরিকান সোশ্যাল সাইকোলজিস্ট জুডিথ এম.বার্ডউইক (Judith M. Birdwick) Danger in the Comfort Zone বলে এই নিয়ে আস্ত বই লিখে ফেললেন। তারপর ধীরে ধীরে পজিটিভ সাইকোলজিতে এই নিয়ে চর্চা বৃদ্ধি পায়! কমফোর্ট জোন সংক্রান্ত আলোচনায় ৪ টি মানসিক অবস্থানের কথা বলা হয়-
১। কমফোর্ট জোন (Comfort Zone)- এখানে তার দুশ্চিন্তা ভয় উদ্বেগ সবচেয়ে কম থাকে। তার কাজের মধ্যে স্বাভাবিক স্থিতবস্থা চলে আসে। নিজের পেশাদারি জীবনের যে দক্ষতা বা স্কিল তার কোনও স্বাভাবিক উন্নতি হয় না।
২। ফিয়ার জোন (Fear Zone)- এখানে সে তার নিজের কমফোর্ট জোন অতিক্রম করে এসে পৌঁছয়। অন্যের কথার উপর খুব গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে, নিজের বিচার বুদ্ধির উপর আস্থা অনেকটা কমে যায়। এই সময় নিজেকে নিয়ে হতাশ লাগা, ক্লান্ত লাগা এইগুলো শুরু হয়।
৩। লার্নিং জোন (Learning Zone)- এখানে নিজের কমফোর্ট জোনটাকে সে প্রসারিত করতে পারে, নতুন নতুন জিনিস শিখতে শুরু করে, নতুন নতুন বাধা ও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জকে সে অতিক্রম করতে পারে।
৪। গ্রোথ জোন (Growth Zone)- এখানে সে নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে বুঝতে পারে, জীবনে কি কি করতে চায় তা ছোট ছোট ধাপে পূরণ করতে শুরু করে। সে নিজেই ঠিক করতে পারে তার জীবন কোন পথে চলবে! তার সামগ্রিক কাজের গুণগত মাণ এই সময় ভীষণভাবে বৃদ্ধি পায়।
আপনি যদি আপনার আরামের অঞ্চলে খুব বেশি সময় থাকেন তাহলে ভেবে দেখবেন তা আপনাকে আপনাকে শেষ অবধি নতুন কিছু শেখায় না। তাই কখনও কখনও একটা ধাক্কার প্রয়োজন হয়!
কি কি উপায়ে আমরা এই কমফোর্ট জোনের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারি? রোজ অল্প অল্প করে নিজের অভ্যাস বদলান, নিজের পেশাদার জীবনে আরও দক্ষ হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন, প্রতিদিন অন্তত একটা করে নতুন জিনিস জানার শেখার চেষ্টা করুন যা আপনাকে নতুন মানুষ তৈরি করবে। নিজের পছন্দের জিনিসকে নিয়ে সৃষ্টিশীল এবং সৃজনশীল কিছু অভ্যাসের মধ্যে থাকুন। খুব সততার সঙ্গে নিজের দুর্বল দিকগুলো বুঝতে শিখুন। শেষে প্রয়োজন অসম্ভব ধৈর্য এবং দৃঢ় বিশ্বাস।
জীবন কিন্তু শুরু হয় কমফোর্ট জোনের বাইরে পা রেখে, প্রশ্ন হল আপনি কখন তা শুরু করবেন।