(জীবন থেকে নেওয়া)
–একটু সরে বসবেন। অসুবিধা হচ্ছে।
–আর কত সরে বসবো বলুন তো? লেডিস সিট থাকতেও।
–ওখানে সিট নেই। আর ঠিক সেভাবে সবজায়গায় লেডিস জেন্টস করি না পাবলিক বাথরুম ছাড়া।
–ঠিক আছে, ঠিক আছে ,দেখুন এর বেশি চেপে বসা সম্ভব নয়। আর কাজও করছি একটা ।
–হ্যাঁ সেটা দেখছি তো। যদিও দেখা উচিৎ নয় অন্যের মোবাইল তবুও। এত ওয়াও ওয়াও লিখতে লিখতে হাঁপিয়ে যান না?
–মানে? আপনি পাশে বসে আমার মোবাইল দেখছেন! অদ্ভুত তো!
–না, সুন্দরী মহিলাদের ছবিগুলো দেখছিলাম। বলতে পারেন সেটা আপনার মোবাইলেই।
ছেলেটি মুখ ঘুরিয়ে মেয়েটিকে পুরোটা দেখে নেয়। শ্যামলা রঙ,সাধারণ চেহারা, চোখ দুটো অসম্ভব জীবন্ত। মেট্রো টালিগঞ্জে আসতেই দুজনেই নেমে যায়। অটো স্ট্যান্ডেও সেই পরপর লাইনে দুজন।
ছেলেটির মধ্যে কিছু একটা হয়। খুব কথা বলতে ইচ্ছা করে মেয়েটির সাথে। মেয়েটি সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতেই লাইনে দাঁড়িয়ে।
–হ্যালো ,আপনি কি চাকরি করেন?
–আমাকে বলছেন?
–হ্যাঁ।
–ওই করি একটা কিছু।
–আমি না আইটি-তে আছি।
–আমি জানতে চাই নি।
–না, মানে এমনি বললাম।
কাকতলীয় ভাবে অটোতেও দুজনে পাশাপাশি। মেয়েটি বাইরে তাকিয়ে। ছেলেটি মোবাইল বন্ধ করে ভ্যাবলাকান্ত হয়ে বসা। রানিকুঠিতে মেয়েটি নামতেই ছেলেটিও তড়াক করে নেমে পরে।
–একটু চা খাবেন?
–আচ্ছা একটু সরে বসতে বলেছিলাম মেট্রোতে। আর মুখ ফস্কে বলে ফেলেছিলাম কিছু কথা। তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আপনি আসুন।
–প্লিজ আপনি যেরকম ভাবছেন আমি সেরকম নই। মোটামুটি পড়াশুনা করে একটা সম্মানজনক চাকরি করি।
–আমি কি করবো ?
–না মানে ওই মহিলাদের ছবিতে লাইক আর কমেন্ট করেছিলাম, আপনি দেখে ফেলার পর কেন জানি না কিরকম একটা লজ্জা বোধ হচ্ছে।
–সেটা কেন হবে বলুন তো? সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র। ওনারা সুন্দরী। আপনারা পছন্দ করেন। ভেবে নিন না আমার হিংসা হচ্ছিল। তাই ওইসব বলে ফেলেছি।
–প্লিজ এক কাপ চা।সামনেই দোকান। ভয় নেই আপনার।
–এই তো ভয় বলে দিলেন যখন তখন তো চা খেতেই হবে। আমাদের মত মহিলাদের অত ভয় পেলে চলে না। ট্রামে বাসে যাতায়াত করতে হয়। ঠিক আপনার পছন্দমত নারী নই।
–আচ্ছা আপনার আমাকে খুব খারাপ লেগেছে তাই না?
–না তো।যা স্বাভাবিক তাই করছিলেন।
–স্বাভাবিক বললেন!!
–হ্যাঁ মানুষ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে নিকৃষ্ট তাই স্বাভাবিক।
ছলাক করে গরম চায়ের চুমুকে জিব পুড়ে যায় ছেলেটির।
–কি হলো অবাক হলেন নাকি?
–একটু যদি বুঝিয়ে বলেন।
–মানুষই তো অন্য প্রাণীর দুধ খেয়ে বড় হয় বলুন। আর কোনো প্রাণী করে সেটা? মানুষই তো আর একটা মানুষকে খুন করতে পারে অবলীলায়। অন্য কোনো প্রাণী তার স্বজাতিকে সহজে করে না, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া।
–বাপরে, প্লিজ বলবেন আপনি কি করেন?
–কলেজে পার্ট টাইম পড়াই। শুনতে ভালো লাগলেও টাকা পয়সা বিশেষ কিছুই পাই না। আর সেটাও যাবে এবার।বাবা পেপারে অ্যাড দিয়েছে বিয়ের জন্য।
–কবে, কোন পেপারে? একটু যদি বলেন?
–কেন? আপনার কি দরকার?
–না, না, আমার এক বন্ধুর জন্য। ওর মা বাবা খুব ধরেছে আমায়।
–এতক্ষণ কি ঘটকালি করছিলেন নাকি? আর আমার এই চেহারায় সহজে বিয়ে হবে না আমার, এটা জানি। ফালতু সময় নষ্ট করলেন।
–কোন পেপার কবে বেরিয়েছে, জানলাম না এখনও।
–কেন অপমান করছেন বলুন তো? এরপর কি বিষ বার করবেন?
–বিষ!!
–হ্যাঁ ,জানেন না মানুষের কামড় বিষাক্ত। মুখে অজস্র ব্যাক্টেরিয়া ভাইরাস থাকে। ইনফেকশন হয় কামড়ে।
“আনন্দবাজার গত সপ্তাহের রবিবারে”। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বাড়িতে ফিরে খাওয়া শেষে মায়ের অভিযোগ, “আজও কিছু ফটো এসেছে ডাকে।এবার তো ঠিক কর।আর কত সুন্দরী লাগবে তোর বলতো?”
–পেয়ে গেছি মা। এই ঠিকানায় ফাইনাল কথা বলে নিও।
ছেলে অন্ত প্রাণ মা বাবা মেয়ের বাড়িতে গিয়ে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেয়।
মেয়ের মা বাবা ছেলের সমন্ধে সব শুনে, ছেলের বাবা মায়ের পরিচয় সামাজিক অবস্থা জেনে অবাকই হন এভাবে যেচে দাবিহীন সুপাত্র পাওয়ায়।
মেয়েটি অবাক হয়।আজ অনেক দিন পর আয়নায় নিজেকে দেখতে থাকে খুঁটিয়ে ।
বাইরে কোথাও গান হচ্ছে
বাতাসে বহিছে প্রেম
নয়নে লাগিল নেশা
কারা যে ডাকিল পিছে
বসন্ত এসে গেছে…….