মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এর রেজাল্ট বেরোলো। কেউ কেউ প্রথম দ্বিতীয় হলেন। মিডিয়া তাঁদের খুব করে প্রচার করল। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ খুব সুবক্তা। যাঁরা ভালো কথা বলেন তাঁদের থেকে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা বেশী লাভবান হবেন। এঁরা খুব পরিশ্রম করেছেন। আরো অনেকেই করেছেন, বলতে গেলে প্রায় সবাই করেছেন। কেউ নিজের ক্লাসের সহপাঠীর সাথে, কেউ পাড়ার সহপাঠীর সাথে কেউ শহরের, কেউ জেলার কেউ রাজ্যের কেউ সমগ্র দেশের সহপাঠী সহপাঠিনীদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে খুব পরিশ্রম করছেন। এঁরা পরিশ্রম করছেন সেই নার্সারি থেকে, “সাহাবাবুর ছেলে বা ঘোষবাবুর মেয়ে ওই স্কুলে চান্স পেল আর তুই পেলি না?” সেই সময় থেকে, সেই নার্সারি থেকে প্রতিযোগিতা চলছে। এঁরা বড় হবেন, কলেজে ইউনিভার্সিটিতে প্রতিযোগিতা করবেন। তীব্র প্রতিযোগিতা। পড়াশোনা থেকে প্রেম সবেতেই। “বন্ধুর” সাথে প্রতিযোগিতা করে ক্লাসে বা অফিসে সবচেয়ে বিখ্যাত ছেলেটি বা মেয়েটিকে পটাবেন। তা সে যতই তার সাথে অমিল থাকুক না কেন। এই প্রতিযোগিতায় হয়ত হারিয়ে যাবেন, তাঁর যোগ্য সঙ্গী আদতে যিনি হতে পারতেন তিনি। অফিসে তিনি প্রতিযোগিতা করবেন সহকর্মীর সাথে, তা সে যে কাজই হোক না কেন। ইঞ্জিনিয়াররা আরেক ইঞ্জিনিয়ারের সাথে, ডাক্তাররা আরেক ডাক্তারের সাথে, গবেষকরা প্রতিযোগিতা করে গাদা গাদা গবেষণাপত্র প্রকাশ করবেন যার নিরানব্বই শতাংশ গোবর (সরি রাজনৈতিক কারণে গোবর কথাটি প্রত্যাহার করছি , “হস্তী বর্জ্য” )। এমন প্রতিযোগিতা চলবে স্বামীর সাথে স্ত্রী, ভাইয়ের সাথে বোন এমনকি পিতা পুত্র কখনো সখোনো। স্বামীর সাফল্যে খুশি হতে পারবেন না স্ত্রী বা উল্টোটা। কারণ প্রতিযোগিতা, যা শিশু বয়েস থেকে শিখিছে সমাজ।
এ কি শুধুই খারাপ, লাভ নেই কিছু? মস্ত লাভ, পুঁজিবাদ, কর্পোরেট চাইছে এই প্রতিযোগিতা চলতেই থাকুক। তাতে উৎপাদন বাড়বে বিশাল। লোকে খেটেই চলবে প্রতিযোগিতা করে, দিনরাত পরিশ্রম করবে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, গবেষক, শিক্ষক, এমনকি লেখক কবি গায়ক, শিল্পী। সকলেই সহপাঠী সহকর্মী, প্রতিবেশী, এমনকি পরিবারের সাথেও প্রতিযোগিতায় জিততে করবে গাদা গাদা উৎপাদন, যা বেচে দেবে পুঁজিপতি, কর্পোরেট। মাধ্যমিকের মেধাবী ভুলে যাবে মানুষ পড়াশোনা করে মুলত তিনটি কারণে (“এক থেকে দশের মধ্যে থাকব” এর জন্য নয়।)
১, পৃথিবী এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে জানতে, যাতে এখানে মানুষের বসবাস সম্ভব হয়।
২. নতুন কিছু আবিষ্কারের জন্য বা সৃষ্টি র জন্য। তা সে বিজ্ঞান থেকে শিল্পকলা যাই হোক না।
৩, কেবল জানার জন্য, যেটা মানুষের সহজাত।
যারা মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকে মেধাতালিকায় এল, তারা বয়ে চলবে এই তীব্র প্রতিযোগিতার বিষম বোঝা,আজীবন। তারা কর্পোরেটের জন্য খুবই উৎকৃষ্ট শ্রমিক। শিশুর জন্ম থেকে (কার আগে বাচ্চা হলো কার পরে আর কার হয়নি) শ্মশান ঘাটে কে একটু প্রভাব খাটিয়ে আগে দাহ করতে পারল অবধি এই প্রতিযোগিতা চলেছে চলেছে চলেছে……. তাতে কারো লাভের অংক বেড়ে চলেছে চলেছে চলেছে………