মানুষকে আপোস করতেই হবে। হয় বিবেকের সাথে,
অথবা স্বাচ্ছন্দের সাথে,
কী মানবে আর কী এড়িয়ে যাবে, সেটা ব্যক্তির ওপর।
তবে আপোস না করে কেউ পার পাবে না।
যে মানুষটা উদয়াস্ত নিপীড়িতদের অধিকার নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন,
তাঁর বাড়িগাড়ি কিছু হবে না, পুলিশের খাতায় ফালতু কিছু কেস থাকবে,
রাতবিরেতে ক্ষমতাধরের গুন্ডারা ‘দুয়ারে হুজ্জতি’ প্রকল্প আনবে।
ঘরের শান্তির সাথে আপোস করেই,
অন্যের ঘরের অভাব ও বঞ্চনার সাথে তাঁর যুদ্ধ।
ঠিক বিপরীতে,
বনাঞ্চল, পুকুর আর বস্তি বেমালুম লোপাট করা জমিব্যবসায়ীটি,
তাঁর প্রাসাদোপম সেন্ট্রাল এসি বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোটি টাকার গাড়ি চেপে পরের শিকারের দিকে যেতে যেতে
রাস্তায় তাকিয়ে বোঝেন,
অজস্র নামহীন ভিটেহারা লোক তাঁকে অভিসম্পাত করছেন ।
তাঁর কিছু যায় আসে না
ঐশ্বর্যের জন্য তিনি লাখো লোকের গালাগালির সাথে আপোস করেছেন।
যে মেয়েটি সারাদিন ঘর টিপটপ করে রাখে,
এক মিনিটও যাকে কেউ বসতে দেখেনি,
সে তার নিজের স্বাস্থ্য ও রোজগারের ক্ষমতার সাথে কোথাও আপোস করছে।
যে ছেলেটি সারাদিন ল্যাপটপ কোলে নিয়ে
‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ নামক আধুনিক চব্বিশ-সাত বন্ডেড লেবার,
সে তার প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানোর সাথে আপোস করেছে,
বাড়িতে থেকেও মেয়ের হোমওয়ার্ক কী সে জানে না,
খেতে বসে তার মাথায় ঘোরে টার্গেট আর ডেডলাইন,
সন্ধের বাতাস গায়ে মেখে প্রিয়তমাটির সাথে উদ্দেশ্যবিহীন পায়চারি তার কখনো ঘটে না।
যিনি ঈশ্বর মানেন,
তিনি নিজের দায় ওপরওয়ালার ওপরে চাপিয়ে দেওয়ার আপোস করছেন।
যিনি মানেন না,
তিনি দুঃখ শোক দুশ্চিন্তা খুলে বলার জায়গা হারানোর সাথে আপোস করছেন।
যিনি শুধু আল্লাহ, রাম বা গডকে মানেন,
তিনি বিপরীতমতাবলম্বীদের সাথে অ-বন্ধুতার আপোস করেছেন,
যিনি ভাবেন সব ধর্মই সমান,
তিনি একচক্ষু-মৌলবাদরা তাঁকে গালাগালি দেবে,
সেই ধারণার সাথে আপোস করেছেন।
পক্ষবিহীন কোনো মানুষ হয় না,
জন্ম থেকেই আমরা কোনো কোনো না কোনো দলের,
সে গোষ্ঠী কখনো বদলায়,
কখনো সংখ্যায় বাড়ে,
কিন্তু ডিজিটাল জগতের মতো এক বা শূন্য হয় না।
আর যখনই আমরা এক গোষ্ঠীর পক্ষে,
তখন আরেক দলের বিরুদ্ধে না গিয়ে আমাদের উপায় নেই,
সেই পরিস্থিতির সাথে আমাদের আপোস করতেই হয়।
যিনি যুদ্ধবাজ, তিনি অসংখ্য মানুষের ঘরহারা প্রিয়হারা হওয়ার সাথে আপোস করেছেন,
কোনো ভূখণ্ড তার মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয়।
যিনি শান্তিকামী, তিনি প্রবলের অন্যায় ধমক কানে না শোনার সাথে আপোস করছেন,
‘কাপুরুষ, তাই লড়তে ভয় পায়’ সেই মন্তব্য আজীবন শোনার সাথে আপোস করছেন।
আপোস করতেই হবে, সকলকে খুশি কখনো করা যাবে না,
তুমি ক’র পক্ষে হলে খ’য়ের বিরোধিতা’র সাথে আপোস করতে হবে,
আর খ’এর হয়ে দাঁড়ালে ক’য়ের এবং গ’এর চক্ষুশূল হওয়ার সাথে আপোস করতেই হবে তোমাকে।
কাউকে ভালোবাসলে তার অপছন্দগুলোর সাথে আপোস করতে হয়,
সন্ধির পরে সমস্ত বিচ্ছেদে স্মৃতি আর দোষারোপের সাথে আপোস করতে হয়।
আপোস করাটা কোনো বড় কথা নয়। শুধু কিসের সঙ্গে করো,
খুব ভালো করে হয় বেছে নিতে তাকে।
সুবিধার আপোসীর পাপোষের কোটিদের ঝাঁকে,
গুটিকয় অসুবিধা-আপোসীরা সভ্যতা কাঁধে করে নিয়ে যেতে থাকে।