অকালে প্রয়াত হলেন ডা:সোমনাথ ভট্টাচার্য্য, ডেপুটি সিএমওএইচ ৪, বাঁকুড়া এবং ডাঃ শুভাশিস চন্দ, সুপারিনটেন্ডেন্ট, জেডি হাসপাতাল কুচবিহার…..
একই দিনে, আমাদের সাথী, সংগঠনের সদস্য, সহকর্মীর অকাল প্রয়াণে আমরা গভীর ভাবে শোকাহত। তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি এবং তাঁদের পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
যে কোন মৃত্যুই দুঃখের। বেদনার। সেই পরিবারের কাছে অপূরণীয় ক্ষতি। আর সেই মৃত্যু যদি অকালে, অসময়ে হয়, তার ব্যথা বহুদিন হৃদয়ে বাজে। সে আঘাত অসীম বেদনার।
সোমনাথ এবং শুভাশিস আমাদের পেশা এবং চাকরিতে সহকর্মী শুধু নয়, আমাদের সহমর্মী। দীর্ঘ দিন আমাদের সাথে ওদের সাংগঠনিক সখ্যতা এবং পথ চলা। দুজনেই ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে। কালক্রমে যুক্ত হয়েছিল সরকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিষয়ে। ব্যক্তিগত জীবনের যাবতীয় অসুবিধা ও জটিলতা কাটিয়ে নিজেদের নিয়ত নিয়োজিত রেখেছিল সেই কর্তব্য পালনে। প্রাণপণে চেষ্টা করেছে নিজেদের সফল ও কৃতী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে।
যদিও দুজনের কেউই সরকারের সুনজরে থাকতে পারেনি। নিজের নিজের আত্মসম্মান ও কর্মকুশলতা প্রয়োগ করতে গিয়ে অযথা ভোগ করতে হয়েছে সরকারী কোপ। এক জায়গা থেকে প্রায় বিনা কারণে অন্যত্র বদলি এবং অসম্মান ভোগ করতে হয়েছে। কাজের নিরন্তর চাপ এবং কর্তৃপক্ষের অহেতুক রক্তচক্ষুতে দুজনেই মানসিকভাবে বিব্রত থাকতো।
স্বভাবলাজুক, মিষ্টভাষী, তাঁদের প্রকৃতির বদল ঘটাতে পারে নি। তাই সকলের অলক্ষ্যে নীরবে মানসিক চাপ ও কষ্ট সহ্য করেই জীবনটা কাটিয়ে গেল। নিজেদের শরীর স্বাস্থ্য ও মনের যত্ন নেওয়ার কথা ভাবেনি কোনোদিন।
সব মিলিয়ে নিজেদের সৃষ্টিশীলতার পরিপূর্ণ বিকাশ রয়ে গেল অসম্পূর্ণ। হারিয়ে গেল দুই জ্যোতিষ্ক আমাদের স্বাস্থ্যের নীলাকাশ থেকে।
এই চলে যাওয়া মর্মান্তিক। অসহনীয় বেদনার।
ওরা চেয়েছিল শান্তি। ওদের কামনা ছিল সম্মান। ওদের বাসনা ছিল নিজেদের শিল্পীসত্তাকে বিকশিত করার। শুধু আমাদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু নিয়েও গেল না হতভাগা দুই তরুণ চিকিৎসক।
এই দুইজনের অকালমৃত্যু আমাদের জীবিত, কর্মরত বন্ধুদের যদি নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করে তবে তাই হোক ওদের প্রতি আমাদের সেরা শ্রদ্ধার্ঘ্য। ওদের অসমাপ্ত কাজ আমাদের শেষ করতে হবে।
আসুন সকলে মিলে অন্যদের একটু সচেতন করার কাজ করি। সরকারকেও বাধ্য করি চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্য…বিশেষ করে মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে।
এএইচএসডি, পশ্চিমবঙ্গ