[ প্রথমতঃ ডাক্তার মাতাল , দ্বিতীয়তঃ ডাক্তার ডাক্তার বটে তবে ভদ্রলোক নয় সুতরাং শ্লীলতার কুল ছোঁয়া বক্তব্য ক্ষমনীয় । ]
◆◆ নামকরা সুপ্রতিষ্ঠিত ডাক্তার হরিমোহনের রবিবার ছুটি । আজ তাঁর ছোটবেলার বন্ধু নিখিলবন্ধু গোস্বামী বহু বছর পর দ্যাখা করতে আসছেন । চমৎকার একটা গল্পাড্ডা জমবে । নিখিলবন্ধু বর্তমানে সরকারি জিলা লাইব্রেরির চিফ লাইব্রেরিয়ান । দুজনের হাডুডু পর্ব শেষ হলে পর নিখিলবন্ধু বন্ধুকে প্রশ্ন করলেন
“ তোর পেশা নিয়ে যদি ….মানে ইন জেনারেল … ডাক্তার সম্পর্কে মানুষের তো কিছু কিছু প্রশ্ন থাকেই … মানে ….”
ডাক্তার দুএকটা পাত্তর পান করে ঈষৎ উচ্চ ছিলেন । বললেন “ আরে গুরু যা জানতে চাস বলে ফ্যাল … তুই শালা আমার জন্য পকেটে করে পাটালি নিয়ে আসতিস …একবার তোর পকেটে পিঁপড়ে ঢুকে ..হে হে হে হে হে হে হে হে হে হে হে হে হে হে হে হে হে হে ….”
নিখিলবন্ধু আরম্ভ করেন–“ তোরা সব সময় স্যুট টাই পরে থাকিস ক্যানো ?”
ডাক্তার গেলাসে একটা সিপ দিয়ে বলেন–“ জানিস ? হঠাৎ মনে পড়লো ….আমাদের মেডিক্যাল কলেজে ফ্রেশার্স ওয়েলকামে প্রোফেসর নিতাই চক্কতি … উনি নাকে নস্য নিতেন …বললেন – বাঁবাঁসঁকঁল তোঁমরা তোঁ ডাঁক্তারীতে চাঁন্স পেঁয়ে বেঁজায় খুঁশি ….জাঁনো কিঁ ভঁবিষ্যঁতে সঁন্ধেবেলা সেঁজেগুঁজে রাঁস্তার মোঁড়ে খদ্দেঁর ধঁরতে দাঁড়াতে হঁবে ? আমাদের অবস্থাটা বুঝলি ঐ রকমই । যার যতো ঠাঁটঠমক দামি দামি গাড়ি সে ততই বড়ো ডাক্তার …এটা তো তোরাও চাস , অস্বীকার করতে পারিস ? এলোমেলো সস্তা ডাক্তার কে পাত্তাই দিবি না – তাই এত ঠাঁটঠমক – পরে আস্তে আস্তে আমরা নিজেকে ভুলে ক্রমশঃ আরও খোলসবন্দী হতে থাকি ।”
ডাক্তার একটা সিগারেট ধরান । নিখিলবন্ধু বন্ধুর দামী সুরায় চুম্বন করে শুনতে থাকেন ।
“ হ্যাঁরে তুই শের আফগান দেখেছিলিস ? অজিতেশের ? শেষ পর্যন্ত মানুষটাকে নিজের বানিয়ে তোলা শের আফগান ছদ্ম পরিচয়েই বাঁচতে হলো …মনে আছে ?” নিখিলবন্ধু মুখে একটা চিপস ফেলে ঘাড় নাড়েন । “আমরাও সেই রকম – ডাক্তার সেজে বসে আছি । এর বাইরে বেরোনো যায় না … বিয়ে বাড়িতে খেতে খেতে বলতে হয় খিচুড়ির মতো অথবা দৈএর মতোন পায়খানা বারবার হলে কি ওষুধ খাবেন … শালা ফ্রাইড রাইস মুখে তুলছি আর বলছি খিচুড়ির মতোন হলে এই ওষুধ খাবেন আর দৈএর মতোন হলে এটা … ছেলে বৌকে নিয়ে নেমন্তন্ন খেতে বসে পাশ থেকে শুনছি ডাক্তার কতোটা অমানুষ কতোটা জানোয়ারের বাচ্চা .. ঠিক কতোটা ক্যালালে এরা …..”
ডাক্তার আবার একটা চুমুক দিয়ে বলতে থাকেন–“ বিশ্বাস কর একদিন শের আফগানের স্যরি ডাক্তারের সাজটা ফেলে ফতুয়া আর পাজামা পরে … সেই ছাত্রজীবনে যেমন … পাড়ার চায়ের দোকানে গিয়ে বসেছিলাম … একজন হোম্রাচোম্রাও বৌ নিয়ে বাজার থেকে ফিরছিলেন বললেন … আরে ডাক্তার যে ! আমার বৌএর কদিন ধরে পেটে ব্যথা …. একটা ওষুধ বলে দেবে ? আমি দোষের মধ্যে বলেছিলাম ম্যাডাম একটু শুয়ে পড়ুন … পেটব্যথা তো কতো কারণেই হয় একবার দেখে দিই …” ডাক্তার চিপস মুখে দ্যান ।
নিখিলবন্ধু দুই ঢোঁক সুরাপান করে বলেন–“তারপর তারপর ?”
ডাক্তার একটা বিদঘুটে হাসি হেসে বলেন–“ তারপর ? আমায় এই মারে কি সেই মারে … এ্যাঁ কি ভেবেছেন মশয় ? ডাক্তার বলে মাথা কিনে নিয়েছেন ? এই রাস্তায় আমার বৌ শুয়ে পড়বে ? শালা শূওরের ইয়ে … আমি মাইরি বুঝলামই না আমার দোষটা কোথায় ?”
নিখিলবন্ধু বেজায় হাসেন । হাসতে হাসতে হিক্কা তোলেন “ কিন্তু শালা তোকে যে আমি সেদিনকে ফোন করলাম শালা আমার গ্যাসের থেকে বুকে ব্যথা হচ্ছে .. তুই তো ফিরিস্তি ধরিয়ে দিলি … তুই বন্ধু বলেই জিগ্গেস করছি … খিস্তি টিস্তি মারিস না ….”
ডাক্তার একটা ফিশ ফিঙ্গার মুখে ফ্যালেন । “ দাঁড়া একটু নেশা করি নৈলে বোঝাতে পারবো না ”
ডাক্তার ঢুকুঢুকু করে নিয়ে ঢুলুঢুলু চোখে বলতে থাকেন–“আমাদের প্রত্যেকের পেটে প্রত্যেক দিন মোটামুটি দু লিটার গ্যাস তৈরি হয় – এটা স্বাভাবিক – এটার ওষুধ – মাইরি বলছি – আমি জানি না ”
নিখিলবন্ধু ফিশফ্রাই চিবোতে চিবোতে বলেন–“তাহলে প্যান্ডি টা কিসের (কচরমচর) ওষুধ ?”
ডাক্তার বেশ রসিয়ে রসিয়ে চুমুক দিয়ে বলেন–“ ওটা পেটে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি বন্ধ করার .. তবে কিনা ঐ ডি জাতীয় ওষুধ বেশী খেলে শরীরে প্রোল্যাক্টিন বেড়ে ইম্পোটেন্ট হয়ে যেতে পারিস ….”
“ইম্পোটে…” নিখিলবন্ধু খেই পান না “ আসলে বেশ কিছুদিন আমার ওটা ঠিক মতো ইয়ে হচ্ছে না…. বিদিশা বলছিল ….”
কি বলছিল নিখিলবন্ধু আর ভেঙে বলেন না ।
ডাক্তার বলতে থাকেন–“ কিন্তু তোর বুকে ব্যথা হলে যদি সেটা হার্টের ব্যথা হয় তাহলে তুই মরে যাবি … মরেএএএ যাবিইইই ই … সেই জন্যই ফিরিস্তি… বুঝলি গান্ডু ?”
নিখিলবন্ধু বোঝেন । তারপর চোখ গোলগোল করে বলেন–“ দ্যাখ… তোরা যে ভাঙচুর টাঙচুর নিয়ে এ্যাতো কথা বলিস … বাড়ির মানুষ অসুস্থ হলে লোকের তো মাথা ঠিক থাকে না … এটা তো মানবি তুই ?”
ডাক্তার মিচকেপটাশের মতো কিম্বা খ্যাঁক শেয়ালের মতো খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসেন । হাসতেই থাকেন ।
নিখিলবন্ধু বিরক্ত হ’ন – সব শেষে ডাক্তারের মাথায় একটা রামগাঁট্টা লাগিয়ে বলেন–“ তোর বিচ্ছিরি হাসিটা বন্ধ কর..আর তোর কথাটা বল্ দেখি ”
ডাক্তার সুরাপাত্র হাতে তুলে বলেন–” বলতো ল্যামডা … তুই পটল তুললে কার সব থেকে বেশী লাভ হবে ?”
নিখিলবন্ধু অথৈ জলে পড়েন । “ আমি ? মরলে ? আমি মরলে আবার কার লাভ ?হাপগান্ডুর মতো কথা বলিস নাতো !”
ডাক্তার একটা দীর্ঘ চুমুক দিয়ে বলেন–“ তোর বৌয়ের লাভ হবে ”
নিখিলবন্ধু আবার চাঁটি তোলেন–“ তুই কিন্তু মাতাল হয়ে গেছিস .. ভাট বকছিস … আমি মরলে আমার বৌয়ের আবার কী লাভ?”
“ দ্যাখ তুই মরলে তোর বৌ তোর সর্বস্ব পাবে … বাড়ি ঘর টাকা কড়ি বরগা – স—-ব , এমনকি আরেকটা বরও পেয়ে যেতে পারে…” ডাক্তার মহম্মদ আলী স্টাইলে এবারের চাঁটিটা এড়িয়ে যেতে সমর্থ হ’ন “ কিন্তু ডাক্তার ? ডাক্তার কি পাবে বল্ তো ? মাঝের থেকে একটা পেশেন্ট কমে যাবে .. মানে বাঁধা ক্লায়েন্ট এক পীস কমে যাবে – আবার বদনামও হবে তাই না ? ”
নিখিলবন্ধু ভাবতে থাকেন । ব্যাপারটা ওনার সুরাচ্ছন্ন মগজে আস্তে আস্তে সেঁধোয় । তারপর উনি দাবাড়ু কার্লসেনের মতো পরবর্তী মাস্টারস্ট্রোকটি চালেন । “ তাহলে যে এ্যাতো কর্পোরেট হাসপাতালে ভাঙচুর মামলা মোকর্দমা হচ্ছে ? তার বেলা ? ”
ডাক্তার একটা ক্লাসিক সিগারেট ধরিয়ে ক্লাসিক হাসি ছাড়েন–“ কথা ঠিকই – তবে তুই ক্যানো সরকারি হাসপাতালে না গিয়ে কর্পোরেটদের কাছে যাচ্ছিস ? কেননা সরকারি হাসপাতালে মেঝেতে নোংরা কম্বলে শুতে হবে আর ছাতাপড়া বাসি পাঁউরুটি খেতে হবে – কেননা সেখানে এরচে’ বেশী ব্যবস্থা নেই কেননা সরকার টাকা দেয় না। তাই না ? আর এদিকে সরকার মিনিমাগনা কর্পোরেটকে জমি দিচ্ছে আবার একলাখি বিলে প্রায় আঠেরো হাজার টাকা জিএসটি কামিয়ে নিচ্ছে । সরকার ব্যবসায়ীদের মতোন লাভ দেখছে আর সুবিধে বুঝে ডাক্তারদের খিস্তি মারছে । আরে শালা ডাক্তার তো ওখানে চাকরি করে … চাকর .. শালা চাকর কি করবে ? আর তোরা ? সরকারি হাসপাতাল ইস্কুল সব উঠে যাচ্ছে … তোরা দাঁত ক্যালাচ্ছিস আর ডাক্তার ক্যালাচ্ছিস । আমরা আরও ভয় পাচ্ছি – ভয়ে আমাদের ইয়ে মাথায় উঠে যাচ্ছে … যেটুকু ডাক্তারি জানি তাও শালা ক্যালানির ভয়ে ভুলে যাচ্ছি …”
নিখিলবন্ধু বাধা দ্যান–“ চ্চুপ বে শালা মাসে বিশ ত্রিশ লাখ কামাচ্ছিস আর ভ্যাট সিক্সটি নাইনের বোতল নিয়ে বাতেলা মারছিস .. সব কটা হামবাগ … জোচ্চোর …..”
ডাক্তার সুরার পেয়ালা রেখে জুলজুল করে নিখিলবন্ধুর দিকে তাকিয়ে থাকেন । তাকিয়েই থাকেন । একদৃষ্টে তাকিয়ে তাকিয়ে ওনার চোখে জল আসে ।
নিখিলবন্ধু বলে চলেন–“ শালা মারবি নাকি ? মার শালা তোদের পয়সা আছে (সম্ভবতঃ নিখিলবন্ধুরও চড়ে গ্যাছে ) মার….ফাটিয়ে দে শালা তবু আমি বলবোই ……”
ডাক্তার চোখ মুছে একটু হাসেন–“ আরে মাথামোটা তুই কতো মাইনে পাস ? এক লাখ ?”
নিখিলবন্ধু তেরিয়া হয়ে বলেন–“ হ্যাঁ ঐ রকমই … তাতে কার কি ছেঁড়া গেলো ? ট্যাক্স দিই সাদা টাকা বুঝলি শালা ?”
ডাক্তার বলেন–“ মাসে তিরিশ লাখ মানে দিনে … যদি মাসে একদিনও ছুটি না নিয়ে তিরিশ দিন কাজ করি তাহলে … দিনে এক লাখ টাকা .. তাই তো ? তিনশো টাকা করে ফী হলে রিপোর্টিং … চেনা পরিচিত বাদ দিয়ে তিনশো চৌঁত্রিশটা রুগী দেখতে হবে তাই না ?” ডাক্তার মদিরা পান করেন “দ্যাখ দিনে মোট এক হাজার চারশো চল্লিশ মিনিট মাত্র সময় অথচ পাঁচ মিনিট ধরে রুগী দেখলেও….”
নিখিলবন্ধু বাধা দ্যান–“ অথচ লোকে যে বলে তোদের কোটি কোটি টাকা ইনকাম … ব্ল্যাক মানিতে শুয়ে আছিস .. দামী দামী মদ খাচ্ছিস …”
ডাক্তার হাসেন–“ আমাদের মনের সব জানালা বন্ধ রে .. ঘরের জানালা দিয়ে কি মুক্তি পাওয়া যায় ? শের আফগান সেজে সুরায় ডুবে ভুলে থাকি যৌবন বন্ধু স—ব কিছু । ঐ রক্ত করবীর সোনার খনির মজুরদের মতো । কাজ … অর্থহীন অন্তহীন কাজ আর তারপর বোতল … সাকী তো নেই তাই সুরাই সম্বল । চ্চ আরেক পাত্র ঢালি । বল এবার তোদের পাড়ার প্রোগ্রামে কি নাটক নামালি ? নোপাসারান ? না স্পার্টাকাস ? নাকি মুক্তধারা ?”
রাত গড়াতে থাকে । রাতের সঙ্গে দুই বন্ধু গড়াগড়ি করে গলাগলি করে পড়ে থাকেন ।
এই হল গিয়ে লেখা!!!!
শাবাশ ডাক্তারবাবু, বুকে বল পেলাম ।
ধন্যবাদ সুব্রতবাবু
দারুণ মজাদার লেখা।
ধন্যবাদ বড়বাবু
দুর্দান্ত লেখা।হাসিরছলে প্রফেসনের ভেতরের সব কিছু অপারেশন করে বের করে দিলেন।
ধন্যবাদ । সব্বাইকার জানা উচিত ।।
খুব খুব ভালো লেখা। আপনারা সকলেই জুয়েল লেখক।
ধন্যবাদ । সব্বাইকার জানা উচিত ।।
Like!! Great article post.Really thank you! Really Cool.
ধন্যবাদ
I really like and appreciate your blog post.
Hi there, after reading this amazing paragraph i am as well delighted to share my knowledge here with friends.
সম্মানিত
I used to be able to find good info from your blog posts.
অসাধারণ!
ধন্যবাদ দাদা