বোধহয় ডাক্তারি করার সবচেয়ে বড় আনন্দ হল মানুষের সঙ্গে অন্তরঙ্গ কথোপকথন। যে সুখ মানুষের কাছে গল্প শুনে পাই, তা আর পাই কোথায়! আজ এক ৭৫ বছর বয়সি ভদ্রলোক এসছিলেন, এসেই বললেন- ‘বাবা, আপনার ওষুধে অনেকটা কমে গেছে’!
আমি মুখের দিকে তাকিয়ে মনে করার চেষ্টা করলাম। আধো আধো মনে পড়ল। লক্ষ্য করলাম হাতে কাঁপুনিটা অল্প রয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম-বাড়ি কোথায়??
-‘এই কাছেই, কুদ্ঘাট’।
-‘ওখানেই জন্ম?? বড় হওয়া??’
-‘না, জন্ম বাংলাদেশ, ফরিদপুরের কাছে’।
-‘ও!তাহলে তো আপনি বাঙাল, আমিও। ইস্টবেঙ্গল নিশ্চয়ই??’
-‘হ্যাঁ, আগে মাঠে যেতাম। এখন হয়ে ওঠে না! আমরা এসছি ১৯৭১ এ। তখন তোমার জন্ম হয়নি’।
তারপর নিজেই মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলতে শুরু করলেন। বললেন ‘সে কী অত্যাচার। পাকিস্তানের রাজাকার সরকার হিন্দু-মুসলিম কাউকে ছাড়েনি। কিন্তু শেখ মুজিবর রুখে দাঁড়ালেন। আমরা তো নিজের চোখে দেখেছি!’
-‘আমার বাবাও এসছেন বাংলাদেশ থেকে, তবে মুক্তিযুদ্ধের আগে। কিন্তু এত কথার আগে, আপানাকে যে ভালো করে চেকআপ করা দরকার। আমি ওনাকে চেয়ারে বসিয়ে একটু দেখে নিলাম। ফিরে এসে প্রেসক্রিপশান লিখতে শুরু করলাম।’
উনি তারপর বন্দুকের আওয়াজ থেকে গোলা, বোমা বারুদ অনেক কিছু বলেলেন। কীভাবে এপার বাংলায় এসে প্রথমদিকে অনেক কষ্টে দিন কাটাতেন। আমি মন দিয়ে সব শুনলাম। কখনও কখনও মানুষকে কিছু বলতে নেই, শুধু শুনে যেতে হয়, আমি সেই চেষ্টা করলাম। কথাগুলো বলে উনি খুবই তৃপ্তি পেলেন, বাড়িতে যাওয়ার নেমন্তন্ন করলেন। যাওয়ার আগে বলে গেলেন- ‘আমার এক দাদা ছিল, কম বয়সে ওপার বাংলায় ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে।পুলিশের গুলিতে মারা যায়, তারপরই আমরা চলে আসি। একদম আপনার মত দেখতে’।
উনি কাঁপা কাঁপা হাতে আমাকে আশীর্বাদ করে, বেরিয়ে গেলেন। আমি একটু হালকা হাসি ছাড়া ওনাকে কিছুই দিতে পারলাম না। নিজের মনে মনে ভাবলাম-মানুষের জীবনের ছত্রে ছত্রে এই ছড়ানো-ছিটানো,খানিকটা অতীতে ঝলসে নেওয়া গেরস্থালির গল্প শোনার মধ্যে কত না সুগন্ধি আরাম! এই কৃতজ্ঞতার ভার যেন প্রতি মুহূর্তে আমাদের ছুঁয়ে থাকে! তাদের যেন আমরা কখনও অবহেলা না করি। জীবনজুড়ে এটুকু চাওয়া যেন আমাদের সকলের সফল হয়।
Agreed. My father came back from sheer death due to the compassionate behaviour and conversation of a doctor. That cures 50% of the disease