দুটো কথা বলার ছিল।
১. শিব্রামের একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা যেরকম মনে আছে, সেরকমই লিখছি। যেখানে বিশ্বযুদ্ধের সময় সুস্থ-সবল পুরুষদের সেনাবাহিনীতে রিক্রুট করা হচ্ছিল। স্বাভাবিকভাবেই হর্ষবর্ধনেরও সেখানে ডাক পড়ল। আর্মি অফিসার সবাইকেই তাঁদের স্কিল-সেট জেনে নিয়ে সেই অনুসারে রিক্রুট করছিলেন। হর্ষবর্ধনকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তর দেন, যে, তিনি মেজর জেনারেল পদে নিযুক্ত হতে চান। চমৎকৃত অফিসার বিস্ময় চেপে রাখতে পারলেন না। বলেই বসলেন – আপনি কি পাগল!
এবারে বিস্মিত হওয়ার পালা হর্ষবর্ধনের। তিনি জানতেন, যে মেজর জেনারেলরা মাঝেমধ্যেই – বা প্রায়শই – পাগল হন। কিন্তু পাগল হওয়াটা যে মেজর জেনারেল পদের এসেন্সিয়াল কোয়ালিফিকেশন, সেটা, এমনকি তাঁরও, জানা ছিল না। তিনি জিজ্ঞেস না করে থাকতে পারলেন না – কেন, পাগল না হলে কি মেজর জেনারেল হওয়া সম্ভবই না!!
তো তৃণমূল নিয়েও আমার একই বিস্ময়। চোর না হলে কি…
২. দ্বিতীয় কথাটা খানিকটা বঞ্চনাবোধ প্রসূত। আর পাঁচটা বিষয়ের তুলনায় স্বাস্থ্য বিষয়টি যে এদেশে, সরকারিস্তরে এবং পাব্লিক পারসেপশন, দুদিক থেকেই অবহেলিত – সে তো আর নতুন করে বলার কিছুই নেই। ইন ফ্যাক্ট, এ নিয়ে বলতে বলতে এমন গলা শুকিয়ে গেছে, যে, বলা-ই ছেড়ে দিয়েছি৷ স্বাস্থ্যব্যবস্থা বলতে পাব্লিক শুধুই ডাক্তার বোঝে – এবং সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার ডাক্তার বলতেই ফাঁকিবাজ ও অপদার্থ জীব বোঝে (বেসরকারি ডাক্তার বলতেই ঘোড়েল ঠগবাজ ও জোচ্চর হিসেবে চেনে) – কাজেই, স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভবিক্ষোভ ডাক্তারের বাপ-চোদ্দপুরুষ উদ্ধারের (ক্ষেত্রবিশেষে চড়চাপড় মারধর গু-ঢালা ইত্যাদি) বেশি এগোয় না। স্বাধীনতার পরের পঁচাত্তর বছরে, একটিও সাধারণ নির্বাচনের কথা মনে পড়ে না, যেখানে মানুষের স্বাস্থ্য-চিকিৎসার অধিকার – বা সবার সামর্থ্যের মধ্যে স্বাস্থ্য – জাতীয় কথাবার্তা মূল নির্বাচনী এজেন্ডা হিসেবে উঠে এসেছে। তো, স্বাস্থ্য যে এদেশে একটি অবহেলিত বিষয়, এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
কিন্তু সে তো আমাদের জানা – তাই বলে বাকিদের সামনেও সেকথা ফাঁস হয়ে গেলে খারাপ লাগবে না! আমার ছেলে অঙ্কে ফেল করলে আমার খারাপ লাগবে – কিন্তু পাড়ার সবার সামনে যদি সে নিয়ে কেউ খিল্লি করে, তাহলে?
তো, স্বাস্থ্য যে হেলাফেলার বিষয়, সে আমরা জানি। কিন্তু ইডি-সিবিআই-ও তাকে হেলাফেলা করবে! খারাপ লাগবে না?
শিক্ষা হলো, খাদ্য হলো – কই, স্বাস্থ্যের কথা তো কেউ বলছে না!! স্বাস্থ্যে কি কেনাকাটা কম, নাকি নিয়োগ কম (পাকা নিয়োগে টান পড়লেও, স্বাস্থ্যকর্মীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ তো রমরম করে চলছে – সেখানেও, চুক্তি নবীকরণ নিয়ে…) – বা সরকারি চাকুরির বদলিটদলি…
দক্ষ মানুষেরা, শুনেছি, ধূলিমুঠিকে সোনামুঠিতে পরিণত করতে সক্ষম। আর এই আমলে, শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে, এবম্বিধ দক্ষতার কোনও খামতি নেই। উড়ো খবর যা পাই… কিন্তু সে তো স্রেফ উড়ো খবর, তার বিশ্বাসযোগ্যতা, স্বাভাবিকভাবেই, প্রশ্নযোগ্য। তবুও, কোনও তদন্তকারী সংস্থার নেকনজর কি একটিবারের জন্যও এদিকে পড়বে না!!