রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে আয়োজিত Hack-O-Med নামক অনুষ্ঠানে বড় মাপের দুর্নীতি এবং স্বজন পোষণের আশঙ্কা করেছিল জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল।
সেই দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের পর্দা ফাঁস করার জন্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালযে রাইট টু ইনফরমেশন এক্টের আওতায় একটি আবেদন করা হয়। জয়েন্ট প্লাটফর্মের যুগ্ম আহ্বায়ক আমি, তাই আবেদন আমি করেছিলাম। দশটি প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছিল। আবেদন করা হয়েছিল ৫ই অগাস্ট ২০২৩-এ, স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়- এ আবেদন পৌঁছায় ৮ই আগস্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ল অফিসার আমাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছেন ৫ই সেপ্টেম্বর, ইমেলে তা পাওয়া গেছে ৭ই সেপ্টেম্বরে।
কি বললেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ল অফিসার?
১। আমরা জানতে চেয়েছিলাম এই অনুষ্ঠানের জন্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় কত টাকা খরচ করেছে এবং করবে।
আমরা জেনেছি মোট ১,৩৩,৫১৭ টাকা এখন অব্দি খরচ করা হয়েছে, আরো খরচ করা হবে। কত টাকা হাতে আছে তা অবশ্য জানানো হয়নি।
২। আমরা জানতে চেয়েছিলাম উপরোক্ত অর্থের উৎস কি।
আমাদের জানানো হয়েছে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়/প্রতিষ্ঠান/কলেজগুলোর স্বৈচ্ছিক দান থেকেই এই টাকা এসেছে।
৩। জানতে চাওয়া হয়েছিল এই অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক কারা।
জানানো হয়েছে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়/প্রতিষ্ঠান/কলেজগুলোই পৃষ্ঠপোষক বা স্পন্সর।
৪। জানতে চেয়েছিলাম অংশীদার সংস্থা কারা।
১২ টি প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছে। দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ৮টি। বাকিগুলি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং বা ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
৫। জানতে চাওয়া হয়েছিল অংশীদার সংস্থাগুলোকে কিভাবে বাছাই করা হলো।
জানানো হয়েছে যারাই স্বেচ্ছায় এই শিক্ষা ও সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে তাদের সবাইকেই নেওয়া হয়েছে।
৬। জানতে চাওয়া হয়েছিল Hack-O- Med সংগঠিত করার জন্য Unstopped নামক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে নেওয়া হয়েছে কিনা। নেওয়া হয়ে থাকলে কি কাজ করার জন্য?
উত্তরদাতা আমাদের জানিয়েছেন তিনি প্রশ্নটা বুঝতে পারেন নি।
৭। জানতে চাওয়া হয়েছিল এই অনুষ্ঠান করার জন্য উপযুক্ত আধিকারিকের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল কিনা। হয়ে থাকলে তার নোটিফিকেশন/অর্ডার/মেমো/ফাইল চেয়েছিলাম আমরা।
আমরা জানতে পারলাম অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। যদিও অনুমোদনের নথি আমরা পাইনি।
৮। জানতে চাওয়া হয়েছিল এই অনুষ্ঠানের জন্য কোন টেন্ডার ডাকা হয়েছিল কিনা।
আমরা জেনেছি কোন টেন্ডার ডাকা হয়নি।
৯। আমরা জানতে চেয়েছিলাম অংশীদার সংগঠনগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কর্মী বা আধিকারিকের কোন আত্মীয় যুক্ত কিনা।
জানানো হয়েছে, হ্যাঁ, যুক্ত।
১০। আমরা জানতে চেয়েছিলাম উপযুক্ত আধিকারিক দ্বারা অনুষ্ঠানের অনুমোদনের আগে, পরে বা সময়ে কোন স্বার্থের সংঘাত ছিল কিনা।
জানানো হয়েছে স্বার্থের সংঘাত ছিল না।
আমরা সমস্ত নথিপত্রের অরিজিনাল দেখতে চেয়েছিলাম। জানানো হয়েছে আমাদের আবেদন উপযুক্ত আধিকারিকের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
অর্থাৎ স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকার করে নিয়েছে যে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তারা চাঁদা তুলেছে, টেন্ডার না ডেকে অংশীদারদের বাছাই করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী/আধিকারিকের আত্মীয় এই কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত। যতই বলা হোক না কেন যে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল, কোনও স্বার্থের সংঘাত ছিল না, আমরা অপেক্ষায় থাকছি স্বজন পোষণের দোষে দুষ্ট অপসারিত ভাইস চ্যান্সেলরের বিরুদ্ধে প্রশাসন কি ব্যবস্থা নেয়, তা দেখতে চাই।