Skip to content
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

অলৌকিক কভার ড্রাইভ

IMG_20211111_232017
Dr. Parthapratim Gupta

Dr. Parthapratim Gupta

General physician. Clinical associate in a corporate hospital.
My Other Posts
  • November 12, 2021
  • 6:38 am
  • No Comments

মৌলালি আসতেই বাস থেকে নেমে পড়লো সাত্যকি। শীতের বিকেলে এমনিতেই ঝপ করে সন্ধ্যা নেমে যায়, পা চালিয়ে শিয়ালদহের দিকে এগিয়ে গেলো সে। গন্তব্য এন আর এস হাসপাতালের মেডিক্যাল ওয়ার্ড। সেখানে আজ বেশ কয়েকদিন ধরে ভর্তি আছে তাদের ক্রিকেট ক্লাবের সিনিয়র প্লেয়ার সবার প্রিয় পিন্টুদা। অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক। ডাক্তারেরা লিম্ফোমা নামক এক রক্তের ক্যান্সার সন্দেহ করে চিকিৎসা চালাচ্ছেন।বিভিন্ন কেমোথেরাপির পরেও নাকি অবস্থার বিশেষ উন্নতি হচ্ছে না। কিছুদিন ধরেই একটা ঘুষঘুষে জ্বর হচ্ছিল পিন্টুদার। স্থানীয় ডাক্তার পরামর্শ দেন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য।

ডেন্টাল কলেজের সামনের ফুটপাত ধরে প্রাচী সিনেমা হলের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে অন্যমনস্ক সাত্যকির মনে কত কথাই যে ভেসে বেড়াচ্ছিল।

আগের বছর ঠিক এই রকমই ডিসেম্বরের এক পড়ন্ত বিকেল। সাউথ ক্যালকাটা শীল্ডের ফাইনাল। তাদের ক্লাব ‘সপ্তর্ষি স্পোর্টিং’ মুখোমুখি হয়েছে বালিগঞ্জের ‘ইলেভেন বুলেটস’-এর।
ম্যাচের শেষ ওভার। ফেভারিট বুলেটস-এর হাত থেকে শীল্ড ছিনিয়ে নিতে সপ্তর্ষির দরকার ঠিক ১৫ রান। কাজটা কঠিন, কারণ অন্যদিকে লাল ডিউস বলটা হাতে নিয়ে সাদা ট্রাউজারে শেষ বারের মতো ঘষে নিচ্ছে, এই ম্যাচে এখনো পর্যন্ত সপ্তর্ষির পাঁচ উইকেট তুলে নেওয়া দুরন্ত পেস বোলার রতন দাস। অফ ফর্মে থাকা সপ্তর্ষির সেরা ব্যাটসম্যান পিন্টুদা, ক্যাপ্টেন অনিমেষের সিদ্ধান্তে সাত নম্বরে সদ্য ব্যাট করতে নেমে, এখন নন স্ট্রাইকার এণ্ডে দাঁড়িয়ে।

মৌলানা আজাদ কলেজের সেকেণ্ড ইয়ার ফিজিক্স অনার্স সাত্যকি সেন দাঁড়িয়ে স্ট্রাইকিং এণ্ডে। ডিফেন্স মজবুত বলে পিন্টুদার ওয়ান ডাউন জায়গাটা এই টুর্নামেন্টে সাত্যকির জিম্মায়। সারা ম্যাচে উইকেট বাঁচিয়ে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ বার করার দায়িত্ব এখন তারই কাঁধে।

পিন্টুদা স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ব্যাট দিয়ে পিচ ঠুকতে ঠুকতে প্রায় মাঝখানে এসে সাত্যকিকে বললে, “রতন ফুল লেংথ, ইয়র্কার করার চেষ্টা করবে। বার বার শাফল করে ওর রিদম নষ্ট করে দিবি। নয়তো ডট বল করে ম্যাচ নিয়ে বেরিয়ে যাবে।”

সদ্য ব্যাট করতে নামা অফ ফর্মের পিন্টুদার এ হেন জ্ঞান বিতরণে একটু বিরক্তিই লাগলো সাত্যকির। সে ক্রীজে ফিরে গিয়ে আম্পায়ারের কাছ থেকে লেগ স্ট্যাম্প গার্ডটা আরেকবার চেক করে নিল।

কিন্তু রতনকে চিনতে ওর অনেক বাকি ছিল। শেষ ওভারটার জন্য বোধহয় রতন চমকে দেওয়ার মতো পেস আর লেন্থ বাকি রেখে দিয়েছিল। প্রথম ডেলিভারিটা নিঁখুত ইয়র্কার। কোনমতে সামলাল সাত্যকি। দ্বিতীয়টা গুলির মতো এসে লাগলো তার প্যাডে। লেগ বিফোরের আকাশ ছোঁয়া অ্যাপিলের মধ্যে কানে ভেসে এলো পিন্টুদার চিৎকার, “রান”। ডাইভ দিয়ে কোনমতে ক্রিজে ঢুকলো সাত্যকি। ক্লোজ সিঙ্গেল।

এবার পিন্টুদার স্ট্রাইক। ৪ বলে ১৪ রান। বুলেটস বুঝে গিয়েছে শীল্ড নিয়ে তাদের ক্লাব ঘর আলো করা এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।

এতক্ষণ চেঁচিয়ে যাওয়া সপ্তর্ষির ক্যাম্প পক্ষান্তরে একদমই ম্রিয়মাণ। তৃতীয় বল রতনের। পিন্টুদার ব্যাকফুট আগেই সাফল করে অফস্ট্যাম্পে, ক্ষণিকের মনোসংযোগের অভাবে ফুলটস ফেললো রতন। লিফট করে বোলারের মাথার উপর দিয়ে সোজা মাঠের বাইরে ফেলে দিল পিন্টুদা।একটা ড্রপ খেয়ে বাউন্ডারি পেরোনোয় চার রান জুটলো সপ্তর্ষির।৩ বল ১০ রান। ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের মতো দৌড় শুরু করেছে রতন।

এবার আবার সাফল করছে পিন্টুদা। কিন্তু অফ স্ট্যাম্পের দিকে নয়, রতনকে চমকে দিয়ে ব্যাকফুট এবার লেগ স্ট্যাম্পে। ফাঁকা অফ স্ট্যাম্পে সজোরে ইয়র্ক করার চেষ্টা করলো রতন। ব্যাটটাকে চামচের মতো ব্যবহার করে কভারের উপর দিয়ে বলটা তুলে দিল পিন্টুদা। কভারের ফিল্ডার পৌঁছানোর আগেই বল পেরিয়ে গেলো বাউন্ডারি লাইন। ২ বল ৬ রান। উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে সাত্যকি বেশ বুঝতে পারছে, এই জুটিতে সে আর সিনিয়র ব্যাটসম্যান নয়। পিন্টুদা তার যাবতীয় ক্রিকেটীয় প্রতিভাকে জড়ো করে আজ জবাব দিচ্ছে তার এতদিনের অফ ফর্মকে।

বোলিং রান আপ শুরু করতে যাওয়া রতন দাস সেটা বুঝেও বুঝতে পারছে না। একটু ফিল্ড চেঞ্জ করছে ক্যাপ্টেনকে বলে।পিন্টুদার সেদিকে নজর নেই, মিডল স্ট্যাম্প গার্ড নিয়ে বেসবল প্লেয়ারের মতো ব্যাট তুলে দাঁড়িয়ে আছে।। রতন ডেলিভারি করার আগেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এলো। রতন প্রায় পিন্টুদার কোমর লক্ষ্য করে বলটা করলো সজোরে। বীমার!!

ঠকাস। নিখুঁত পুল শট। স্কোয়ার লেগ বাউন্ডারির উপর দিয়ে, যেদিক টায় বুলেটস-এর সমর্থকরা উল্লসিত হচ্ছিল একটু আগে, বল গিয়ে পড়লো সেখানে। ওভার বাউন্ডারি। ম্যাচ শেষ, ১ বল বাকি থাকতেই।

বুঝতে একটু সময় লাগলো সবার। সপ্তর্ষির একটু আগের হতাশ সমর্থকেরা যখন পিন্টুদাকে কাঁধে করে মাঠ ছাড়ছে তখন সেই আপ্তবাক্যের কথাই মনে পড়ছিল সাত্যকির। নো ম্যাচ ইজ ওভার আনটিল দ্য লাস্ট বল ইজ বোলড।

প্রাচী সিনেমা হলের উল্টোদিকের গেট দিয়ে এন আর এসে ঢুকতে গিয়ে ঠিক এই কথাটাই যে কেন এক্ষুণি মনে এলো!
আসলে জীবনটাই যে আনপ্রেডিক্টেবল। কখন কি ঘটে যায় কিচ্ছু বলা যায় না। নয়তো আগের বছরের ওই শীল্ড জেতা ফাইনালের নায়ক আজ কেন প্রায় মৃত্যুশয্যায়!

এর উত্তর কি আছে কারো কাছে? সামনে পেলে তাকে প্রশ্ন করতে বড় ইচ্ছে হলো সাত্যকির।

কিন্তু হাসপাতালের মেডিক্যাল ওয়ার্ডে আরও বড় দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছিল তার জন্য। ওয়ার্ডের বাইরে নতমুখে বসে থাকা অনিমেষদা তাকে হাত ধরে দাঁড় করিয়ে দিলে। “চ্যাম্পিয়ন চলে গিয়েছে রে।” স্তম্ভিত সাত্যকিকে জড়িয়ে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো পিন্টুদার প্রিয় বন্ধু অনিমেষদা।

পিন্টুদা চলে গিয়েছে আজ মাস খানেক হলো। ওরা সবাই সঙ্গী হয়েছিল শেষ যাত্রার। কারোর চোখের জল বাঁধ মানছিল না।এইরকম একটা লোক যে এইভাবে চলে যাবে সেটাই বিশ্বাস হচ্ছিল না কারো।

পিন্টু দা তার বিধবা মায়ের সাথে থাকতো সপ্তর্ষির কাছাকাছি একটা কলোনি অঞ্চলে। বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। মা নার্সের কাজ করতেন কোন এক ছোটখাটো নার্সিং হোমে। পিন্টুদা গ্র‍্যাজুয়েশনের পর টিউশনির সাথে সাথে চাকরির চেষ্টা চালাচ্ছিল টুকটাক। কিন্তু তার মূল নেশা ছিল সপ্তর্ষির এই ছোট্ট ক্রিকেট ক্লাব। ময়দানের অনেক ছোটখাটো ক্লাবে খেলার সুযোগ পেলেও কোনদিন সপ্তর্ষিকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবেনি। দুর্গাপুজো মিটে গিয়ে বাতাসে শীতের হাতছানি এলেই সপ্তর্ষির ছোট্ট মাঠে নেট খাটিয়ে পিন্টুদার মেন্টরশিপে শুরু হয়ে যেত এলাকার জুনিয়র থেকে সিনিয়রদের গা ঘামানো।

মা আর ছেলের সেই ছোট সংসারে অভাব থাকলেও কোন অভিযোগ ছিল না। আর ঠিক সেই জন্যেই শীত এই বছর চলে এলেও ছোট মাঠের সেই ক্রিকেট পিচে কেউ আর নেট লাগালো না। গতবারের চ্যাম্পিয়ন সপ্তর্ষিকে অনেক অনুরোধ করেও এবার সাউথ ক্যালকাটা শীল্ডে যোগদান করানো গেল না। একটা চাপা হাহাকার ঘুরে বেড়াতে লাগলো ক্লাবের সদস্যদের মনে।

সাত্যকির কলেজেও এখন বছর শেষের ছুটি। ভারাক্রান্ত মনে যাওয়া আসার পথে ক্লাবে উঁকি দিয়ে যায়। গেটের পাশের বড় ঝাঁকড়া জামরুল গাছটা খালি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
এইরকমই একদিন দেখা হয়ে গেল অনিমেষদার সাথে। গতবারের ক্যাপ্টেন, আর পিন্টুদার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সাত্যকিকে ডেকে বললে, তোর সাথে কথা আছে। ভিতরে চল বলছি।

ক্লাবের মাঠের পাশে একটা ছোট্ট জলা জমি আছে। বল যাতে জলে গিয়ে না পড়তে পারে তার জন্য কাঠের বেড়া দিয়েছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। তার গায়ে হেলান দিয়ে বসে থাকে একটা রোলার, দরকারে ক্রিকেট পিচ রোল করার জন্য। আর অন্য সময় তা অবসরে সদস্যদের আড্ডা দেওয়ার জায়গা। সেখানেই বসলো দুজনে।

“কাল পিন্টুর বাড়িতে গিয়েছিলাম রে। ক্লাবের তরফ থেকে কিছু টাকাপয়সা দেওয়ার ছিল। ভেবেছিলাম একমাত্র ছেলে চলে যাওয়ায় আমাদের কাছে খুব কান্নাকাটি করবেন। একেবারেই তো একা হয়ে গেলেন এবার।” একটু থামলো অনিমেষদা। সাত্যকির প্রশ্নবোধক মুখের তাকিয়ে বললে, “কিন্তু দেখলাম একেবারেই তা নয়।বেশ হাসিখুশি মনে আমাদের চা বিস্কুট দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। বললেন,পিন্টু তো আমাকে ছেড়ে যায়নি বাবারা।
মায়ের টান ছেড়ে কি আর কেউ যেতে পারে! ও রোজ রাতে আমার সাথে কথা বলে যায়। আমাদের অবাক হওয়ার ঘোর কাটতে না কাটতেই বললেন, আমি রোজ প্ল্যানচেটে বসি রাত ১২ টায়। ওই সময়টা নির্জন থাকে চারিধার। ওর কথা শুনতে আমার সুবিধা হয়।”

“মানে, পিন্টুদার আত্মা নেমে আসছে বলতে চাও? যত্তসব আজগুবি ব্যাপার। এইসব বুজরুকিতে বিশ্বাস করো তুমি!” সাত্যকি তীব্র বিরক্তি প্রকাশ করে।

অনিমেষদা সেটাকে পাত্তা না দিয়ে অন্যমনস্ক ভাবে বলে, “যাবি না কি পিন্টুর আত্মার সাথে মোলাকাত করতে? তোর শীল্ড ফাইনালের উইনিং পার্টনার। কি ব্যাটিংটাই না করেছিল। রতন দাসের সাথে আমাদের মুখেও ঝামা ঘষে দিয়ে গিয়েছিল।”

“তুমি তো জান অনিমেষদা, আমি বিজ্ঞানের ছাত্র। এইসব ঢপবাজিতে আমার কোন বিশ্বাস নেই।”

“তোকে বিশ্বাস করতে বলছিও না আমি। শুধু আমার সাথে একবারটি চল। পিন্টুর মায়ের মুখ চেয়ে। পিন্টু নাকি মাসিমাকে জানিয়েছে তোর সাথে দেখা করতে চায়। তোকে ভীষণ ভালোবাসতো কিনা!”

ভূত অথবা ভগবানে ঘোর অবিশ্বাসী সাত্যকির কি রকম একটা অস্বস্তি হল কথাটা শুনে। অনিমেষদার করুণ মুখের দিকে চেয়ে কিছু বলতে পারলো না সে।

“ঠিক আছে। কবে যেতে চাও?”

“আজ রাতেই চল তাহলে। আমি মাসিমাকে বলে রাখছি। তিনি খুব খুশি হবেন, তুই আসছিস শুনলে”

“ঠিক আছে। আমি ডিনার করে পালপাড়ার মোড়ে চলে আসব। সাড়ে ১১ টা নাগাদ।”

“ঠিক আছে। আমি অপেক্ষা করবো।”

শীতের রাত এমনিতেই দীর্ঘ। এবার জমিয়ে ঠান্ডাও পড়েছে কলকাতা শহরে। লক্ষ্মীদার দোকান থেকে একটা গোল্ড ফ্লেক সিগারেট ধরালো সাত্যকি। সোয়েটারের উপর চাদরটাও জড়িয়ে নিল বেশ করে। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় মাকে বলে এসেছে বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছে শেষ পাঁচ বছরের অনার্স পেপারের কোয়েশ্চন সলভ করার জন্য। ফিরতে দেরি হবে। সদর দরজার চাবি নিয়েই বেরিয়েছে সে। যাতে মাঝরাতে বাড়ি ফিরে উনাদের ঘুম ভাঙাতে না হয়।

অনিমেষদাও একটা বাস স্টপের শেডের তলায় অপেক্ষা করছিল পালপাড়ার মোড়ে। অনিমেষদাকে দেখে সিগারেট নিভিয়ে ফেললো সাত্যকি। তারপর দুজনেই একসাথে এগিয়ে চললো পিন্টুদার বাড়ির দিকে।

কলোনি অঞ্চল সাধারণত মানুষের ভীড়ে ঠাসাঠাসি হয়ে থাকে সর্বক্ষণ। কিন্তু আজ বোধহয় শীতের দাপটে সবাই তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে গেছে। জানালা দরজা বন্ধ। রাস্তায় কুকুরদের কেও ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে না বিশেষ। পথের পাশে পর পর দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্টগুলির হলুদ রঙের টিমটিমে আলো, রাস্তার অন্ধকারের গভীরতাকে যেন অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে।
পিন্টুদার বাড়িতে এর আগে আসেনি কখনো সাত্যকি। যদিও জানতো কোথায় থাকে পিন্টুদারা।

লোহার গেট খুলে,ছোট্ট একফালি ঘাসজমি পেরিয়ে একচিলতে বাড়ি। গেটের গায়ে একটা কামিনী ফুলের গাছ। তার তীব্র গন্ধে সেখানের বাতাস মাতোয়ারা।

অনিমেষদা চাপাস্বরে ডাকতেই দরজা খুলে গেল। হাতে জ্বলন্ত মোমবাতি নিয়ে সাদা শাড়ি পরে মাসিমা বেড়িয়ে এলেন। বাড়ির ভিতরে কোন আলো জ্বলছে না। শুধু মেঝেতে কয়েকটি মাটির প্রদীপ জ্বালানো রয়েছে। “বেশি আলো থাকলে ওরা আসতে চায় না।তাই প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখি।”

সাত্যকিরা মাসিমাকে ফলো করে একটা ছোট ঘরে এসে পৌঁছালো। এটা যে পিন্টুদার ঘর তা বুঝতে সময় লাগলো না সাত্যকির। মোমবাতির মৃদু আলোতেও দেওয়ালে লাগানো ব্যাট হাতে গাভাসকারের ছবিটা বোঝা গেল বেশ।

“তোমরা এই টেবিলের পাশে বসো। আমি আলো আরও কমিয়ে দিচ্ছি। এখানে বসে তোমরা খালি পিন্টুর কথাই ভাববে। তার সাথে তোমাদের বন্ধুত্বের কথা বা অন্য কোন বিশেষ অভিজ্ঞতার কথা।” একটু থেমে তারপর বললেন। “আমি আমার ছেলের মিডিয়াম।আমার হাতের কলমের মাধ্যমেই সে তার কথা বলে যায়।এই নীল রঙের ডায়েরিতেই লেখা হয়ে থাকে তা।”

সাত্যকির হাসি পেলো এবার। তবুও অনিমেষ দার কথা ভেবে সে কিছু বললো না।

একটা তেপায়া টেবিলের পাশে বসে পড়লো তিনজনে।গাভাসকারের সেই ছবির তলায় একটা ছোট মোমবাতির আলো ঘরটাকে যেন আরও অন্ধকারে ভরে দিয়েছে আচমকা।
সাত্যকি এটা সেটা ভাবতে ভাবতে অবচেতনে কখন যেন পিন্টুদার একবছর আগেকার সেই ম্যাচ জেতানো ইনিংসটার কথা ভাবতে শুরু করেছে।

মনের মাঝে রিওয়াইন্ড হয়ে চলেছে সিনেমার রিলের মতো।
আচমকাই একটা দমকা হাওয়া ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়ল অন্যমনস্ক সাত্যকিকে চমকে দিয়ে। জানালা বন্ধ থাকলে হাওয়া ঢুকলো কি ভাবে?

“পিন্টু,এলি?” মাসিমার গলার স্বরটাও কেমন বদলে গেছে হঠাৎ। খসখস করে সেই নীল রঙের ডায়েরি তে কি একটা টানা লিখে চলেছেন মহিলা। আর একটা অদ্ভুত ফ্যাসফ্যাসে গলায় স্বগোতক্তি করে চলেছেন, “জানি,আজ তোর খুব আনন্দ।সাত্যকি এসেছে, তাই না! পাশে দ্যাখ, অনিমেষও বসে আছে।তোদের ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন। ”

“হ্যাঁ,আমি জানি তুই ভালো আছিস।” “তোর বাবার সাথে দেখা হয়েছে। তিনিও ভালো আছেন।”

“এবার কেন তোমরা শীল্ড খেলছো না! একজনের জন্য কোন কিছু আটকায় না। দ্য শো মাস্ট গো অন।”

এইবার প্রথম একটু চমকালো সাত্যকি। কারণ এই কথাটা প্রায়ই বলত পিন্টু দা।

আবার একটা দমকা হাওয়া। কোণের একমাত্র মোমবাতিটি নিভে গিয়ে এখন ঘরে নিশ্ছিদ্র অন্ধকার বিরাজমান। ঠক করে একটা আওয়াজ। সাত্যকি বুঝতে পারলো মাসিমার কলমটি হাতছাড়া হয়ে টেবিলে পড়লো। অনুভব করলো মাসিমা খুব সম্ভবত জ্ঞান হারিয়েছেন।

আচমকাই তার নজর গেল সামনের দেওয়ালে।একটা ব্যাটসম্যানের আদল যেন চিত্রায়িত হচ্ছে সেখানে। তার চারদিকে হাল্কা নীল রঙের আলো। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো সাত্যকি।

তার কানের পাশে চেনা গলায় ফিসফিস করে একজন বলে চলেছে, “শাফল,শাফল। ব্যাক অ্যান্ড অ্যাক্রস মুভমেন্ট অফ দ্য ব্যাকফুট। একবার অফে আর তার পরের বার লেগে। বোলারকে স্লগ ওভারে কনফিউশানে ফেলে দাও। এণ্ড অফ দ্য ডে, ক্রিকেট ইজ এ মাইন্ড গেম।”

সাত্যকির গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। এ গলা তার অনেক দিনের চেনা। আগের শীল্ড ফাইনালে লাস্ট ওভার ব্যাটিংয়ের সময়, পিন্টুদার তার কানের কাছে মন্ত্রের মতো ক্রমাগত বলে যাওয়া।
আচমকাই টিউব লাইটের আলো জ্বলে উঠলো ঘরে। কাঁপতে কাঁপতে চেয়ার থেকে উঠে কোনমতে সুইচবোর্ড খুঁজে পেয়েছে অনিমেষদা। ঘরেতে আলোর প্লাবনে দেখা গেল মাসিমা টেবিলে মাথা রেখে অজ্ঞান হয়ে রয়েছেন। একটু জল দেওয়ার পরেই অবশ্য জ্ঞান ফিরলো উনার।

দেওয়ালের নীল আলোয় যেখানে ব্যাটসম্যানের অবয়ব ফুটে উঠেছিল একটু আগে, সেখানে লক্ষ্য করা গেল দেওয়ালে সাঁটানো গাভাসকারের লম্বা পোস্টারটিকে।

হাসিমুখে কভার ড্রাইভ মারছেন সানি।

PrevPreviousজিয়াভরলি (৫ম ও শেষ পর্ব)
Nextরোজের ভাইফোঁটাNext
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত পোস্ট

শিষ্য তথা ছাত্রদের শিক্ষারম্ভ ও শিক্ষাদান – চরক- ও সুশ্রুত-সংহিতা (২য় ভাগ)

June 12, 2025 No Comments

 (সূত্রের জন্য পূর্ববর্তী অংশের লিংক – https://thedoctorsdialogue.com/indoctrination-and-teaching-of-medical-students-in-charaka-and-susutra-samhita/) শিক্ষালাভের পরে চিকিৎসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ আগের অধ্যায় শেষ করেছিলাম এই বলে – “উপনয়ন এবং শিক্ষালাভ করার পরে ছাত্ররা/শিষ্যরা

এই বঞ্চনার দিন পার হলেই পাবে জনসমুদ্রের ঠিকানা

June 12, 2025 No Comments

আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের পাশবিক হত্যার পর কেটে গেল দশটি মাস। দুর্নীতি ষড়যন্ত্র পূর্বপরিকল্পিত ধর্ষণ ও হত্যা- কোথাও সন্দেহ বা অস্পষ্টতার জায়গা নেই।

ঊর্মিমুখর: ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

June 12, 2025 No Comments

আচার্য শীলভদ্র ত্বরাহীন শান্তকণ্ঠে কহিতেছিলেন –“ইহা সত্য যে সমগ্র উত্তরাপথে পাশুপত ধর্মই আদি শৈবধর্ম। এই সনাতন পাশুপত ধর্মের ধ্যান ও কল্পনার মধ্যেই হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠ বিকাশ

অভয়া স্মরণে

June 11, 2025 No Comments

তবু লড়ে যায় ওরা! তবু লড়ে যায় ওরা! দশ মাস হল। প্রায় তিনশত দিন। বিচারের আশা,অতি ক্ষীণ তবু লড়ে যায় ওরা! বল এমন করে কি

কাউকে অবসাদগ্রস্ত মনে হলে তাঁর পাশে থাকুন – তাঁর একাকিত্ব ও হতাশা দূর করুন – কিন্তু অবশ্যই তাঁকে ডাক্তার দেখাতে বলুন

June 11, 2025 No Comments

কোনও আত্মহত্যার খবর এলেই ফেসবুকে একধরনের বিকৃত সহমর্মিতাবোধের বন্যা বয়ে যায়। বিশেষত, আত্মহত্যার যদি কোনও রগরগে কারণ (পরকিয়া প্রেম ইত্যাদি) খুঁজে না পাওয়া যায়, তাহলে

সাম্প্রতিক পোস্ট

শিষ্য তথা ছাত্রদের শিক্ষারম্ভ ও শিক্ষাদান – চরক- ও সুশ্রুত-সংহিতা (২য় ভাগ)

Dr. Jayanta Bhattacharya June 12, 2025

এই বঞ্চনার দিন পার হলেই পাবে জনসমুদ্রের ঠিকানা

Gopa Mukherjee June 12, 2025

ঊর্মিমুখর: ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

Dr. Sukanya Bandopadhyay June 12, 2025

অভয়া স্মরণে

Dr. Asfakulla Naiya June 11, 2025

কাউকে অবসাদগ্রস্ত মনে হলে তাঁর পাশে থাকুন – তাঁর একাকিত্ব ও হতাশা দূর করুন – কিন্তু অবশ্যই তাঁকে ডাক্তার দেখাতে বলুন

Dr. Bishan Basu June 11, 2025

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

559560
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

[wppb-register]