হাইপক্সিয়া কাকে বলে?
আমাদের রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়াকে হাইপক্সিয়া বলে। হাসপাতালে বা ডাক্তারের চেম্বারে পালস অক্সিমিটার নামে একটি যন্ত্র আঙুলে লাগিয়ে খুব সহজেই রক্তের অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপা যায়। সাধারণ মানুষের রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৭% এর বেশি থাকে। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০% এর নীচে নামলে আমাদের মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব হয় এবং মস্তিষ্ক বিকল হতে শুরু করে। রোগীর নানারকম মানসিক সমস্যা এবং দুর্বলতা দেখা যায়। অক্সিজেন স্যাচুরেশন আরও কমে ৮০% এর নীচে নামলে হৃদপিণ্ড, বৃক্ক, যকৃৎ ইত্যাদি প্রধান অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি বিকল হতে শুরু করে।
তবে অক্সিজেন স্যাচুরেশন এতটা কমার আগেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। রোগীর লক্ষ্মণ দেখে আত্মীয় স্বজনেরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ওষুধপত্র ও অক্সিজেনের মাধ্যমে হাইপক্সিয়া ঠিক করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ঠিক রাখার জন্য ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হয়।
সাইলেন্ট হাইপক্সিয়া কাকে বলে? কোভিড-১৯ এর সাথে কি সম্পর্ক?
বেশ কিছু কোভিড রোগীর ক্ষেত্রে অক্সিজেন স্যাচুরেশন অনেক কমা সত্ত্বেও রোগীদের তেমন শ্বাসকষ্ট দেখা যায় না। যার ফলে রোগী ও তাঁর বাড়ির লোকেরা বুঝতে পারেন না, রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। ফলে চিকিৎসকের কাছে পৌঁছাতে অনেক দেরী হয়ে যায়। অনেকক্ষেত্রেই তার আগেই দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অপরিবর্তনীয় ক্ষতি হয়ে যায়।
তবে শুধু কোভিড-১৯ নয়, অনেক জন্মগত হৃদপিণ্ডের অসুখে, ধূমপানের ফলে উদ্ভূত ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজে (COPD), এমনকি হঠাৎ করে অত্যধিক উচ্চতায় উঠলেও সাইলেন্ট হাইপক্সিয়া দেখা যেতে পারে।
শ্বাস কষ্ট কেন হয়?
সাধারণত তিনটি কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
১. কোনো কিছু আমাদের শ্বাসনালীকে আটকে দিলে। কোভিড-১৯ নিউমোনিয়ায় এরকম হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
২. রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়লে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, জোরে দৌড়লে বা ভারি কাজ করলে শরীরে মেটাবলিজম বেড়ে গিয়ে CO2 অধিক মাত্রায় তৈরি হয়। এই CO2 শরীর থেকে বের করার জন্য আমাদের ঘন ঘন শ্বাস নিতে হয়।
৩. আমাদের ফুসফুসের স্থিতিস্থাপকতা কোনো কারণে কমে গেলে। যেমন যেকোনো নিউমোনিয়ায় ফুসফুসের অ্যালভিওলি গুলি পুঁজ ও তরল দ্বারা পূর্ণ হলে ফুসফুসের স্থিতিস্থাপকতা কমে। যার ফলে বুক ও পেটের মাংসপেশিকে অনেক বেশি কাজ করতে হয় শ্বাস প্রশ্বাস চালানোর জন্য।
কিছু কোভিড-১৯ রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমা সত্ত্বেও শ্বাসকষ্ট কেন হয় না?
এর নিশ্চিত কারণ এখনও অজানা। তবে নানা মুনি নানা রকম মত দিয়েছেন। প্রতিটি মতামতই বেশ জটিল।
ফুসফুসের যে অংশে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের বিনিময় হয় সে জায়গাটাকে বলে অ্যালভিওলি। এই অ্যালভিওলি গুলি বাতাস ভর্তি ক্ষুদ্র থলির মতো। অ্যালভিওলি জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হলে এর ভেতরের বাতাস পূর্ণ স্থান পুঁজ ও তরল দ্বারা পূর্ণ হয়ে যায়। যার ফলে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের বিনিময় বাধা পায়। ফলে রক্তে অক্সিজেন কমতে থাকে এবং শ্বাস কষ্ট শুরু হয়।
অনেকে বলছেন করোনা ভাইরাস প্রথমে ফুসফুসের অ্যালভিওলির যে কোষগুলি থেকে সারফ্যাকট্যান্ট তৈরি হয় সেগুলিকে ধ্বংস করে। এই সারফ্যাকট্যান্ট অ্যালভিওলি’র সার্ফেস টেনশন কমায়। সারফ্যাকট্যান্টের অভাবে রক্তের অক্সিজিনেশন বাধা প্রাপ্ত হয়। যেহেতু তখনও অ্যালভিওলি গুলি পুঁজ ও তরলে পূর্ণ হয়ে পুরো ফুসফুস শক্ত হয়ে ওঠেনি, তাই শ্বাস কষ্ট ততটা অনুভূত হয়না।
আবার অনেকে বলেছেন ফুসফুসের ক্ষুদ্র রক্ত জালিকাগুলি ভাইরাস দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফুসফুসের কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সেখানে হাইপক্সিয়া হলে সেখানকার এই ক্ষুদ্র রক্ত জালিকাগুলি সংকুচিত হয়ে স্থানীয়ভাবে রক্তচলাচল কমায়। যার ফলে ফুসফুসের ভালো জায়গায় রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। কিন্তু ভাইরাস দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত রক্তজালিকা গুলির এই সংকুচিত হওয়ার ক্ষমতা চলে যায়। ফলে হঠাৎ করে অক্সিজেন স্যাচুরেশন তেমন শ্বাসকষ্ট ছাড়াই অনেক কমে যায়।
এইসব জটিল তত্ত্ব গুলিকে অভ্রান্ত বলে মেনে নেওয়ার কারণ নেই। সাইলেন্ট হাইপক্সিয়ার সঠিক কারণ এখনও অজানা।
কিভাবে সাইলেন্ট হাইপক্সিয়ার প্রতিরোধ করা যায়?
চিকিৎসকেরা এক্ষেত্রে বাড়িতেই অপেক্ষাকৃত সুস্থ রোগীদের জন্য পালস অক্সিমিটারের সাহায্যে অক্সিজেন স্যাচুরেশন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে বলছেন। যাতে অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমতে আরম্ভ করলেই তাঁরা চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে পারেন।
যেহেতু আমাদের রাজ্যে সব কোভিড রোগীকেই ভর্তি রাখা হচ্ছে, তাই এখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্বারা রোগীদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন নিয়মিত পর্যবেক্ষন করা সম্ভব। এই সামান্য দামের ছোটো যন্ত্রটি অনেক কোভিড-১৯ রোগীদের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে।
যদি দাম জানাতেন সাধ্যের মধ্যে থাকলে কিনতাম
এটির দাম 900-1000 oxymeter অনলাইনে পেয়ে যাবেন।
এখন রাতারাতি অনলাইনে কিনবেই বা কি করে?
Flipkart এই পাবেন। এখন পাবেন।