মূল রচনাঃ ডা চন্দ্রকণা সিং (নিউক্যাসল) এবং ডা ময়ুখ ভট্টাচার্য (লন্ডন)
অনুলিখনঃ ডাঃ চিন্ময় নাথ
ইংল্যান্ডে করোনা (কোভিড-১৯) ঢুকে পড়ে ছিল অনেক আগেই। প্রাথমিক জড়তা, বিতর্ক ইত্যাদি কাটিয়ে সরকার যতদিনে সক্রিয় হয়েছে, ততদিনে রোগটা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। লন্ডন হয়ে উঠেছে করোনার কেন্দ্র। ২৩শে মার্চ থেকে লকডাউন কার্যকরী হয়েছে। প্রিন্স চার্লস, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, স্বাস্থ্যসচিব ম্যাট হ্যানকক ইতিমধ্যেই করোনায় আক্রান্ত। ভারতীয় বংশোদ্ভূত চ্যান্সেলর ঋষি সুনক করোনা রোগীর সংস্পর্শে এসে আইসোলেশনে। প্রধানমন্ত্রী-র উপসর্গ কম হওয়ায় তিনি আইসোলেশনে থেকেই কাজ করছেন।
জরুরী নয় এরকম সব দোকানপাট বন্ধ। রাস্তায় গাড়ি আট শতাংশেরও কম। জরুরী পরিষেবা বাদে সবাইকে বাড়ি থেকে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। টিউব রেল পুরো বন্ধ হয় নি, তবে সংখ্যায় খুব কম।
সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিক্ষার্থীরা বাড়িতে থেকে অনলাইনে ক্লাস করছে। থিয়েটার, পাব, জিম, পার্ক- সব বন্ধ। অনলাইন শপিং কোম্পানিগুলো বাড়ির দরজায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দিচ্ছে। একটি বাড়ি থেকে মাত্র একজনকে নিকটবর্তী জরুরী দোকান বা সুপারমার্কেটে যেতে দেওয়া হচ্ছে। সুপার মার্কেটে লম্বা লাইন। কারণ, ২ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হচ্ছে। জীবনযাত্রা হঠাৎ করে সম্পূর্ণ বদলে গেছে। সত্যি বলতে গেলে আমরা এখন বাঁচার জন্য লড়ছি। এখন বুঝতে পারছি, স্বাধীনতার মানে আসলে কি?
ন্যাশন্যাল হেল্থ সার্ভিসে, হাসপাতালে, ক্লিনিকগুলোতে কাজের ধরণ হঠাৎ ভীষণ বদলে গেছে। সমস্ত রুটিন কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। অন্য সমস্ত ক্লিনিক বাতিল করে ফিভার ক্লিনিক খোলা হয়েছে। হাসপাতালে অন্যান্য রোগের ওয়ার্ডগুলোকে কোভিড-১৯ ওয়ার্ডে পরিণত করা হয়েছে। অপারেশন থিয়েটারগুলোকে পাল্টে আই সি ইউ করা হয়েছে। সমস্ত কনভেনশন সেন্টারে এবং কিছু কিছু ছোট এয়ারপোর্টে অস্থায়ী হাসপাতাল বানানো হয়েছে। কয়েকটা ছোট এয়ারপোর্টে অস্থায়ী মর্গ তৈরী হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের স্পেশালিষ্ট চিকিৎসক ও নার্সদের করোনা রোগীর চিকিৎসায় নিয়োগ করা হচ্ছে। সদ্য অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের পুনর্নিয়োগ করা হচ্ছে।
জরুরী প্রয়োজন ব্যতিরেকে করোনা ছাড়া অন্য রোগী দেখা বারণ হয়ে গেছে। অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসা টেলিফোন, ভিডিওকল, টেলিমেডিসিনের মাধ্যমেই করতে হচ্ছে।
মেডিক্যাল স্কুল ও রয়্যাল কলেজগুলোতে সমস্ত পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। সমস্ত মেডিক্যাল কোর্স ও কনফারেন্স বাতিল হয়ে গেছে।
হাসপাতালের এমার্জেন্সি ও আইসিইউ- তে প্রবল চাপ। ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা যাঁরা করোনা রোগীর চিকিৎসা করছেন তাঁরা অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকে মারাও গেছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য মাস্ক ও সুরক্ষা পোষাক ( পি পি ই)-এর অভাব সর্বত্র। এই নিয়ে সরব হয়েছে ব্রিটিশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন-ও। সরকার বলেছে খুব তাড়াতাড়ি প্রচুর মাস্ক, পিপিই, কোভিড ১৯ পরীক্ষা-র কিটের ব্যবস্থা হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের সহজে ও দ্রুত কোভিড ১৯ টেস্ট-এর ব্যবস্থা হবে।
সীমিত সাধ্যের মধ্যেও আমরা স্বাস্থ্যকর্মীরা লড়ে চলেছি।